আসসালামু আলাইকুম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
অতি সম্প্রতি আমরা www.muslimummah.news অনলাইন পত্রিকা প্রকাশে সচেষ্ট হয়েছি, এই স্বার্থে যে দৈনন্দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখা একান্ত জরুরী তা সাধারণ পত্র পত্রিকা গুলো পরিবেশন করে না বা করলেও অন্য অনেক বার্তার ছত্রছায়ায় হারিয়ে যায়। মাঝে মাঝে অনেক অপ্রয়োজনীয় সংবাদে পত্রিকাগুলো ঠাসা থাকে যা কোন অর্থবহ ফললাভ আমাদের জীবনে হয় না। অথচ সময় দ্রুত আমাদের জীবনকে পরিসমাপ্তি দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহীতার বিষয়ে আমরা গাফেল থেকে যাচ্ছি। আব্দুল্লাহ ইবনে হিসান আবু মদীনাহ বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাহাবীগণের মধ্যে দু ব্যক্তি ছিল, তারা পরস্পর মিলে একজন অন্যজনকে সুরা আসর পাঠ করে না শুনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না। (তাবরানী, মু’জামুল আওসাত ৫১২০, মু’জামুল কাবীর ২০/৭০,বাইহাকী, সু’আবুল ঈমান ৯০৫৭, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/২৩৩, ৩০৭) সময়ই এখানে প্রধান উৎপাদক। এই সুবাদে আপনার নিকট পৌছার সুযোগ নিচ্ছি। বলা যায়, এ এক খোলা চিঠি।
বয়স ও শিক্ষায় আপনার ছোট হলেও একটা বিষয়ে আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমরা যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই দাওয়াতের কাজ চালিয়ে নেওয়া উচিত। নিজের উপলব্ধিগুলো অন্যের সাথে মিলিয়ে নেওয়া, আর যেখানে আপনি রয়েছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে, অতএব বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে নিজের চাওয়াগুলোতো চাইতেই পারি আপনার কাছে। আশা করি বড় হয়ে ছোটর অপরাধ নিবেন না।
আপনার প্রগাড় প্রজ্ঞার বিষয়ে আমরা ওয়াকেবহাল আছি। আজকে যে বিষয়ে আপনার আন্তরিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হোল, “বর্তমান রাষ্ট্রীয় আইনের ধারায় কি অপরাধ সংগঠন কমেছে”? একটু ভাবার কি কোন অবকাশ আছে আপনার?
জানা কথা, পৃথিবীতে জনগণের কল্যাণে দুই প্রকারের আইনের সাক্ষরতা বহন করে। এক, আল্লাহ্র আইন আর দুই মানুষ প্রবর্তিত আইন। আল্লাহ্র আইনকে শরীয়া আইন আর মানুষ প্রবর্তিত আইনকে আমরা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ বহুদা নামে ডাকি।
এবার পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিন। অপরাধের সংজ্ঞায় আমি বাংলাদেশে সংগঠিত সব অপরাধকে একত্র করে তুলে ধরতে চাই। যার মধ্যে খুন, রাহাজানি, যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, ডিজিটাল অপরাধ, জবরদখল, অস্ত্রবাজী, সরকারী ও বেসরকারি তহবিল তসরুপ, টেন্ডারবাজী, বিদেশে টাকা, মানব ও সম্পদ পাচার, প্রতারনা, অবৈধ ও অনৈতিক ব্যবসা আরও কতকি!!!
আমাদের দেশে বর্তমানে যে আইনে বিচার ব্যবস্থা চলে আসছে, তা প্রয়োজন সাপেক্ষে জনস্বার্থে মানুষ প্রবর্তিত আইন যা সময়ে সময়ে পরিবর্তন করা হয় এবং চেষ্টাও করা হয় সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা। এ জন্য বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনীয় শিক্ষাও গ্রহণ করে থাকেন। দুঃখজনক হোল তাতে অপরাধের মাত্রাতো কমেই নাই বরং বেড়েছে। নিশ্চয় এ বিষয়ে আপনি আমার চেয়ে আরও ভাল জানেন। এ সংক্রান্ত আপনার অনেক তদারকী সংস্থা আছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ পৃথিবীতে এক নম্বর দুর্নীতিপ্রধান দেশ। তাতে আমাদের বিশ্বাস হউক বা না হউক। ২০১৯ এর Transparency International মতে বাংলাদেশ ১৮০ তম দেশের মধ্যে ১৪৬ তম এবং বলা যায় এক নাগাড়ে এই score কয়েক বৎসর পর্যন্ত ধরে রাখছে। নিচের এই ইন্ডেস্ক শুধু কিছু খাতকে তুলে ধরেছে।
আমি আপনার বা সরকারের সমালোচনার উদ্দেশ্যে কলম ধরি নাই, আমার একটা অন্য উদ্দেশ্য আছে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর আপনি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় আছেন, দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে কোন অংশে কম হয় নাই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ধর্ষণ, একই মাত্রা অন্যসব বিভাগেও। অথচ বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সবই বলবৎ আছে এবং মাসে মাসে সরকারী সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগও করছে। অথচ ফল তথৈবচ। যে পরিমাণ গৌরব, সম্মান ও খ্যাতি আপনার আছে সম পরিমাণ কিন্তু অভিযোগেরও অন্ত নাই।
এতসব কথায় এইটুকু কি প্রমান হয় না যে সর্ষের মধ্যেই ভূতও আছে। এবং এটাও প্রমান করে যে মানুষ প্রবর্তিত আইন যতই যুগপোযুগী বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী ও প্রয়োগ করা হয় না কেন তা কোন দিনই নিরঙ্কুশ সুফল বয়ে আনবে না। এ কথা খাঁটি ও নিখুঁত সত্য। এবং আমি বিশ্বাস করি আপনিও আপনার ক্ষমতাকালীন সময়ে দেশকে ভাল কিছু উপহার দিয়ে যেতে চান, সব সময় আপনার কথায় তাই ফুটে উঠে।
যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তাদের ঠিকানা নিচে দেওয়া হোল। হিসাবের বাহিরে যে আরও হিসাব আছে তার হিসাব কে রাখে।
আমাকে ভাবাবেগ তাড়িত করছে আসল কথা বলার জন্য। আর তা হোল বর্তমান আইন ব্যবস্থা তো আপনার জীবদ্দশায় তো দেখলেন, এবার আসেন আল্লাহ্র আইন দিয়ে কি কিছু করা যায় কিনা। আমি বলি না আপনি দেশে আজই শরীয়া আইন চালু করেন, চোরের হাত কেটে ফেলেন। কিন্তু কিছু আইনকে কি পরিবর্তন করা যায় না, যেমন, হত্যা, খুন,ধর্ষণ, বড় রকমের দুর্নীতি। বর্তমান আইনে অনেক ফাঁক ফোঁকর থাকে, ফলে আইন প্রনেতারা যতই বুদ্ধিমত্তার সাথে আইন তৈরী করুক না কেন, দুর্নীতিবাজরাও ততটুকু চালাক। যথেষ্ট শিক্ষা দীক্ষার দোড় না থাকলেও দুষ্টবুদ্ধির কোন শেষ নাই। বুঝতে হবে উভয়পক্ষই মানুষ।
অথচ আল্লাহ্র আইন স্পষ্ট ও প্রমাণিত। যুগ যুগ ধরে এই আইনের প্রয়োগ যে সব দেশে বা সময়ে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানে ভাল ফলই এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এর মধ্যে ছওয়াবও নিহিত যা পাশাপাশি পরকালের নাজাতেরও উছিলা হবে। তাই প্রাথমিক ভাবে বর্তমান কিছু আইনকে যে গুলিকে দুষ্ট লোকেরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে, ফলে সামাজে আরও পচন ধরছে, সেগুলি যথাসম্ভব পরিবর্তন করা উচিত বলে আমি মনে করি। এতে দেশেরও মঙ্গল, সরকারেরও মঙ্গল বহুদিক হতে, আর্থিক, সরকারের মর্যাদা, লোকবল ও পরকালতো আছেই। আর এ অসম্ভব কিছু না, যদি র্যাব গঠন করা যায়, তবে কেন আর একটু কঠোর হয়ে আল্লাহ্র আইন মেনে নেওয়া যায় না।
একবার ভেবে দেখুন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে পাকড়াও ও শাস্তি দিতে আপনাকে দুই সেশন সময় নিতে হয়েছে, অন্য দিকে সময় লেগেছে প্রায় ৪৩ থেকে ৪৪ বৎসর, দেশীয় আইন এত জটিল ছিল যে বিচারকরাই এই সময় ক্ষেপণ করেছে। অথচ আল্লাহ্ তা’আলার আইন হোল, ‘ আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম। (আল কুরআন, সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৫) তাহলে তো দেখা যায় আপনি ঠিক কাজটি করেছেন, এর অর্থ এই যে আল্লাহ্র আইনকে এই ক্ষেত্রে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। অর্থাৎ আমাদের সংবিধানে বিধিবদ্ধ করেই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে, তা হলে অন্যান্য ক্ষেত্রে কেন আমরা আল্লাহ্র আইন প্রয়োগ করতে পারবো না, বাধা দেওয়ার কে আছে, যেখানে আপনার সরকারই দেশ পরিচালনা করছে। এই হত্যা যে কতটুকু গুরুতর আল্লাহ্ তাঁর বানীতে বলেন,” এ কারণেই আমি বানী ইসরাঈলের প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে অন্য প্রাণের বিনিময় ব্যতীত, কিংবা তার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে কোন ফিতনা-ফাসাদ বিস্তার ব্যতীত, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেলল; আর যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করল, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করল; আর তাদের (বানী ইসরাঈলের) কাছে আমার বহু রাসূলও স্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে আগমন করেছিল, তবু এর পরেও তন্মধ্য হতে অনেকেই ভূ-পৃষ্ঠে সীমা লংঘনকারী হয়ে গেছে। (আল কুরআন-সুরা মায়েদা, আয়াত-৩২) মানুষ মাত্রই ক্ষতিগ্রস্থ (আল- কুরআন, সুরা আসর, আয়াত ২), এক অর্থে আমরা সবাই কমবেশি পাপ করেছি যার কারনে আমরা সব সময়ই তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। এবং তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ হতে নিরাশ না হতে বলেছেন ইউসুফের বাবার মাধ্যমে (আল কুরআন, সুরা ইউসুফ, আয়াত ৮৭) পরিশেষে আল্লাহ্ তা’আলা হাবিলের মুখ দিয়ে যে কথা বলালেন তা হোল, ‘আমি চাই যে, (আমার দ্বারা কোন পাপ না হোক) তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ সমস্তই নিজের মাথায় তুলে নাও; অনন্তর তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও, অত্যাচারীদের শাস্তি এরূপই হয়ে থাকে। (আল কুরআন, সুরা মায়েদা, আয়াত-২৯) আল্লাহ্ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে তাঁর সমস্ত পাপ মোচন করে বেহেস্তবাসী করুন, এই দোয়া করি।
এবার আসি, এই আইন সংবিধানে সংযোজন করার জন্য আপনার লোকের কোন অভাব নাই, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বিজ্ঞ, মদীনা বিশ্ব বিদ্যালয় হতে ডক্টরেট করা বিদগ্ধ পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা আপনাকে, আপনি চাইলেই সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে। ইসলামী ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন, সৎ ও জ্ঞানগর্ভ পণ্ডিত ব্যক্তি বাছাই করে সহজেই আপনি একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে পারেন বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে। সংসদে পাশ করানো তো আপনার হাতের মুঠোয়।
পাছে লোকে কিছু বলে, তা সব সময়ই থাকবে, দেশে ও বিদেশে, বঙ্গবন্ধুর বিচার নিয়েতো তারা অনেক ছিনিমিনি খেলা খেলেছে, তারা কি শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সমর্পিত হয়নি। এটা ভাবলে ক্ষতিগ্রস্থই হবেন যে, আপনার চেয়ে তারা শক্তিশালী বা ক্ষমতাধর, আসলে তা একেবারেই না, দেশীয়দের বেলায় আল্লাহ্ বলেন, আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও। (সুরা বাক্কারা, আয়াত ১৭০) আর বিদেশী পরাশক্তি, তাদের বেলায়ও আল্লাহ্ বলেন, ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই। (সুরা বাক্কারা, আয়াত ১২০)
কারও কথায় আপনার কিছুই যায় আসে না। দেশকে সুশৃঙ্খল করতে হলে আপনাকে আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে হবে যা শাশ্বত সত্য ও বাস্তব ও কল্যাণমুখী। আল্লাহ্র আইন থেকেই তা গ্রহণ করতে হবে যে ভাবে বাবার জন্য আইন প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
দিন দিন আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা কমে আসছে বিভিন্ন কারনে এবং বাস্তবতা হোল আমাদেরকে নিজেদের পায়ে দাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা আমাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করে এবং লজ্জায় ফেলে দেয়, আপনি এ বিষয়ে আমার চেয়ে বেশী আক্রান্ত, তথাপি আপনি সহিঞ্চূর পরিচয় দিয়ে থাকেন। বিশ্বাস করেন কিনা জানিনা যে পরিমাণ অর্থ সম্পদ আমাদের দুর্নীতি, তছরুপ ও পাচার হয় তা যদি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি, তা হলে আমাদের বাৎসরিক বাজেট করতে কারও ধর্না দিতে হবে না। আমরা উন্নতির এক মাইলফলক অতিক্রম করতে পারবো।
দুষ্ট মানুষের জীবন নিয়ে ভাবছেন, এবার করোনা আমাদেরকে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। অনেক অনভিপ্রেত মৃত্যু আমাদেরকে বহন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে, যেখানে আমাদের করার কিছুই নাই, শুধু দুঃখ প্রকাশ ও দোয়া করা ছাড়া। অথচ যারা দেশকে রীতিমত পঙ্গু করে দিচ্ছে, আমাদের কোন করুণা তাদের প্রতি নাই, তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে হয়, হাসপাতালে, জেলখানায়, জামিনে বা ধরাছোঁয়ার বাইরে বছরের পর বছর জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। পরিশেষে যদি হায়াত থাকে একদিন মাথা তুলেও স্পুলিংগ ছড়াবে। এদের এই আলিশান বেঁচে থাকা দেশের জন্য সব সময়ই অনিরাপদ। শাশ্বত আল্লাহ্র আইন সব সময়ের জন্যই কার্যকর করা উপযুক্ত সময় এখনই।
পরিশেষে যা বলে শেষ করতে চাই তা হোল পুরো সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, গণপ্রজাতন্ত্রের সকল ও প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য কিছু গাইডলাইন প্রয়োগ করুন যা নির্দ্বিধায় আপনাকে কিছুটা স্বস্তি দিবে।
১) প্রতিটি নিয়োগ পর্যায়ে কর্মচারীদের থেকে ওথ বা শপথ নিতে হবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে, যেমনটি আল্লাহ্ সুরা নূর এ আমাদেরকে দেখিয়েছেন এ বলে যে “……………এরূপ ব্যক্তির সাক্ষ্য এভাবে হবে যে, সে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার সাক্ষ্য দেবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী।এবং পঞ্চমবার বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর লানত। (আয়াত ৬-৭) ওথ বা শপথ নেওয়ার আগে রাষ্ট্রীয় বিধিবদ্ধ বাক্যগুলো উচ্চারন করার পর সে আল্লাহ্র এই কালাম উচ্চারন করবে এবং বলবে সে সবসময় সত্যবাদী থাকবে এবং পঞ্চমবার বলবে আল্লাহ্র লানত ও গজব পড়বে যদি সে মিথ্যা বলে।
সত্যবাদীতা এমন এক শব্দ যা সব কিছুর গুরুত্বকে বুঝায়। সত্য মুমিন ও মুনাফিকের ভেতর পার্থক্যকারী। সত্যবাদিতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য আর মিথ্যা মুনাফিকের নিদর্শন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, যখন আমানত রাখা হয়, তার খেয়ানত (বিশ্বাসভঙ্গ) করে।’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ২৯২৫)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন সর্বদা সত্য বলে এবং সত্য বলার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে, শেষ পর্যায়ে তার নাম আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দিক’ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮০৫)
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে, ‘যদি তোমার মধ্য চারটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তাহলে দুনিয়াবী যা কিছু হারাও তাতে তোমার কিছু যায় আসে না। ১. আমানত সংরক্ষণ করা ২. সত্য কথা বলা ৩. উত্তম চরিত্র ৪. হালাল খাবার (মুসনাদে আহমাদ হা/৬৬৫২; মিশকাত হা/৫২২২। হাদীছ ছহীহ)।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘সত্যবাদিতা নেককাজের ভিত্তি এবং তা নেককাজ একত্র করে। মিথ্যা গুনাহের ভিত্তি ও তার বিধানভুক্ত।’ (মাজালিসুল মুমিনিন : ১/১৫০)
২) প্রত্যেকটি কাজ শেষ করার একটি নির্দিষ্ট সময় বা সীমা থাকে, বিচারকদের বেলায়ও প্রতিটি বিচার কার্য শেষ করার একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
কয়েকদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম যে, আপনি প্রতিদিন ভোরবেলা কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত না করে দিনের কাজে হাত দেন না, আমি খুব চমৎকৃত যে এ বিষয়ে আমারও অনেক দৈন্যটা আছে, আল্লাহ্র স্বরণীয় বানী যা আমাদের সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, তিনি বলেন (হে মুহাম্মাদ আপনি) বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।(সুরা আল-ই-ইমরান, আয়াত ২৬)
আশা করি আমার জবাবদিহীতার বিষয়ে আমি আল্লাহ্র কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলাম, আর আপনার ব্যাপারে আপনি ভাববেন আশা করি। আপনার মঙ্গল কামনা করি।
মা’আসসালামাহ
মিজানুর রহমান ছিদ্দিকী
আল্লাহ তাআলা যেন নীতিনির্ধারকদেরকে সঠিক বুঝ দান করেন।
জাযাকাল্লাহ