গণহত্যা বা গণপিটুনি কোনো হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তি সমর্থন করে না জাতিসংঘ। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে ঘিরে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার গ্রহণযোগ্য তদন্ত ও ন্যায়বিচার জাতিসংঘ দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফরকারী মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। বুধবার সন্ধ্যায় দু’দিনের ঢাকা সফরের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সব হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করলেই মানবাধিকার সুদৃঢ় থাকে। গণহত্যার অভিযোগে ছাত্রলীগের পর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে তাকে জাতিসংঘ কীভাবে দেখছে? জানতে চাইলে ভলকার তুর্ক সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, যেকোনো হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। এ সময় ৫ই আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়েও জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তথ্যানুসন্ধান করবে বলে জানান হাইকমিশনার। সুষ্ঠু তদন্ত না করে, মামলা দেয়া গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব বিচার নিয়ম মেনে হতে হবে। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের আমলে ভিন্নমত প্রকাশের ঘটনায় করা মামলা, প্রত্যাহার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন ভলকার তুর্ক।
সম্পূরক প্রশ্নে তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার বিষয়ে তিনি সতর্ক প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিচার প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে দেশীয় আইন এবং আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস বা স্ট্যান্ডার্ড ফলো করা জরুরি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বেআইনি হত্যাকাণ্ড রোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সিরিজ বৈঠক করেন তিনি। সেই তালিকায় ছিলেন- সেসময় সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন বিষয়ে ভলকার তুর্ক বলেন, ওই আন্দোলনে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দেখতে চায় জাতিসংঘ। এক্ষেত্রে শিশু এবং আন্দোলনকারীদের হত্যার বিচার অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তাছাড়া মব জাস্টিসের নামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডেরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তুর্ক বলেন, অপরাধ বা গণপিটুনিতে হত্যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঘটনার কঠোর তদন্ত প্রয়োজন। এ সময় গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় পুলিশ হত্যাসহ অন্যান্য হত্যার দায় মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচার হওয়া উচিত। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, আইসিটি আইনের সংশোধনীর প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।