মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় কাজ করেন রাজমিস্ত্রীর, রাতে নাইট গার্ডের ডিউটি করেন মাছের ঘেরে। সামান্য আয়ে সংসার চালানো হয়ে পড়ে কস্ট সাধ্য। কোন রকম ছিল কুঁড়েঘর। সেই ঘরে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কোন রকমে থাকতেন আসলাম হোসেন। হঠাৎ করে সেখানে গড়ে ওঠে পাকা দালান। একটি গরুর খামারও করেছেন আসলাম হোসেন। গ্রামবাসীর চোখ পড়ে এই পরিবারটির উপর। হঠাৎ করে আলাদীনের চেরাগ হাতে পেলো কি না তা নিয়ে ভাবতে থাকে গ্রামের কয়েকজন সচেতন মানুষ।
এরই মধ্যে গত ২১ ডিসেম্বর যশোরে বিজিবির হাতে ২০পিস (২.৩৩৪ কেজি) স্বর্ণের বারসহ আসলামের ছেলে ইমাদুল আটক হওয়ার পর গ্রামবাসী জানতে পারে পাকাবাড়ি ও গরুর খামারের রহস্য। বেনাপোল পোর্ট থানার কাগজপুকুর গ্রামের আসলাম হোসেন ও তার ছেলে ইমাদুল কাজের ফাঁকে স্বর্ণ চোরাচালানী গডফাদারদের স্বর্ণ বহন করে সীমান্তে নিয়ে যেতো তারা।
অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হতে দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে পরিবারটি। আটক ইমাদুল বিজিবির কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাতেও উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ পাচারের কখা। ইমাদুল এর আগে তিন দফা সোনা পাচার করেছে বলে স্বীকার করেন। তবে নিজেকে বহনকারী হিসেবে দাবি করেছেন।
ওই গ্রামের আলী আজগর নামে এক ব্যক্তি বলেন, আসলাম ও তার ছেলে ইমাদুল হোসেন বেশ কিছুদিন যাবত অবৈধ কোন পেশার সাথে জড়িত হয়েছে বলে আমরা ধারনা করছিলাম। হঠাৎ দেখছি তাদের কুঁড়েঘর থেকে পাকাবাড়ির কাজ শুরু হয়েছে। পিতা-পুত্রের এ কাজে সহযোগিতা করে তার মা ফরিদা বেগম।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ইমাদুল যশোরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বর্ণ এনে পিতার কাছে দেয়। আর পিতা আসলাম মাছের ঘেরে চাকরির সুবাদে স্বর্ণ নিয়ে বাহাদুরপুর, শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন হাত বদল করে ভারতে পাচার করে। গ্রামের লোক মুখে গুঞ্জন শুরু হয়েছে চোরের ১০ দিন গৃহস্থের ১ দিন। ঠিক সেই কাজটি হয়েছে এই পরিবারটির। আসলাম হোসেন যে বাড়ি নির্মাণ করছেন সেটা রাজমিস্ত্রী ও মাছের ঘেরের নাইট গার্ডের চাকরি করে করা সম্ভব না। স্বর্ণ পাচারের পাশাপাশি ফেনসিডিল, ইয়াবারও ব্যবসা করে থাকে তারা।
ইমাদুল এর মা ফরিদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে ফাঁসনো হয়েছে। আমরা এ কাজ করব কেন? সে আগে বিএসআরএম এ ফোরম্যান হিসাবে কাজ করত। কেন তাকে ফাঁসানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। ছেলে আটক হওয়ার পর থেকে পিতা গা ঢাকা দেয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
যশোরের ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সেলিম রেজা জানান, ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সোনা চোরাচালানীদের একটি চক্র রাজধানী ঢাকা থেকে সোনার বার নিয়ে যশোরে আসে। ওই চক্রের বেনাপোল এলাকার সদস্য ইমাদুল যশোরে এসে তাদের কাছ থেকে সোনার ২০টি বার বুঝে নেয়। যশোর শহরের একটি ঘরে বসে সোনার বার হাতবদল করা হয়।
ইমাদুল বিশেষ কায়দায় পায়ের উরুর সাথে বেঁধে রাখে দুটি সোনার বার। এরপর সে রুট পরিবর্তন করে পৌর পার্কের সামনে হয়ে যাওয়ার সময় বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। পরে তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে সোনার ২০টি বার উদ্ধার করা হয়। এই সোনার বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমাদুল এর আগে তিনদফা সোনা পাচার করেছে বলে স্বীকার করেন। তবে নিজেকে বহনকারী হিসেবে দাবি করেছেন।
পিডিএসও/এসএম শামীম