রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায়ই গর্বভরে বলেন, তার দেশ বিশ্বে প্রথম হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরিতে কাজ করছে, যা শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ দ্রুত গতিতে যেতে পারবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা একাধিক রাশিয়ান পদার্থবিজ্ঞানীকে দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং কারারুদ্ধ করা হয়েছে, যা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো অতি উত্সাহী কঠোর দমনাভিযান হিসেবে দেখছে। বিবিসি বাংলা।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই বয়স্ক এবং এদের মধ্যে তিন জন এখন মৃত। এক জনকে ক্যানসারের শেষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় হাসপাতালের বিছানা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। আরেক জন হলেন ৬৮ বছর বয়সি ভ্লাদিস্লাভ গালকিন। তিনি একজন একাডেমিক এবং গত এপ্রিলে দক্ষিণ রাশিয়ার তমস্কে তার বাড়িতে ২০২৩ সালে অভিযান চালানো হয়। এক জন আত্মীয় বলেন, কালো মুখোশ পরা সশস্ত্র লোকেরা ভোর ৪টায় এসে আলমারির মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে এবং বৈজ্ঞানিক সূত্রসহ কাগজপত্র জব্দ করে।
গালকিনের স্ত্রী তাতিয়ানা জানান, তাদের নাতি-নাতনি যারা তার সঙ্গে দাবা খেলতে পছন্দ করত তাদের তিনি বলেছেন, তাদের দাদা একটি ব্যাবসায়িক সফরে আছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবি তাকে তার মামলার বিষয়ে কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন পদার্থবিজ্ঞানী গ্রেফতার হয়েছেন যারা কোনো না কোনোভাবে এই হাইপারসনিক প্রযুক্তি বা এটা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা প্রত্যেকে ভয়ংকর দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত, যার মধ্যে আছে রাষ্ট্রীয় গোপন খবর বিদেশি রাষ্ট্রে পাচার করা।
রাশিয়ায় বিশ্বাসঘাতকতার বিচার করা হয় বন্ধ দরজার আড়ালে, তাই তাদের বিরুদ্ধে ঠিক অভিযোগটা কী তা স্পষ্ট নয়। ক্রেমলিন শুধু জানিয়েছে, ‘অভিযোগগুলো গুরুতর’ এবং যেহেতু বিশেষ বাহিনী এতে যুক্ত তাই এ নিয়ে আর কিছু বলা যাবে না। কিন্তু তাদের সহকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, এই বিজ্ঞানীরা অস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল না, কিছু মামলা দায়ের হয়েছে তারা যে খোলাখুলিভাবে অন্য দেশের গবেষকদের সঙ্গে মিলে কোনো কাজ করছিল সেটার জন্য। আর সমালোচকরা মনে করেন, এফএসবি আসলে এরকম একটা ধারণা তৈরি করতে চায় যে বিদেশি স্পাইরা তাদের অস্ত্রের গোপন খবর জানার চেষ্টা করছে।
হাইপারসনিক বলতে এমন মিসাইল বোঝায় যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুর দিকে যাওয়ার সময় আকাশ প্রতিরক্ষাকে এড়িয়ে এটি দিক পরিবর্তন করতেও সক্ষম। রাশিয়া বলছে, তারা ইউক্রেনের যুদ্ধে দুই ধরনের মিসাইল ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে একটি কিনঝাল, যা বিমান থেকে উেক্ষপণ করা হয় এবং অন্যটি জিরকন ক্রুজ মিসাইল। তবে কিয়েভ বলছে, তাদের বাহিনী কিছু কিনঝাল মিসাইল ভূপাতিত করেছে, যা এই অস্ত্রের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সেটা নিয়ে কাজ যেমন চলছে, তেমনি গ্রেফতারও অব্যাহত রয়েছে।
ইত্তেফাক/এএইচপি