আজ কিছু লিখতে মনকে রাজী করাতে পারছিলাম না, তথাপি লিখতে হচ্ছে বড় বেদনা নিয়ে। কি এক আজব দেশে আমরা বসবাস করি। সবাই যেন উদোম হয়ে থাকতে ভালবাসে। যার যা মন চায় তাই বলে, দোষ চাপানো, গলাবাজি করা, দালালী করা সর্বোপরি আজ্ঞাবহের পদলেহন করা, তাও আবার মৃত ব্যক্তিকে দোষী করা। তা যদি কোন সাধারণ লোক দ্বারা হোত তা’হলে খুব একটা মাথা ব্যথা ছিল না। কারন এরা সমাজে কোন অর্থবহ ভূমিকা রাখতে পারে না। যদিও কারোরই এরুপ চরিত্র গ্রহণযোগ্য না। তিনি হলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জাঁদরেল উকিল রানা দাশগুপ্ত। যদিও তার গুপ্তথলি অনেক আগেই প্রকাশ পেয়ে গেছে। তথাপি স্ট্যান্ডবাজী থেমে নেই।
গতকালকের বক্তব্য দিয়েই শুরু করি, তিনি চট্টগ্রামে এক সভায় বললেন, পত্রিকার হেডিং ছিল ‘জিয়া-এরশাদের “প্রেতাত্মা” সংবিধানে এখনও বহাল’।[i] আসুন, প্রেতাত্মার সঠিক সংজ্ঞাটা জেনে নেই। সাধারণত প্রেতাত্মা বলতে বুঝায় ভুত, রাক্ষস, পিচাশ, দৈত্য, সবই খারাপ দৃষ্টিতে। অথচ মুসলিমরা বিশ্বাস করে প্রেতাত্মা বলে কিছু নেই। যেটা আছে তা হোল শয়তান, জীনরূপী ও মানুষরূপী। তাদের ধর্মগ্রন্থে প্রেতাত্মা আছে কি না তা তারাই বেশ জানে। মুসলমানদের আরেকটা বৈশিষ্ট হোল মৃত কোন ব্যক্তিকে মন্দ দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখা। শেষ জবাবদিহি যেহেতু আল্লাহ্র কাছে, তিনি পরিমাপ করবেন, তার কর্মের ফলাফল, ভাল হলে জান্নাত আর খারাপ হলে জাহান্নাম। তার (মৃতের) জীবনভর কর্মের হিসাব আমরা কি ভাবে পরিমাপ করবো, আমরা তো তার (মৃতের) সংস্পর্শে সার্বক্ষণিক ছিলাম না আর আমাদের কাছেতো কোন পরিমাপ করার যন্ত্রও নেই। অতএব কোন মুসলিম মৃত হলেও প্রেতাত্মা হয় না, জীবিততো নয়ই। তাহলে তাকে কে এই স্পর্ধা দিয়েছে মুসলিম মৃতদেরকে প্রেতাত্মা বলা বা তাদের কাজকে প্রেতাত্মা বলে মূল্যায়ন করা।
তাচ্ছিল্যের একটা সীমা আছে। অবশ্যই দেশের গোবেচারা দল গুলো মুখ বুঝে সব সহ্য করার দারুন এক সাহসী ভূমিকা অবলম্বন করে বসে আছে। জিয়া এরশাদ তাদের কোন কালেই কিছু ছিল না।
তার কিছু বক্তব্য দিয়ে শুরু করা যাক!!
৬ই জুন, ২০১৫, আমরা ‘নিয়ত ভয়’ -তে বেঁচে থাকি, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে এর দায়িত্ব গ্রহণ করা চাই: বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ। দাশগুপ্ত বলেছেন, “আমরা অনুভব করি যে নরেন্দ্র মোদী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায়, বাংলাদেশের মৌলিক শক্তিকে একটি দৃড় বার্তা পাঠানো উচিত যে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ সহ্য করা হবে না।”[ii]
স্ক্রোল.ইনকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পুনর্বিবেচনা করে দাশগুপ্ত বলেছেন, বাঙালি হিন্দুদের পক্ষে এর উত্তরাধিকার ব্যবস্থা চরম তিক্ত হয়েছে, যারা বিগত ৭০ বছরে তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে জাতিগত নির্মূলের শিকার হয়েছেন। দেশভাগের ফলে যে বিভাজন ঘটেছিল তা এখনও বাংলাদেশে রয়েছে, দাশগুপ্তের মতে, যার বিশ্লেষণ ধর্ম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের প্রচারের বিপদ নিয়ে ভারতের পক্ষে একটি শিক্ষা হওয়া উচিত।
‘বাঙালি হিন্দুরা পাকিস্তানের জন্য নয়, সংঘবদ্ধ ভারতের পক্ষে লড়াই করেছিল’[iii]
এখন প্রশ্ন হোল তার এই স্ট্যান্ডবাজীর মুল উৎস কি? আমরা কি একটা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি না, সরকার বলে কি দেশে কারও অস্তিত্ব নাই, কেন দেশের ভাবমূর্তি বিকিয়ে দিতে হবে অন্য দেশের একজন জাতীয়তাবাদী হিন্দুর কাছে, যে কিনা কট্টর হিন্দু।[iv] এ জন্যই তাকে দেশদ্রোহিতার তকমা নিতে হয়েছে “Under the Khaleda Zia regime, between 2001 and 2006, two cases were filed against me – one under the anti-terror Act and the other for anti-state activities. I am a freedom fighter. How can I even think of leaving Bangladesh? বড্ড অবাক লাগে যখন দেখি এক জন দেশ বিরোধী ব্যক্তি দেশের বড় একটা মর্যাদার স্থান দখল করে আছে, জানিনা সরকার কি বিবেচনায় তার এই অবস্থান দিয়ে রাখছে? এই বিষয়ে আমাদের সরকার মহোদয়ের ঘুম ভাঙ্গলে খুশি হবো। অথচ দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের বিবেচনায় বর্তমানে অনেক প্রবাসী জেলে আছেন। সেলুকাসতো অবশ্যই।
চলুন একটা জটিল সমীকরণের উত্তরপত্র তৈরী করি। দেশকে যেই সম্মান ও মর্যাদা পূর্বের দুই প্রেসিডেন্ট দিয়ে গিয়েছে, তাতে কি ক্ষতি হয়েছে, আমরা কি জানতে পারি? এমন কেউ আছেন? এ বিষয়ে তাদের কি দোষ হয়েছে? বর্তমান সরকারওতো তাই বলবত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাহলে উক্ত দুই প্রেসিডেন্টের প্রতাত্মা তো এখন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে পেয়ে বসেছে। আপনি তো তাঁর অনুগত লোক, করছেনটা কি তা’হলে? অথচ সংবিধানের ২ক ধারায় বলা হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।[v]
মৃত ব্যক্তিকে অভিশাপ দিতে নেই, সংবিধানের এই পরিবর্তনে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থানের কোন ক্ষতি হয় নাই, তাই অন্তত আশা করি, এই উদ্যোগের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে কোন শাস্তি দিবেন না, তা হলে এই বুদ্ধিমান উকিল সাহেব প্রেতাত্মা পেলেন কোথায়? এমনিতেও মুসলমানদের প্রেতাত্মা হওয়ার কোন সুযোগ নাই। আল্লাহ্ সমস্ত মুসলিম মৃত ব্যক্তির কবর আজাব মাপ করুন ও জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন। আমিন।
এবার আসি তার রুপক অর্থের ভাব নিয়ে, ৯০.৫% মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও উক্ত দুই প্রেসিডেন্ট তো তাদের গায়ের জোরে সংবিধানে ইসলাম প্রবেশ করান নাই, অর্ডিন্যান্স পাশ করেই করেছেন এবং বর্তমান সরকার তা মেনেও নিয়েছেন তথাপি আপনার গাত্রদাহ হচ্ছে কেন? বর্তমানের আপনার পছন্দের সরকারকে দিয়ে পারলে একটা জরীপ করিয়ে নিতে পারেন, জনগণ কি চায়, ইসলাম ভিত্তিক রাষ্ট্র চায় নাকি সেক্যুলার রাষ্ট্র চায়? অন্তত মনের জ্বালা মিটাতে পারবেন। আপনার কিছু মুখ চেনা বন্ধুদেরও উপকারে আসবে।
তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, দেশকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায় ফেলবেন না, মুখ ফস্কে যদি কোন ভুল কথা বের হয়েও যায় সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। ক্ষমা মহৎ ধর্ম। মুসলমানদেরকে আল্লাহ্ ক্ষমা করতে আদেশ দিয়েছেন।
[1] https://www.rtvonline.com/country/107541/%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%96%E0%A6%A8%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%A6%
[ii] https://indianexpress.com/article/india/india-others/bangla-hindus-say-they-live-in-constant-fear-want-pm-modi-to-take-it-up/#sthash.nIaGwtLA.F3g3QUZu.dpuf
[iii] https://www.dhakatribune.com/bangladesh/law-rights/2017/09/17/interview-hindus-bangladesh-faced-ethnic-cleansing-since-1947
[iv] https://www.tandfonline.com/doi/full/10.1080/00856401.2015.1089826
[v] http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-957/section-29339.html