লিবিয়ায় অবস্থান করা তুর্কি সৈন্যদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী তুরস্কের বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বলে হুশিয়ার করেছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার।
রোববার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে মোতায়েন করা তুর্কি সেনাবাহিনী পরিদর্শন শেষে এ ঘোষণা করেন তিনি। খলিফা হাফতারকে যুদ্ধাপরাধী ও খুনি হিসেবে উল্লেখ করে হুলুসি আকার বলেন, ‘যদি তারা এ ধরণের কোনো পদক্ষেপ নেয়, পালানোর কোনো জায়গা খুঁজে পেতে তারা অক্ষম হবে।’
একইসাথে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী তুরস্ক ও লিবিয়ার মাঝে পাঁচশ বছরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা স্মরণ করে বলেন, ত্রিপোলিভিত্তিক লিবিয়ার বৈধ সরকার গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকোর্ডের (জিএনএ) যখন বিশ্বের অন্য শক্তি সহযোগিতা করতে ইতস্তত করছিলো, তখন আঙ্কারা তার সহযোগিতার হাত বাড়ায়।
জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত জিএনএ সরকারকে লিবিয়ার একমাত্র বৈধ সরকার হিসেবে উল্লেখ করে হুলুসি আকার বলেন, ‘বিদ্রোহী হাফতার সমর্থিত বাহিনী এবং তাকে সহায়তাকারীরাই লিবিয়ার জন্য আসল সমস্যা।’
আকার বলেন, তারহুনা শহরে পাওয়া ২১টি গণকবর হাফতারের গণহত্যার অপরাধকে আবার প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, বিশ্ব এ বিষয়ে এখনো চুপ করে আছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি জিএনএ মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধকে সামনে বাড়তে দেবে না।’
আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে তিনি আহ্বান জানান, তারা যেন হাফতারের যুদ্ধ অপরাধের তদন্ত অব্যাহত রাখেন এবং তার কাজের জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করেন।
২০১৯ সালের এপ্রিলে রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট জেনারেল হাফতার জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত লিবিয়ার জিএনএ সরকারের ওপর হামলা করলে তুরস্কের সহায়তায় এ হামলা প্রতিরোধ করে জিএনএ।
শনিবার তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার লিবিয়ায় এক আকস্মিক সফরে আসেন এবং সিনিয়র লিবীয় কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তেলসমৃদ্ধ দেশটি থেকে তুর্কি সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে দিতে নিজ যোদ্ধাদের প্রতি হাফতারের আহ্বানের দু’দিন পরেই এই সফরে আসেন হুলুসি আকার।
তুরস্কের সামরিক বাহিনীর প্রধান ইয়াশার গুলের ও অন্য সামরিক কর্মকর্তারাও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে এ সফরে আছেন।
সফরে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবিয়ার হাই কাউন্সিল অব স্টেটের চেয়ারপারসন খালিদ মিসরি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সালাহউদ্দীন নামরুশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতহি বাশাগার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
ত্রিপোলির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তুর্কি ও লিবীয় কর্মকর্তারা তাদের আলোচনায় লিবিয়াকে অস্থিতিশীল করতে হাফতারের যেকোনো শত্রুতামূলক পদক্ষেপের জবাবে পারস্পারিক সমন্বয়ের বিষয়ে কথা বলেন।
এছাড়া শনিবার হুলুসি আকার ত্রিপোলিতে সামরিক ক্যাডেটদের এক সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জিএনএর সাথে সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই ক্যাডেটরা তুরস্কে প্রশিক্ষিত হন।
ত্রিপোলিভিত্তিক জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত জিএনএ সরকার গতবছর লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলভিত্তিক যুদ্ধবাজ নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারের সমর্থিত বাহিনীর হামলার শিকার হলে জিএনএ সরকারের সহায়তায় সামরিক উপদেষ্টা, সরঞ্জাম ও ভাড়াটে সৈন্য পাঠায় তুরস্ক। ২০১৯ সালের নভেম্বরে উভয়দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ও সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৯ সালের চুক্তির অংশ হিসেবে তুরস্কের সামরিক বাহিনী লিবিয়ার সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ সহযোগিতা ও পরামর্শগত সহায়তা দিয়ে আসছে। এছাড়া তিউনিসিয়া সীমান্তের সাথে লিবিয়ার আল-ওয়াতিয়া অঞ্চলে বিশালাকার এক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
গত সপ্তাহে তুর্কি পার্লামেন্টে লিবিয়ার আরো ১৮ মাসের জন্য তুর্কি সৈন্য মোতায়েনের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব পাসের পরই তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর লিবিয়ায় এ সফর অনুষ্ঠিত হয়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের পর যুদ্ধ ও সহিংসতায় বিধ্বস্ত হওয়া উত্তর আফ্রিকার এ দেশটি গোত্রীয় যোদ্ধা, উগ্রবাদী, ও ভাড়াটে সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। একইসাথে দেশটি ইউরোপে যেতে বেপরোয়া অভিবাসীদের প্রধানতম এক প্রবেশপথে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে দেশটি প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শক্তি, ত্রিপোলিভিত্তিক জিএনএ সরকার ও পূর্বাঞ্চলের খলিফা হাফতারের সমর্থিত বাহিনীর মধ্যে বিভক্ত। গত অক্টোবরে উভয়পক্ষ এক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আগামী বছরের শেষে পুরো দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা আছে।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ