Monday, October 14, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমনিবেদনমোহাম্মাদ মোস্তফা মিল্লাতের ফেইচবুক কলাম থেকে

মোহাম্মাদ মোস্তফা মিল্লাতের ফেইচবুক কলাম থেকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিনত হয়েছে – অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ইতিহাস বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ফেস বুকে গত কয়দিন যাবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (নাকি সিনিয়র মাদ্রাসা!) অধ্যাপক মেজবাহ কামাল সাহেবের একটি ভিডিও ভাইরাল হবার পথে। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পনের বছর ফরেস্ট্রি তে অধ্যাপনা করেছি। চাকুরী থেকে অধ্যাপক হিসাবে আর্লি রিটায়ার করি। এখনো যুক্তরাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ক্যারিকুলাম কমিটিতে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার সম্পৃক্ততা বুঝানোর জন্যই আমার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করলাম।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি উচ্চতর মাদ্রাসা হয়ে যায় (কামাল সাহেবের উক্তি অনুযায়ী), তা হলে আমি বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার কোয়ালিটি নিয়ে খুব ই আশাবাদী।

কামাল সাহেব, আপনার এই ধরনের শিশুসুলভ বক্তব্যে আমি লজ্জিত। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে আপনার এ-ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত দৃষ্টি কটু ও দুঃখজনক। এই ধরনের ডিভাইড এন্ড রুল মন্তব্য করে কাদের পারপাস সার্ভ করছেন? আপনার বক্তব্যে মনে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করে আপনি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছেন। আপনার জন্য দুঃখবোধ করছি।

মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রীরা পরীক্ষা দিয়ে কম্পিটিশনে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়, তাহলে সমস্যা কোথায়? ওরা তো করুনা ভিক্ষা করছে না। ওরা তো কোটার দাবী ও করে নি। অনেক বিষয়ে ওদের কে ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম পর্যন্ত নিতে দেয়া হয় না। তাহলে তারা ৬০ ভাগ সিট কিভাবে দখল করলো? গত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কলা ইউনিটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাবে মাদ্রাসার ছাত্র/ ছাত্রীরা সবচেয়ে ভালো ফলাফল করছে। ওরা তো এই দেশের সন্তান। আপনি যদি কোটায় বিশ্বাসী না হয়ে ‘কোয়ালিটি মেটারস’ এ বিশ্বাসী হোন – তবে তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উম্মুক্ত করে দিতে বলুন। আমার বিশ্বাস ওরা সব বিষয়ে ওদের মেধার পরিচয় দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

কামাল সাহেব। বাংলাদেশের কয়টি বিদ্যালয় ও কলেজে বর্তমানে সঠিকভাবে পাঠদান করা হয়? যদি স্কুল কলেজে সঠিক ভাবে পাঠ দান করা হতো, তাহলে মোড়ে মোড়ে এত কোচিং সেন্টার কেন? স্কুলেই শিক্ষক রা পাঠদান না করে কোচিং ক্লাস চালান কিভাবে? মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য কয়টা কোচিং সেন্টার আছে? আপনি ওদের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করেছেন এবং ক্লাস ফোরের সাথে তুলনা করেছেন। আমার পরিচিত আপনার একজন সহকর্মী (অন্য ডিপার্টমেন্ট) তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। সে মাদ্রাসার নবম শ্রেনীতে থাকাকালীন সময়ে আমার কাছে ইংরেজিতে চিঠি লিখতো। সে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভালো সাব্জেক্টে ইংরেজি মিডিয়ামে পরীক্ষা দিয়ে রেকর্ড মার্কস নিয়ে প্রথম হয়েছে। সংগত কারনে তাঁর সাব্জেক্ট উল্লেখ করলাম না। তবে সেটা মাদ্রাসা সম্পর্কিত কোন সাব্জেক্ট না।

ইংল্যান্ডে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার অনগ্রসর এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য ভর্তির শর্ত শিথিল করে দেয় যাতে করে তারা উচ্চ শিক্ষায় অংশগ্রহণ করে পরবর্তীতে সমাজ গঠনে নিজেদের মেধা কাজে লাগাতে পারে। এই প্রোগ্রাম কে তারা নাম দিয়েছে Widening Participation. এই প্রোগ্রামের আওতায় ইংল্যান্ডের মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রীরাও অন্তর্ভুক্ত । এখানেই উন্নত আর অনুন্নত বিশ্বের মধ্যে পার্থক্য। আপনারা বাংলাদেশে স্যাকুলারিজমের চর্চা করতে যেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে দমিয়ে রেখেছেন। এক সময় বাংলাদেশে মা বাবারা সবচেয়ে দুষ্ট ছেলেটাকে মাদ্রাসায় দিত। এখন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক শিক্ষিত পরিবারে সবচেয়ে টেলেন্ট ছেলে মেয়েকে হাফিজ বানিয়ে মাদ্রাসায় পড়িয়ে তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। এরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকুরী করছে। ইংল্যান্ডে বর্তমান প্রজন্মের এথনিক মাইনোরিটির ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ও সলিসিটরদের একটা বড় অংশ কোরানে হাফিজ। তাঁরা মসজিদে ইমামতি ও করে। আবার চাকুরী ও করে। ওদের জুম্মার খোতবা শুনে অনেক জ্ঞানপাপী ও বিধর্মী দলে দলে ইসলাম কবুল করছে।

কামাল সাহেব, সুযোগ থাকলে ইংল্যান্ডে এসে দেখে যান। বাংলাদেশের মাদ্রাসার যে সব ছাত্র ইংল্যান্ডে আসার সুযোগ পেয়েছে, তাঁরা এখানে কমিউনিটির উন্নয়নে যে ভুমিকা রাখতেছে, আমাদের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়াররা তাঁদের ভূমিকার ধারে কাছে ও নাই। তাঁদের অনেকেই বৃটিশ সরকার ও রানী কর্তৃক সমাজ সেবায় খেতাব প্রাপ্ত। এইসব খেতাব বাংলাদেশের মত কিনতে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশেও মাদ্রাসার ছাত্র/ছাত্রীদেরকে অনুকূল পরিবেশ দিন। দেখবেন দেশটা সোনার বাংলায় পরিনত হবে।

কামাল সাহেব, সংকীর্ণ দৃষ্টি ভংগি পরিবর্তন করে দৃষ্টি ভংগিকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করুন। যাদের বিরুদ্ধে বিষাদাগার করছেন, তাদের পরিবারের টেক্সের টাকায় আপনার বেতন হয়। আপনার এই উক্তির জন্য একজন শিক্ষক হিসাবে আমি আবারো লজ্জিত। আপনার জন্য সহানুভূতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদের মত জ্ঞান তাপস (!!!) দের সুবুদ্ধির চর্চা করার তওফিক দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

20 + 9 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য