রুয়ান্ডা গণহত্যায় জড়িত কাবুগাকে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের অনুমোদন দিল ফ্রান্সের আদালত।

ফেলিসিয়ান কাবুগাকে যোদ্ধাদের জমায়েতকরণ, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ৮,০০,০০০ এরও বেশি নৃগোষ্ঠী তুতসিদের হত্যা করা হয়েছিল।

0
273

ফ্রান্সের শীর্ষ আপিল আদালত বুধবার রায় দিয়েছে যে, রুয়ান্ডার গণহত্যায় অভিযুক্ত সমৃদ্ধশালী ফেলিসিয়েন কাবুগাকে তানজানিয়ায় জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। যেখানে তাকে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

জাতিসংঘের প্রসিকিউটররা প্রাক্তন চা এবং কফি শিল্পে বিনিয়োগকের বিরুদ্ধে নৃগোষ্ঠী হুতু যোদ্ধাদের জন্য বিপুল সংখ্যক স্থানীয় তৈরী অস্ত্র আমদানি ও অর্থ যোগানের অভিযোগ তুলেছেন। ১৯৯৪ সালে এর জের ধরেই ১০০ দিনের সময়কালে রুয়ান্ডায় কয়েক হাজার তুতসি এবং মধ্যপন্থী হুতুদের হত্যা করা হয়েছিল।

তার বিরুদ্ধে রেডিও টেলিভিশন মিল কলিনস স্টেশন স্থাপনেরও অভিযোগ ছিল। যেখানে নৃগোষ্ঠী তুতসি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি একটি সশস্ত্র দলকে প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুত করানোর অভিযোগ উঠে, যারা হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিল।

কাবুগা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জুভেনাল হাবেরিমানার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। জুভেনাল বিমান হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ফলে রুয়ান্ডায় ১০০ দিনের গণহত্যা শুরু হয়েছিল। কাবুগার কন্যার হাবিরিমানার ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল।

মে মাসে প্যারিসে কাবুগাকে গ্রেপ্তারের ফলে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এক মনুষ্য-হত্যা ঘটনার অবসান ঘটিয়েছিল। কাবুগা গণহত্যা ও গণহত্যার প্ররোচনাজনিত অভিযোগগুলোকে “মিথ্যা” আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছেন।

তার আইনজীবীরা বলেন, ৮৭ বছর বয়সী কাবুগা বিদেশে স্থানান্তরের উপযুক্ত নন। বিশেষত করোনভাইরাস মহামারী চলাকালীন এটি আরো বিপজ্জনক হবে। ফরাসী আদালত তার বয়স ৮৪ বছর বলে উল্লেখ করেন।

কাবুগার আইনী দল আরো বলেন, ফরাসী আইন আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের অনুমতি না দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।

জুনে, একটি ফরাসী আদালত রায় দেয় যে, কাবুগাকে তানজানিয়ার মেকানিজম ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালস (এমআইসিটি)-এ বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এমআইসিটি, ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া জাতিসংঘের রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিআর) এর দায়িত্ব নেয়।

কাবুগার আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তকে আপিল করেছিলেন। সেখানে তারা কাবুগার দুর্বল স্বাস্থ্য-এর বিষয় উল্লেখ করেন এবং আশঙ্কা করছেন যে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনাল পক্ষপাতদুষ্ট হবে।

কিন্তু বুধবার ফ্রান্সের ফৌজদারী মামলার সর্বোচ্চ আপিল আদালত কোর ডি ক্যাসেশন এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছে। এর মানে, কাবুগাকে এমআইসিটিতে হস্তান্তর করতে ফ্রান্স এক মাস সময় পাবে।

গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত কাবুগা ছিলেন ইউএন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অন্বেষিত সর্বাধিক হাই-প্রোফাইল পলাতক আসামী।

সাতটি মামলায় অভিযুক্ত কাবুগা

বুধবারের রায় দেওয়ার পরে, আইনজীবী এমানুয়েল আলতিত বলেন, প্রতিরক্ষা দল এমআইসিটিকে অনুরোধ করবে যে, কাবুগাকে আরুশার পরিবর্তে হেগে স্থানান্তরিত করা হউক। ”কেননা, হেগে তার অধিকারগুলি আরো ভালোভাবে সুরক্ষিত থাকবে বলে আশা করা যায়”।

কোর ডি ক্যাসেশনের আগে শুনানি চলাকালীন, কাবুগার আরেক আইনজীবী, লুই বোর দাবি করেন যে, তার ক্লায়েন্ট তানজানিয়ায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং লিউকোইরাওসিস (একটি দুরারোগ্য অসুস্থতা, যা শারীরিক এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা ক্ষয় করে) সহ অন্যান্য রোগের সঠিক চিকিত্সা পাবেন না।

১৯৯৭ সালে আইসিটিআর কাবুগাকে সাতটি মামলায় অভিযুক্ত করে, তার সবকটিই তিনি অস্বীকার করেন।

রুয়ান্ডা বলছে, তারা কাবুগাকে তাদের নিজস্ব আদালতে বিচার করতে চায়।

তবে, এমআইসিটি থেকে বিচারব্যবস্থা স্থানান্তরের জন্য ইউএন সুরক্ষা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হতে পারে।-এমআইসিটি প্রসিকিউটর সার্জ ব্রামার্টজের মতে। এছাড়াও হেগ করোনভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট অঞ্চল। যেখানে এই সপ্তাহে আরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি পল কাগমে জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, গ্রেফতারটি থেকে বোঝা যায়, যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা চায় না তাদের হাতে বৃদ্ধ বয়সী পলাতকের মৃত্যু হোক। মে মাসে কাবুগা আটক হওয়ার পরে, এই মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো তিনি কোনো মন্তব্য করেন।

রুয়ান্ডায় ২০০৭ সালে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার আগে, বিরোধে ভূমিকার জন্য দোষী সাব্যস্ত ২২ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। এটি এমন এক পদক্ষেপ যা অন্য দেশ থেকে সন্দেহভাজনদের এনে বিচারব্যবস্থায় হস্তান্তর করতে সহায়তা করে।

প্রায় ১২,০০০ উল্লেখযোগ্য ট্রাইব্যুনাল যেগুলো “গাকাকা” হিসাবে পরিচিত, রুয়ান্ডা গণহত্যার প্রায় দুই মিলিয়ন লোককে নিয়ে বিচার শুরু করার চেষ্টা করেছিল এবং তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল।

ইউরোপীয় আদালত, বিশেষ করে বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সে রুয়ান্ডার গণহত্যার সন্দেহভাজনদের বিচার হয়েছিল এবং তাদের সাজা দিয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − four =