ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত ছাত্রী তিথী সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তিথী সরকার গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল।
তবে তিথী সরকারকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি দাবি করেছে যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ‘আত্মগোপনে থেকে গ্রেফতার/অপহরণের নাটক সাজাচ্ছিলেন’।
সিআইডি তিথী সরকারের ছবিও প্রকাশ করেছে। তবে তিথী সরকারের পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ নাকচ করেছেন।
সুইডেন-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে যে তিথী সরকারকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গোপনে বন্দী করে রেখেছিল বলে অনেকে সন্দেহ করছেন।
পুলিশ বলছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সাময়িকভাবে বহিস্কৃত শিক্ষার্থী তিথী সরকারকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে। নরসিংদীর মাধবদী থেকে তাকে আটক করা হয় বলে সিআইডি জানায়।
তিথী সরকারের বিরুদ্ধে ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে সিআইডি – ওই মামলাতেই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এবং ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে তিথী সরকার নিখোঁজ ছিলেন বলে অক্টোবরের ২৭ তারিখ পল্লবী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল তিথির পরিবার।
কী ঘটেছিল?
তিথী সরকার বিভিন্ন সময় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট, কমেন্ট ও শেয়ার করেছিলেন বলে গত ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এর ধারাবাহিকতায় ২৬ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিথীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে অক্টোবরের ২৫ তারিখ থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিল তার পরিবার।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, গত ২৭শে অক্টোবর সকালে তিথি সরকারের বোন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “তার বোন জানিয়েছিলেন যে ২৫ অক্টোবর সকালে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিথি সরকারের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
তিথী সরকার নিজে ২৩ অক্টোবর নিজের ‘ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক’ হয়েছে এই অভিযোগ করে ঢাকার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি দায়ের করেছিলেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী।
তবে সিআইডি পুলিশ তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে যে তিথী সরকার ‘নিজেকে নিরাপদ রাখতে’ নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে ২৩ অক্টোবর পল্লবী থানায় মামলা করেন।
তিনি ‘স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে’ থেকে ‘অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই’ পাওয়ার কৌশল হিসেবে নরসিংদীতে আত্মগোপনে ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশের বিবৃতিতে।
তবে তিথী সরকারের বোন স্মৃতি সরকার জানান, ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি জানতে পারার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বোন সাধারণ ডায়রি করেন।
স্মৃতি সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে যখন সে বুঝতে পারে, তখন আমার সাথে পরামর্শ করে তার কিছুক্ষণের মধ্যেই থানায় জিডি করতে যায়।”
স্মৃতি সরকার বলছেন, তিথী আতঙ্কিত ছিলেন। তবে ‘অপহরণের নাটক সাজানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে পালিয়ে ছিলেন না’ বলে দাবি করেন তিনি।
নেত্র নিউজের খবরে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর হাতে কেউ দীর্ঘদিন গোপনে বন্দী থাকার ঘটনা বাংলাদেশে “অস্বাভাবিক” নয়, তবে নারীদের ক্ষেত্রে এটা বেশ বিরল।
সূত্র : বিবিসি