সাহাবায়ে কেরাম কি হক্বের মাপকাঠি?
——————————————
সত্যের মাপকাঠি কথাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ।
১.
সাহাবায়ে কেরাম ব্যক্তি হিসেবে মা’সূম বা নিষ্পাপ নন, কেউ তা বলেও না। কিন্তু সামষ্টিকভাবে তারা পথভ্রষ্টতা থেকে পবিত্র ও মুক্ত। হক্ব হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি মা’সূম হওয়া শর্ত নয়, আদালাত বা ন্যায়পরায়নতাই বিবেচ্য।
২.
সাহাবাদের ঐক্যবদ্ধ মত অবশ্যই হকের মাপকাঠি, শরীয়তের দলীল। সকল আলেম, ফক্বীহ বা উসূলীদের কাছেই তাদের ইজমা ‘হুজ্জত’ বা গ্রহণীয় দলীল, এতে সন্দেহ নেই। আল্লাহ বলেন,
فإن آمنوا بمثل ما آمنتم به فقد اهتدوا.
(সূরা বাক্বারা: ১৩৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
أصحابي أمنة لأمتي فإذا ذهب أصحابي أتى أمتي ما يوعدون
(মুসলিম: ২৫৩১)
৩.
তাদের ইখতেলাফ হলে সেক্ষেত্রেও হক্ব তাদের মতের বাইরে নেই, এক্ষেত্রেও নতুন মত নেওয়া জায়েয নেই। সে অর্থে তাদের ইখতেলাফও অন্য মত হক্ব না হওয়ার মাপকাঠি।
৪.
আর তাদের ব্যক্তির মত (قول الصحابي) -ও কিয়াস ও পরবর্তীদের কথার বিপরীতে শরীয়তের দলীল বা হুজ্জাত হিসেবে সকল ইমামের নিকট মাপকাঠি হিসেবে গণ্য। যেমন ইমাম আবু হানীফা বলেন, ‘যদি কোনো কিছু আল্লাহর কিতাব ও হাদীসে না পাই তবে সাহাবীর বক্তব্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করি, তাদের কথা থাকলে তা ত্যাগ করে অন্যকারও মতে যাই না। আর যদি কোনো বক্তব্য (সাহাবীদের পরবর্তী স্তরে কেউ যেমন) ইব্রাহীম, শাবী, হাসান, ইবনে সীরীন, আতা, সাঈদ ইবনে জুবাইর এর মত হয়, তবে তারাও ইজতেহাদ করেছেন আমিও ইজতেহাদ করি।’ (ইবনে আব্দিল বার, আল ইন্তেকা ১৪৩, ১৪৪)।
৫.
তাই ঢালাওভাবে ‘হকের মাপকাঠি নয়’ বললে দুনিয়াতে হক্ব পাওয়া যাবে না। আমাদের শরীয়তের উৎস কুরআন ও হাদীস, আর তা বোঝার হক্ব উপায় হলো সাহাবায়ে কেরামের বুঝ। এই বুঝকেই বলা হয় ‘সালাফে সালেহীনের বুঝ বা মানহাজ’। এর বাইরে গেলেই বিদআত বিপর্যয় আরম্ভ হবে, কুরআন সুন্নাহর নতুন নতুন ব্যাখ্যা আবিষ্কার হবে, হচ্ছেও তাই।
খারেজী, শিয়া, মুতাযিলা, জাবরিয়া, ক্বাদরিয়া, জাহমিয়া প্রভৃতি প্রতিটি বিভ্রান্ত দলের সূচনা হয়েছিল সাহাবীদের বুঝ বাদ দিয়ে নিজের মত দিয়ে কুরআন-হাদীস বুঝতে গিয়ে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইসলামে যত বিভ্রান্তি হবে সবকিছুর মূল সাহাবায়ে কেরামের বুঝকে গুরুত্ব ও প্রাধান্য না দেয়া, তাদের মতকে সাধারণ মত মনে করা।
একটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ শব্দ ডিফেন্ড করতে গিয়ে শরীয়তের দলীল ও হুজ্জত কী এবং কী পদ্ধতিতে কুরআন-সুন্নাহ বুঝব তা-ই গুরুত্বহীন ও লঘু করে ফেলা হচ্ছে, যা দু্ঃখজনক।