Wednesday, November 29, 2023

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরভুয়া বাদী সাজিয়ে মামলায় হয়রানি!

ভুয়া বাদী সাজিয়ে মামলায় হয়রানি!

রাজধানীর লালমাটিয়ায় এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সোহেল আকনের কাছ থেকে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অ্যাডমিন আরিফুল হাসান মীর সাগর। এ সইয়ের দিন সোহেল গোলগলা গেঞ্জি পরা ছিলেন। এ অবস্থায় তার একটি ছবি তোলা হয়। পরে গেঞ্জি পরা ছবিতে ফটোশপের মাধ্যমে শার্ট, টাই ও ব্লেজার বসানো হয়। ওই ছবি ব্যবহার হয় স্বাক্ষর করা সাদা স্ট্যাম্পে। স্ট্যাম্প তিনটি অঙ্গীকারনামা হিসেবে তৈরি করা হয়। এতে লেখা ছিল- সোহেল আকনকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মিরপুর শাখার পরিচালক জেড এম রানা। পরে তাকে বিদেশে পাঠানো হয়নি। টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। ওই অঙ্গীকারনামা উপস্থাপন করে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা নগর থানায় জেড এম রানার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলা করা হয়। মামলার বাদী হিসেবে নাম রয়েছে মিস্ত্রি সোহেলের। যদিও এসবের কিছুই জানতেন না তিনি।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত অর্থে এই মামলার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, লালমাটিয়া শাখার হেড অব অ্যাডমিন আরিফুল হাসান মীর সাগর ও স্কুলের এমডি আনিসুর রহমান সোহাগ। মিরপুর শাখার পরিচালক জেড এম রানার সঙ্গে তাদের বিরোধ ছিল। যদিও স্কুলের এমডি ও অ্যাডমিন সমকালের কাছে দাবি করেছেন, তারা এ মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এর সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই। কিন্তু বিবাদী রানা সমকালকে বলেছেন, এ মামলার নেপথ্যে স্কুলের এমডি ও অ্যাডমিন।

এ ছাড়া আরও দুটি মামলা হয়েছে রানার বিরুদ্ধে। অন্য এক মামলায় বাদী সাজানো হয়েছে জনৈক সাইফুল ইসলামকে। হাতিরঝিল থানায় রানার বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলায় সাইফুলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও ঘটনার দিন সাইফুল ইসলাম কারাগারে ছিলেন। বাদীর বর্তমান ঠিকানাও ভুয়া। একইভাবে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় বাদীর ফোন নম্বর ও বর্তমান ঠিকানাও সঠিক নয়।

তদন্ত সূত্র মতে, মূলত রানাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মামলাগুলো করা হয়। এক মামলায় ইতোমধ্যে এক মাস জেলও খেটেছেন তিনি। এখন জামিনে আছেন। আর সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া আরিফুল হাসান মীর সাগর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি থানার ওসির আপন ভাই।

বিবাদী জেড এম রানা সমকালকে জানান, এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মিরপুর শাখা নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। ওই শাখাটি তিনি পরিচালনা করেন। বিরোধের জেরে তারা ভুয়া বাদী সাজিয়ে শেরেবাংলা নগর ও হাতিরঝিল থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। আরিফুল হাসান মীর সাগর ও আনিসুর রহমান সোহাগের ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। বিদেশে কখনও তিনি লোক পাঠাননি এবং এ বিষয়ে কারও কাছ থেকে টাকাও নেননি। এ ছাড়া বাদীদের তিনি চেনেন না।

সোহেল আকনও সমকালকে বলেন, ‘জেড এম রানাকে আমি চিনতাম না। তার সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি কখনও। আমি কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যাব? শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ আমাকে একদিন ফোন দিয়ে জানায় আমি নাকি একটি মামলার বাদী। আমি মামলা করিনি বলে জানিয়ে দিই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমাকে বাদী সাজানো হয়েছে সাদা স্ট্যাম্পকে একটি অঙ্গীকারনামা বানিয়ে। আরিফুল হাসান মীর সাগর স্কুলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং রানাকেও ফাঁসিয়েছেন।’

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুনশী বলেন, বাদী এসে থানায় মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা রুজু করি। যে ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেটি ভুয়া হলে বাদীকে দায়ভার নিতে হবে। জানতে চাইলে আরিফুল হাসান মীর সাগর দাবি করেন, সোহেল আকনকে তিনি চেনেন না। তবে শেরেবাংলা নগর থানায় রানার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে বলে শুনেছেন। চাকরির নামে সোহেলের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারও প্ররোচনায় তিনি মিথ্যা কথা বলছেন কিনা জানি না। আসামিপক্ষের সঙ্গে বাদী সমঝোতা করেছেন কিনা, তাও জানি না।’

হাতিরঝিল থানার মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী সাইফুলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের কর্ণকাঠি গ্রামে। পর্তুগালে পাঠানোর কথা বলে বিবাদী রানা ২০১৯ সালের ১ জুন বাদীর কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়েছেন; কিন্তু তিনি বিদেশে পাঠাতে পারেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। গত বছরের ৩০ জুন সাইফুল টাকা ফেরত চাইলে রানা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

৩০ জুন বাদী একটি মাদক মামলায় বরিশালের কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাহলে কীভাবে তাকে বিবাদী হুমকি দিলেন? এ ব্যাপারে জানতে সাইফুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। মামলার কথা ওঠাতেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান সোহাগ সমকালকে বলেন, স্কুলের আর্থিক ঝামেলার কারণে রানার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। তবে রানার বিরুদ্ধে অন্য বিষয়ে কোনো থানায় মামলা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না।

রানার স্ত্রী আনজুমান আরা গত ৭ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন, তার স্বামী মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন। তিনি এর প্রতিকার চান। আবেদনপত্রে তিনি বলেন, তার স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বাদী ভিন্ন হলেও বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, আনিসুর রহমান সোহাগ ও তার লোকজনের যোগসাজশে করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগ পাওয়ার পর ডিএমপি সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাগুলো সংশ্নিষ্ট থানা থেকে স্থানান্তর করে তদন্তভার দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগকে।

মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহাদাত হোসেন সোমা বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে এখন কিছু জানানো যাবে না।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

2 × three =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য