Saturday, December 14, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদাওয়াসম্পদ-স্বজন সেদিন কাজে আসবে না

সম্পদ-স্বজন সেদিন কাজে আসবে না

সন্ধ্যার পর পর থালার মতো বড় চাঁদ উঠেছে আকাশে। যাত্রাবাড়ী মোড়ে জ্যামে বসে আছি। হর্নের শব্দে কানে তালা লেগে গেছে। শরীর ঘামে ভেজা। মেজাজ খিটখিটে। এমন সময় চোখ চলে গেল দূর আকাশে। আজ ভরা পূর্ণিমা। আল্লাহর কী অপার নেয়ামত চাঁদ। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। জ্যাম ছেড়ে দিলেও চোখ সরে না চাঁদ থেকে। গাড়ি চলছে। ফ্লাইওভার- বড় বড় বিল্ডিং এসে চাঁদ ঢেকে ফেলছে। আবার মোড় ঘুরতেই দেখা যাচ্ছে রাশি রাশি চাঁদের হাসি। আহ! কত বছর পর চোখ জুড়িয়ে চাঁদ দেখছি নিজেও বলতে পারব না।

বাসায় এসেছি কিন্তু চাঁদের মায়াবী রূপ ভুলতে পারছি না। প্রেয়সীর সোহাগ, সন্তানের আদর, মায়ের ভালোবাসা কোনো কিছুই আজ আমাকে শান্ত করতে পারছে না। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে চুপি চুপি ছাদে চলে গেলাম। খোলা আকাশের নিচে আমি আর চাঁদ। আজ আমার কী হলো! কেন মায়াবি চাঁদ এমন করে টানছে আমায়। কেন মন উদাস হয়ে যাচ্ছে বারবার। জীবন সমুদ্রে অতীতের কোনো ঢেউ কি আছড়ে পড়ছে? পেছনের ফেলে আসা কোনো প্রিয়জন-বন্ধু কি মনের আকাশে মেঘ জমিয়েছে? আমি জানি না! আমার কিছু ভালো লাগে না!মনে পড়ে গেল ছোটবেলার বন্ধু আনিসের কথা। একসঙ্গেই পড়তাম আমরা। সে কী দোস্তি ছিল! সবাই খুব ঈর্ষা করত। বলত, এমন বন্ধুত্ব কখনো দেখেনি আগে। এ বন্ধন কখনো ছুটবে না পরে। আর সব বন্ধুর মতো আমরাও ক্লাসে একসঙ্গে বসতাম। যে আগে আসত সে বেঞ্চে বই রেখে জায়গা রেখে দিত। তবে ক্লাসে কখনো দুষ্টুমি করতাম না। সব সময় চেষ্টা থাকত প্রথম বেঞ্চে বসা। একে একে অনেক বছর একসঙ্গে কাটিয়ে দিই। কত হাসিকান্নার সাক্ষী দুজন দুজনের। পড়ালেখা শেষ হলো। আমি ঢাকায় চলে এলাম। বন্ধু চট্টগ্রামে আস্তানা গেড়েছে। কী এক ব্যস্ততার দেয়াল দুই যুগের বেশি সময় আমাদের দেখা করতে দেয় না। কী এক বাস্তবতা আমাদের সেই সোনালি অতীতে ফিরতে দেয় না। মায়াবী চাঁদ আজ মনে করিয়ে দিল আনিসকে। প্রিয়তম বন্ধুকে। বন্ধু মানেই বিশেষ বন্ধন। আপনজনের চেয়েও একটু বেশি। ভালোবাসার দাবি বন্ধুর কাছে। বন্ধু অনেক রকমই হয়। আমাদের জীবনের বেশির ভাগ বন্ধুই সুসময়ের। তবে হাতে গোনা এক-দুইজন থাকে দুঃসময়ের বন্ধু। বিপদে আপদে যে এগিয়ে আসে সবার আগে। দুনিয়ায় দুঃসময়ে বন্ধু পাওয়া গেলেও কেয়ামতের দিন কোনো বন্ধু পাওয়া যাবে না বলে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সবাইকে বিচারদিনের মুখোমুখি হতে হবে। সেদিন কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু বন্ধুর কাজে আসবে না। উপকার করতে পারবে না এক বন্ধু আরেক বন্ধুর’ (সুরা দোখান, আয়াত : ৪০-৪১)।

হায়! দুনিয়াতে কত বন্ধনেই না জড়ালাম। কতজনকেই কত আশ্বাস দিলাম। আশ্বাস পেলাম কত সুহৃদের থেকে। প্রয়োজনে তাদের স্মরণ করলে উল্টো কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে হাসিমুখে বারবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কেয়ামতের কঠিন দিনে তারা কেউই আমার কোনো উপকার করতে পারবে না। আমিও পারব না তাদের কারও কোনো উপকার করতে। আল্লাহ কত সহজ ভাষায় বলেছেন, ‘হে মানুষ! সেদিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে ভেবে দেখো-বাবা ছেলের উপকার করতে পারবে না। ছেলে বাবার উপকার করতে পারবে না।’ (সুরা লোকমান-৩৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একজন আল্লাহর অলি লিখেছেন, ‘বাবা-ছেলে বলে আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন তোমার সবচেয়ে আপনজনই তোমার উপকারে আসবে না। বন্ধু-সহকর্মী-অংশীদারের কথা তো উল্লেখযোগ্যই নয়।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ আরও খোলাখুলি বলেছেন, ‘কেয়ামতের কঠিন দিনে মানুষ বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী-পুত্র থেকে পালিয়ে যাবে। সেদিন সবার অবস্থা এত ভয়াবহ হবে যে নিজেকে ছাড়া আর কোনো দিকে তাকানোরও সময় হবে না।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ৩৩-৪১)। তাহলে উপায়? সেটাও বলে দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া থেকে জানা যায়, বিশুদ্ধ কলব ছাড়া আর কিছু সেদিন আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ইবরাহিম (আ.) মোনাজাতে বলেন, ‘ওগো আল্লাহ! কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে আমাকে অপমান কর না। সেদিন অর্থসম্পদ, বন্ধু-স্বজন কিছুই কাজে আসবে না। কাজে আসবে কেবল বিশুদ্ধ কলব’ (সুরা শোয়ারা-৮৮-৯০)।

রাত অনেক হয়েছে। কেয়ামতের একাকী মুহূর্তের কথা মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। এত সম্পর্ক এত সম্পদ কিছুই কাজে আসবে না? গোনাহগারের জন্য কোনো আশার আলোই নেই? হতাশার কালো মেঘ মনের আকাশে আরও জেঁকে বসেছে। মনে পড়ে গেল সুরা তোহার ১০৯ নম্বর আয়াত। এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, সে ছাড়া সেদিন কেউ সুপারিশ করতে পারবে না।’ এ আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিরগণ বলেছেন, কেয়ামতের দিন কোনো সম্পদ কাজে আসবে না; তবে যে সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করা হয়েছে তা বান্দার পক্ষে দাঁড়াবে। সেদিন কোনো সম্পর্ক কাজে আসবে না, তবে নেক সন্তান বান্দার নাজাতের কারণ হবে। সেদিন কারও সুপারিশ কাজে আসবে না, তবে নবী-অলি ও ফেরেশতারা গোনাহগার মুমিনের জন্য আল্লাহর অনুমতি নিয়ে সুপারিশ করতে পারবেন। তাই বাঁচতে হলে হে মন আমার! নেক আমল কর। নেক লোকের সঙ্গী হও। কলিজা ভরে নবীকে ভালোবাসো। বিশুদ্ধ কলব নিয়ে প্রভুর সামনে দাঁড়াও। শুধু নেক আমল দিয়ে বাঁচার সুযোগ তোমার নেই!

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

বিডি প্রতিদিন/এমআই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

6 − five =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য