হিজরির প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে ব্যাপকভাবে হাদিস চর্চা, বর্ণনা ও সংকলন শুরু হয় এবং ধর্মীয় প্রয়োজনে সেগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ঘরে-বাইরে ব্যাপক অনুসন্ধান করে হাদিস সংকলন ও বিন্যস্ত করা হয়। পুরুষদের পাশাপাশি নারী সাহাবি ও তাবেঈ এবং অন্য মুসলিম নারীরা নিজ নিজ পরিবারের বড়দের থেকে হাদিস বর্ণনা করে এই আমানত পৌঁছে দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় উমর বিন আবদুল আজিজ (রা.) আবু বকর বিন মুহাম্মাদ বিন হাজম (রা.)-কে উমারাহ বিনতে আবদুর রহমান আল আনসারিয়া (রা.)-এর কাছে থাকা ‘হাদিসের সংকলন’ সংগ্রহ করতে জোর তাগিদ দেন। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৮৭)
উমারাহ বিনতে আবদুর রহমান (রা.) উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এবং তাঁর বোন উম্মে হিশাম, হাবিবা বিনতে সাহল, উম্মে হাবিবা ও হামনা বিনতে জাহাশ (রা.) প্রমুখ নারী সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে তাঁর পুত্র আবুল রিজাল, তাঁর ভাই মুহাম্মদ বিন আবদুর রহমান, তাঁর নাতি হারিসা বিন আবুল রিজাল, তাঁর উভয় ভাগনে ইয়াহইয়া বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান এবং আবু বকর বিন মুহাম্মদ বিন আবদুর রহমান ও তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত)ইমাম হাসান বসরি (রহ.)-এর মা খাইরা তাঁর মুনিব ও মালিক উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর দুই পুত্র হাসান বসরি ও সাঈদ বসরি (রহ.) তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তাহজিবুত তাহজিব, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৪১৬)
আরও পড়ুন
সাফিয়্যাহ বিনতে উলাইবা আল আনবারী (রহ.) তাঁর পিতামহ হারমালাহ বিন আবদুল্লাহ আল আনবারী (রা.) এবং তাঁর মাতামহী কাইলা বিনতে মাখজুমা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৪১২, তাহজিবুল কামাল, খণ্ড-৩৫, পৃষ্ঠা-২৯০)
হাকিমা বিনতে উমাইমা তাঁর মা উমাইমা বিনতে রাফিকাহ থেকে এবং তাঁর থেকে তাঁর পরিবারের লোকজন হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪১১)
আসমা বিনতে ইয়াজিদ তাঁর চাচাতো ভাই আনাস থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭৯)
হাবিবা বিনতে মায়সারা থেকে তাঁর দাস আতা বিন আবু রাবাহ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তাহজিবুল কামাল : ৩৫/১৫০)
হাকিমা ইবনে উমাইয়া ইবনে আখনাস উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে এবং তাঁর পুত্র ইয়াহইয়া ইবনে আবু সুফিয়ান আল আখনাসি তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তাহজিবুত তাহজিব, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৪১১)
উম্মে রায়েহ রাবাব বিনতে সুলাইয়ি আদ দাব্বিয়্যাহ আল বসরিয়্যাহ তাঁর চাচা সুলাইমান বিন আমের আদ দাব্বিয়্যি (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
আর তাঁর থেকে তাঁর নাতি আবদুল্লাহ ইবনে হাসসান আল আনবারী বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪৩১)
রায়েতা বিনতে মুসলিম তাঁর পিতা মুসলিম থেকে এবং তাঁর থেকে তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ বিন হারিস আবজা আল মাক্কি হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪১৭)
ফাতিমা বিনতে হুসাইন বিন আলী তাঁর পিতা হুসাইন, ভাই আলী বিন হুসাইন (জয়নুল আবিদিন), ফুফু জয়নাব বিনতে আলী (রা.) এবং দাদি ফাতিমাতুজ জুহরা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে তাঁর সন্তানদের মধ্যে আবদুল্লাহ, ইব্রাহিম ও উম্মে জাফর বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১৮৬)
উম্মে ইয়াহইয়া হামিদা বিনতে উবাইদ বিন রিফাআ আল আনসারিয়্যাহ তাঁর খালা কাবশা বিনতে কাব বিন মালিক থেকে এবং তাঁর স্বামী ইসহাক ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবু তালহা এবং তাঁর পুত্র ইয়াহইয়া ইবনে ইসহাক তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
আর তাঁর থেকে হাফসা বিনতে শিরিন বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪১৭)
কাবশা বিনতে আবু বাকরাহ আস সাকাফিয়াহ আল বসরিয়্যাহ তাঁর পিতা থেকে এবং তাঁর ভাতিজা বাক্কার বিন আবদুল আজিজ ইবনে আবু বাকরাহ তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪৪৯)
জাবরা বিনতে মুহাম্মদ বিন সাবিত বিন সিবা তাঁর পিতা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর স্বামী আবদুর রহমান বিন আবু বকর বিন উবাইদুল্লাহ আত তাইমি এবং অন্যরা তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। (আল ইকমাল লি ইবনে মাকুলা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯)
তামান্না বিনতে উমর বিন ইব্রাহিম বিন আল হামিরি আত তাইবি আবু মুজাফফর আলী বিন আহমদ আল কারখি থেকে এবং তাঁর থেকে তাঁর দুই পুত্র আহমদ বিন আবু বকর ও তামিম বিন আহমদ বিন আবু বকর হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তাকমিলাতুল ইকমাল, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৫১)
হাবাবা নামক মুহাদ্দিস মালিক বিন দায়গামের খালা। মালিক তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(আল ইকমাল লি ইবনে মাকুলা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৭২)
জামালের যুদ্ধে উম্মে হাবাবা বিনতে হাইয়ান উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাই মুকাতিল ইবনে হাইয়ান তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত)
হাবাবা বসরিয়া তাঁর মা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত)
হুসাইনা বিনতে মারুর বিন সুওয়াইদ তাঁর পিতার কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭১)
হাকিমা তাঁর স্বামী ইয়ালা ইবনে মাররাহ থেকে এবং তাঁর থেকে উমর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়ালা এবং উসমান ইবনে মুগিরা আল-আশা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৯৪)
হাকিমা নামের একজন নারী তাবেঈ আয়েশা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর কন্যা উম্মে আসেম তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত)
হুমায়দা বিনতে আবু কাসির তাঁর মা থেকে এবং আবদুর রহমান বিন ইসহাক আল কুফি তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৫৩৭)
মুনিয়া বিনতে উবাইদ বিন আবু বারজাহ তাঁর পিতামহী বা মাতামহী থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(তাহজিবুল কামাল, খণ্ড-৩৫, পৃষ্ঠা-৩১১)
বাররাহ বিনতে রাফি হলেন উম্মে সালামাহ (রা.)-এর দাসী, তিনি জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) থেকে এবং তাঁর থেকে তাঁর ভাই আবদুল্লাহ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(আল ইকমাল লি ইবনে মাকুলা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৫৩)
আরও পড়ুন
তাহিয়্যাহ বিনতে সুলাইমান বিন উমর আল ওয়াসিতি তাঁর চাচা মুহাম্মদ বিন উমর আল ওয়াসিতি থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং ইয়াহইয়া বিন আলী আল হাজরামি তাঁর থেকে হাদিস শুনেছেন। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৪৯৭)
উম্মে জানুব বিনতে নুমাইলা তাঁর মা সুওয়াইদা বিনতে জাবির থেকে এবং তাঁর থেকে মুহাম্মদ বিন বাশারের শিক্ষক আবদুল হামিদ বিন আবদুল ওয়াহিদ হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তাহজিবুল কামাল, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২১৯)
বুরদাহ বিনতে মুসা বিন নাজিহ বাহলিয়া তাঁর মা তুহাইয়াহ বিনতে জাওন থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(আল ইকমাল লি ইবনে মাকুলা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৩৫)
তুহাইয়াহ বিনতে জাওন তাঁর মা হুনাইদাহ বিনতে ইয়াসির থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত)
উম্মে মুহাম্মদ আমিনা বিনতে ইনান বিন হাসান তাঁর স্বামী শায়খ আবুল আব্বাস আল কাস্তালানি এবং পুত্র আমিন উদ্দিন আল কাস্তালানিকে হাদিস বর্ণনার অনুমতি দিয়েছিলেন। (আল ইকদুস সামিন ফি তারিখিল বালাদিল আমিন, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-১৮৪)
উম্মে আবদুর রহমান আল জুরজানি থেকে তাঁর স্বামী শায়খ মুহাম্মাদ বিন আলী আল জুরজানি হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তারিখে জুরজান, পৃষ্ঠা-৪৬৮)
উম্মে উমর বিনতে হাসসান বাগদাদি তাঁর পিতা আবুল গুসান হাসসান বিন জায়েদ এবং তাঁর স্বামী সাঈদ বিন ইয়াহইয়া বিন কাইস থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (তারিখে বাগদাদ : ১৪/৪৩৩)
খাদিজা বিনতে কাজী শিহাবুদ্দিন আহমদ আল মাক্কি তাঁর মাতামহী হাসানা বিনতে মুহাম্মদ বিন কামিলের কাছ থেকে হাদিস শ্রবণ করেছেন। (আল ইকদুস সামিন ফি তারিখিল বালাদিল আমিন, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৫৬)
আরও পড়ুন
জয়নব বিনতে আবদুর রহমান আল জুরজানি তাঁর পিতামহ শায়খ মুহাম্মদ বিন মারুফ আল জারজানির সংকলিত হাদিস সমগ্র থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন। (তারিখে জুরজান, পৃষ্ঠা-৪৬৩)
উপরিউক্ত উদাহরণ থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে প্রথম শতাব্দী ও পরবর্তী যুগে কীভাবে মুসলিম নারীরা বংশীয়ভাবে হাদিস ও আছার প্রচার ও প্রসার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই নারী বর্ণনাকারী ও মুহাদ্দিসরা তাঁদের ঘরকে দারুল হাদিস (হাদিস চর্চার কেন্দ্র) ও দারুল ইলম (শিক্ষালয়) বানিয়েছেন।
লেখক : বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, আলেম ও লেখক
‘বানাতে ইসলাম কি দ্বিনি ওয়া ইলমি খিদমাত’ গ্রন্থ থেকে অনূদিত।
বিডি প্রতিদিন/ইই