Sunday, December 10, 2023

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরসিরিয়া সংকটের এক দশক ও চাওয়া-পাওয়া

সিরিয়া সংকটের এক দশক ও চাওয়া-পাওয়া

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, তখনো মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সিরিয়ার কোথাও না কোথাও কোনো শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আরব বসন্তের হাওয়ায় গণতন্ত্রের আমেজ বয়ে আনার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরীয়রা যে আন্দোলন সংগঠিত করেছিল, তা বিগত দশ বছরে মৃত্যুভয় আর পনেরো লাখ বিকলাঙ্গের আর্তনাদের মাধ্যমে সিরিয়ার বাতাসকে ভারী করে তুলছে প্রতিনিয়ত। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট সৃষ্টিকারী সিরীয় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে তিন লাখ ছিয়াশি হাজার মানুষ, বাস্তুচ্যুত হয়েছে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক তথা প্রায় ১২ মিলিয়ন। বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় বাস্তুচ্যুতি আর দেখেনি বিশ্ব। ১৪টি প্রদেশের সমন্বয়ে ৭২ হাজার বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত সিরিয়া ১৯৪৬ সালে ফরাসিদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি এর বাসিন্দারা।

মধ্যপ্রাচ্যে সিরীয় গৃহযুদ্ধের আগে অত্র অঞ্চলজুড়ে ছিল মার্কিনিদের একচ্ছত্র আধিপত্য। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ায় সরকার পক্ষের হয়ে আইএস দমনের অজুহাতে বিমান হামলার মাধ্যমে রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সর্ববৃহৎ হস্তক্ষেপের সূচনা করে। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে রাশিয়া তার সামরিক উপদেষ্টা এবং স্পেশাল অপারেশন ফোর্সকেও সিরিয়ায় মোতায়েন করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বড় একটি জয় পায়। তারপর থেকে এফএসএ নিয়ন্ত্রিত এলাকার সংখ্যা কমতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় সিরীয় পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে, দোদুল্যমান আসাদ সরকারের ক্ষমতার আসন স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি বিদ্রোহীদের বিপক্ষে আসাদ সরকারের অবস্থানও ক্রমশ শক্তিশালী হতে শুরু করে।

আসাদ সরকারের ক্ষমতা সুসংহত করার লক্ষ্যে রাশিয়া এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় ৫ হাজার সৈন্য ও কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান প্রেরণ করেছে। এর মাধ্যমে তারা সিরিয়ার তারতাস বন্দর ও ভূমধ্যসাগরে নিজেদের নৌবহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এভাবে খুব সামান্য বিনিয়োগের মাধ্যমেই রাশিয়া সিরিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতেও সক্ষম হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বাঙ্গনে তারা একটি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের ফলেই।

তবে গত কয়েক বছরে সিরিয়া সংকট সমাধানে রাশিয়ার উদ্যোগে যতটুকু আশার আলো দেখেছিল সিরীয়রা, তা যেন আজ পুনরায় ম্রিয়মাণ হতে চলেছে মার্কিন নয়া মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রভাবে। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া-তুরস্ক-ইরান-কাতারের বৈঠকে সিরিয়া সংকট সমাধানে যেসব অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছিল, তাতে পানি ঢেলে দিয়ে নয়া যুদ্ধনীতি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বারাক ওবামার শাসনামলে যুদ্ধনীতি প্রণয়নে বাইডেনই বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন এবং বর্তমানেও তৎকালীন যুদ্ধপ্রিয় ব্যক্তিদেরই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক আসনে বসানো হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও এরবিল, সুলায়মানিয়া, হাসাকেহ, কোবানি ও মানবিজ এলাকায় আতশবাজি ফুটিয়ে বাইডেনের জয়ে উল্লাস করেছিল। তারা মূলত বাইডেনের জয়কে ওবামা প্রশাসনের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন এবং ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবৃত্তের জয় হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন তাদের কখনো বন্ধু হিসেবে দেখেনি, বরং সিরিয়ায় মার্কিন পেট্রোল কোম্পানির পাহারাদার হিসেবে দেখেছিল।

বর্তমানে সিরিয়ার ৭০ শতাংশের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার। সরকারের এ সফলতার পেছনে রয়েছে রাশিয়া, ইরান ও হিজবুল্লার সহায়তা। কিন্তু এই গৃহযুদ্ধ দেশটির জীবনব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এএফপি বলছে, সিরিয়ার পাউন্ড এক দশকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য হারিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সিরিয়ার শেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলেছেন, ‘রাশিয়া মিত্র হিসেবে যে সিরিয়াকে পেয়েছে তা অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল এবং এ ব্যাপারে কিছু করার উপায় তাদের নেই। একটা বিরাট মৃত পাখির মতো সিরিয়া রাশিয়ার গলায় পেঁচিয়ে আছে। আসাদ সরকারের বন্ধু বা শত্রু কারোরই হাতে এখন এমন শত শত কোটি টাকা নেই যা দিয়ে সিরিয়াকে আবার গড়ে তোলা যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া যুদ্ধের আর্থিক ক্ষতি ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এই যুদ্ধ যদি এখনই শেষ হয়, তাহলেও ২০৩৫ সাল নাগাদ তার ক্ষতির মূল্য আরো ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হবে। এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি দেখে তাকে একটি ‘সীমাহীন যুদ্ধ’ (এন্ডলেস ওয়ার) বলে অভিহিত করেছেন উইন উইদাউট ওয়ার সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর স্টিফেন মাইলস। এমতাবস্থায় বিবদমান শক্তিগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে সংকট নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সব পক্ষকে অনতিবিলম্বে আলোচনার টেবিলে বসাতে সর্বাধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে জাতিসংঘকেই, যা মানবতার ইতিহাসের এই লজ্জাজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়ে কোটি মানুষকে নতুন জীবন দান করতে পারে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

5 + 17 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য