বর্তমানে দেশে করোনায় দ্রুত গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ও গবেষকদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের আশঙ্কা, করোনার রূপ বদলেছে, এ কারণে দ্রুত আক্রান্তের হার বাড়ছে। বাংলাদেশেও করোনার লন্ডন ধরনের উপস্থিতির প্রমাণও পাওয়া গেছে। দেশে এখন পর্যন্ত কয়েক জনের শরীরে মিলেছে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলের পর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পাওয়া গেছে করোনা ভাইরাসের বিপজ্জনক নতুন ভ্যারিয়েন্ট। দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বলেছেন, করোনার রূপ (জিনোম সিকোয়েন্স) বদলেছে। এ কারণে দ্রুত আক্রান্ত বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেছেন, এটা দ্রুতগতিতে ছড়ালেও চিকিৎসাব্যবস্থা একই। নিয়ন্ত্রণ করার কাজও একই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির প্রধান জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের তিন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এগুলো হলো—ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ভাইরাসের চরিত্রই হলো পরিবর্তন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বর্তমানে দ্রুতগতিতে করোনা ছড়াচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন হলেও চিকিৎসাব্যবস্থা একই। নিয়ন্ত্রণ করার কাজও একই। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, করোনার সংক্রমণ নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত ব্রিটিশ নাগরিক ড. সানজাম সাহা গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি বরিশালের নাগরিক। বাংলাদেশে করোনার লক্ষণ দেখে এবং দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে যারা জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ-খবর নিয়ে ড. সানজাম সাহা মতামত দিয়ে বলেছিলেন, সামনে বাংলাদেশে করোনা ক্ষিপ্রগতিতে ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। তখন তার এই মতামতকে গুরুত্ব দেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঐ সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল।
এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সমীর শাহ বলেন, করোনার লন্ডন ধরনের উপস্থিতি দেশে আছে। অর্থাৎ করোনার রূপ বদলেছে। এ কারণে বর্তমানে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (সাইন্স ল্যাবরেটরি) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করোনার রূপ বদলের ফলাফল পেয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘১০ জনের শরীরে করোনার লন্ডনের ধরনের উপস্থিতি পেয়েছি। আরও পরীক্ষা করছি। তবে করোনা যে গতিতে ছড়াক না কেন, তার চিকিৎসাব্যবস্থা একই। প্রতিকার-প্রতিরোধের ব্যবস্থাও একই।’
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত এক দিনে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৮৬৮ জন। এ নিয়ে দেশে টানা ১১ দিনে করোনা সংক্রমণ হাজারের ঘর ছাড়াল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক ও এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৮৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৬ জন হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।