Saturday, December 7, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমসীরাতশাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল-এক ক্ষণজন্মা দ্বায়ই, মৃত্যু যাকে বারবার হাতছানি দিয়েছে

শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল-এক ক্ষণজন্মা দ্বায়ই, মৃত্যু যাকে বারবার হাতছানি দিয়েছে

আজ যার ঐকান্তিক উদ্দীপনা ও আগ্রহে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় www.muslimummah.news ওয়েব পোর্টাল দুনিয়ার মুখ দেখেছে, তিনি হলেন সেই ক্ষণজন্মা শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল। তাঁর ইচ্ছা ছিল প্রচুর কিছু খেদমত করার, এবং যতটুকু পেরেছেন করেছেনও, কিন্তু আল্লাহ্‌র মর্জি, তিনি তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন এবং আমাদের মাঝে একটা প্রমান রেখে গেছেন যে, সময় বলতে যা বুঝায় আমাদের হাতে তা নেই। আল্লাহ্‌ তা'আলা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন, সবিশেষ এই দুয়াই করি।

ছোটবেলায় একবার মহিশের গাড়ির চাকার নিচে পড়তে পড়তে কীভাবে যেন বেঁচে গিয়েছিলাম। সেই গাড়িতে করেই ঘরে ফেরার সময় আকাশের দিকে ঘুড়ি দেখতে দেখতে নিচে পড়ে গিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়নি, ভাঙেনি হাত, মচকেনি পা।
.
একবার বাসের ছাদ থেকে এক মণ ওজনের বেগুনের বস্তা আমার উপরে পড়েছিল, কীভাবে যেন বেঁচে গেলাম, সুবহানাল্লাহ!
.
বছর দুই আগের কথা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ, হঠাৎ একটি বাস এলো, বসার জন্য অনেকগুলি সীট খালি। ইশারা করে এগিয়ে গেলাম তারাও বাস থামিয়ে ডাকল, কিন্ত কী এক অজানা কারণে ফিরে এলাম, উঠলাম না। কিচ্ছুক্ষণ পর আরেকটি বাস এলে তাতে উঠে গেলাম। কিছুদুর গিয়ে দেখি প্রথমে যে বাসটিতে উঠতে গিয়ে ফিরে এসেছিলাম সেই বাসটি এক্সিডেন্ট করে পড়ে আছে।
.
বছর দেড়েক আগের ঘটনা, বাসে উঠেছি। চলতে চলতে হঠাৎ বাসের একটি চাকা বাম পাশের কাচা রাস্তায় নেমে গেলে বাস ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেল হয়ে উল্টে যাওয়ার জোগাড় হলো। ইঞ্জিন অফ হয়ে যাওয়াতে ডান পাশের যাত্রীরা বাম পাশের যাত্রীদের উপরে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগল, কেউ কেউ শক্ত করে ডান পাশের জানালা সীট ধরে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করতে লাগল যেন বাসটি উল্টে না যায়।
.
আমি ছিলাম একদম পিছনের দিকে। দেখলাম সামনের দিক থেকে ধীরে ধীরে দুই একজন করে বাস থেকে নেমে দৌড় দিচ্ছে। আমিও সীট ধরে ধরে দুয়া পড়তে পড়তে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। আলহামদুলিল্লাহ! কোনরুপ ক্ষতি ছাড়াই বাস থেকে বের হতে পারলাম। পরে সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে বাসটিকে মূল রাস্তায় তুলে গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
.
বছরখানেক আগের কথা। এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে পান করে ঘরের ভিতরে নফল সলাতে দাঁড়িয়েছি। মনে হলো গলায় পানি আটকে গেছে। বুকটা ফ্রিজ হয়ে আসতে লাগল। নিঃশ্বাস এই বুঝি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভাবছি আজই হয়ত আমার শেষ দিন। সলাতে কী পড়েছি না পড়েছি কিছুই মনে নেই। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগল। মনে হচ্ছে মারা যাচ্ছি। সলাত ছেড়ে দিব না চালিয়ে যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ সলাতের মধ্যেই কালোজিরার তৈলের কথা মনে পড়ে গেল। ভাবনা হলো, যদি হায়াত থাকে তাহলে কালোজিরা হতে পারে সমাধান, কেননা মরণ ছাড়া এটা যেকোন রোগের ঔষধ। আর যদি আজকেই জীবনের শেষ দিন হয় তাহলে ওটাতে কোন কাজ হবেনা। কোনমতে দুই রাক’আত সলাত শেষ করেই দৌড়ে গিয়ে কালোজিরার তৈল নাকে ঢুকিয়ে দিলাম এক টান। ফিরে এসে মুসাল্লায় বসে দুয়া দরূদ পড়তে লাগলাম। হঠাৎ জোরে একটা ঢেকুর উঠে বুকটা একদম হাল্কা হয়ে গেল। একটু স্বস্তি অনুভব করতে লাগলাম। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো কেন জানি।
.
মহান আল্লাহ্ আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন। মৃত্যুর একদম কাছাকাছি গিয়েও ফিরে এসেছি। না আমি আসিনি, সেই ক্ষমতা আমার নেই, বরং গাফুর আল্লাহই সুযোগ দিয়েছেন আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে তোমাকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে, তোমাকে তো সামান্যই ফুরসৎ দেওয়া হয়েছে, তোমার ঋণ, গুনাহ, বান্দার হক্ব এগুলি মিটিয়ে দাও।
.
উস্তায শাহাদাত ফয়সালের মৃত্যু আমার জন্য আই অপেনারের মত। উনি আমার চাইতে বয়সে বছরখানেকের ছোট ছিলেন। প্রথমবার সাক্ষাতের সময় আমাদের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছিলো। উস্তাযের প্রায় সমবয়সী হওয়ার কারণে উনার সাথে অনেক বিষয়ে হাস্যরস করতাম। উনিও সে রসে গুড় ঢেলে দিতেন।
.
একবার উনার উত্তরার বাসায় গিয়েছিলাম। বইছাড়া তেমন কোন উল্লেখযোগ্য আসবাব চোখে পড়েনি। যেদিকে তাকাই শুধু বই আর বই। উনার বেডরুমে ঢুকে দেখি সেখানেও শুধু বই আর বই। হাদিয়া দিয়েছিলেন উনার লেখা বই “গুনাহ মাফের উপায়”।
.
চারদিন আগে ডিএমসিতে গেলাম। চিনতে পেরে মুচকি হাসি দিলেন। কবে এসেছি ঢাকায় জানতে চাইলেন। হাতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে অনেকক্ষণ পাশে বসে রইলাম। হাত গরম। আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কী? উনি বললেন, “গরু জবাই করলে যেমন রক্তের ধারা বয়ে যায়, আমার শাহাদাতেরও নাক মুখ দিয়ে একইভাবে রক্ত ঝরেছে। বাসার ফ্লোর রক্তে ভেসে গেছে। বেশ কিছু রিপোর্ট করানো বাকী আছে। সিম্পটম দেখে মনে হচ্ছে ফুসফুসের সমস্যা”। ফিরে আসার সময় মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম উস্তায একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেলেই হিজামা করিয়ে দিব। সে সুযোগ মহান আল্লাহ আমাকে দিলেন না।
.
গতকাল সকালে উস্তায শাহাদাত ফায়সাল আল্লাহর কাছে চলে যান। শুনলাম কালেমা শাহাদাৎ জপতে জপতে মুচকি একটা হাসি দিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। আহ কী সুন্দর মৃত্যু! জীবদ্দশায় উনার মুখটা অতোটা উজ্জ্বল ছিলনা যতটানা মরণের পর দেখতে লেগেছে। মনে হচ্ছিল উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত এক শিশু মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
.
আমার জীবনে এরকম যানাজা খুব কমই পেয়েছি। চোখের আর নাকের জলে ভেসে যাচ্ছিল যেন মাসজিদের ফ্লোর। উনার ইলম, ইলমের প্রতি ভালোবাসা, উস্তাযদের প্রতি সম্মান, সুহবত, দ্বীনের জন্য খেদমত সবার চাইতে আলাদা। উনার উস্তায, সাথীদের অনেকেই উনার বিভিন্ন অবদান ও স্মৃতি শেয়ার করছিলেন আর উপস্থিত সকলে হুহু করে কেঁদেই যাচ্ছিল। উনার বাবা বলছিলেন, “এটা আমার জন্য অনেক বড় বিয়োগ, আপনারা আমার জন্য দুয়া করবেন যেন আমি কষ্ট সইতে পারি”।
.
উস্তায শাহাদাত ফয়সালের ছোট ভাই প্রতিবন্ধি, বিবাহযোগ্যা এক বোন আছে ঘরে। উপার্জন করার মত এখন আর তেমন কেউ নেই তাদের পরিবারে। আমরা চাইলেই পারি তাদের পাশে দাঁড়াতে।
.
নিজের দিকে তাকাই আর ভাবি, আমারও বুঝি সময় হয়ে এসেছে। আমিহীন দুনিয়া হয়ত নতুন করে তার কাব্যরচনা করতে চলছে। হয়ত আমার বাবার কাঁধেও আমার লাশ উঠবে। কিন্তু শাহাদাত ফায়সালের মত শাহাদাত জপতে জপতে আল্লাহর কাছে যেতে পারব তো?
.
আল্লাহ তুমি দয়ার সাগর ওহে দয়াময়;
উস্তাযের সাথে আমার যেন জান্নাতে যাওয়া হয়।।।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ রাজিব হাসান

SourceFacebook

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

5 × four =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য