Friday, November 7, 2025
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

Homeবিবিধজেনেনিন!হায়দরাবাদে মুসলিম শাসনের স্মৃতি

হায়দরাবাদে মুসলিম শাসনের স্মৃতি

ভারতের বুকে মুসলিম সালতানাত হায়দরাবাদের স্বাধীন অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটে ১৯৪৮ সালে। হায়দরাবাদকে বর্তমান তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

হায়দরাবাদের রাষ্ট্রভাষা উর্দু, জাতীয় প্রাণী কৃষ্ণসার, জাতীয় পাখি ভারতীয় বেলন, জাতীয় গাছ নিম, জাতীয় ফুল নীল ওয়াটার লিলি। হায়দরাবাদের নিজস্ব পতাকার উপরাংশে আল আজমাতুলিল্লাহ অর্থাৎ ‘সব মহিমা আল্লাহর জন্য’, নিম্নাংশে ইয়া উসমান অর্থাৎ ‘হে উসমান’, মাঝখানে লেখা ‘নিজাম-উল-মুলক আসিফ জাহ’।হায়দরাবাদের বাসিন্দারা ‘মুলকি’ (দেশবাসী) নামে পরিচিত। ১৯০১ সালে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হায়দরাবাদের গড় আয় ছিল চার কোটি ৭১ লাখ রুপি। হায়দরাবাদের ছিল স্টেট ব্যাংক। ব্রিটিশ ভারতে শুধু ‘হায়দরাবাদি রুপি’ নামে ছিল নিজস্ব মুদ্রা।

ছিল হাইকোর্ট, উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বেগমপেট বিমানবন্দর ও টার্মিনাল বিল্ডিং, রেলস্টেশন, পৃথক বিদ্যুৎ প্লান্ট, বিভিন্ন বৃহৎ শিল্প, উসমানিয়া হাসপাতাল, ডাকটিকিট এবং রাজ্যজুড়ে অসংখ্য স্কুল-কলেজ।
১৩৪৭ সালে আলাউদ্দিন হাসান বাহমান শাহর নেতৃত্বে হায়দরাবাদ স্বাধীনতা অর্জনের পর শুরু হয় বাহমানি বংশের রাজত্ব।

১৭২৪ সালে হায়দরাবাদ কামারউদ্দিন খান নিজামুল মুলক আসিফ জাহর নেতৃত্বে আবারও স্বাধীনতা অর্জন করে। তিনিই আসিফ জাহি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।

১৭২৪ সালে মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ প্রদত্ত উপাধি ‘আসিফ জাহ’ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি শাসনকার্য শুরু করেন। তাঁরই উপাধি নিজাম উল-মুলক, তাঁর পদমর্যাদা ‘হায়দরাবাদের নিজাম’।

হায়দরাবাদ ১৭২৪ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত নিজামদের শাসনাধীনে ছিল। পরে ব্রিটিশদের অধীনে দেশীয় রাজ্যে পরিণত হয়। হায়দরাবাদের নিজাম সরকার নয়াদিল্লিতে দূতাবাস স্থাপন করেছিলেন।

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার সময় ভারত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়, যথা—ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলো। দেশীয় রাজ্য হলো ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত মৌখিকভাবে সার্বভৌম। রাজ্যগুলো ব্রিটিশ আধিপত্য মেনে স্থানীয় শাসকের অধীনে পরিচালিত হতো। স্বাধীনতার সময় ভারতজুড়ে ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্য ছিল। এগুলোর মধ্যে চারটি বৃহত্তম, যথা—হায়দরাবাদ, মহীশূর, বরোদা, জম্মু কাশ্মীর।

ব্রিটিশরা দেশীয় রাজ্যের শাসকদের ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান অথবা স্বতন্ত্র থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রেখে যায়।

হায়দরাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান ১৯১১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১১ জুন নিজাম গণপরিষদে পাকিস্তান বা ভারতের যেকোনো একটিতেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। দেশটি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদনও জানিয়েছিল।

অথচ ভারতীয় ইউনিয়নের মাঝ বরাবর অবস্থিত এবং তার বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারণে ভারত হায়দরাবাদের দখল নেয়। ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দরাবাদে চতুর্মুখী আক্রমণ করে। অভিযানের নাম দেওয়া হয়, ‘অপারেশন পোলো’।

হায়দরাবাদের পক্ষ থেকে ২১ আগস্ট ১৯৪৮ ও ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ জাতিসংঘের কাছে ভারতীয় হস্তক্ষেপ বন্ধের অনুরোধ করা হলেও ফল হয়নি।

দাক্ষিণাত্য নামে পরিচিত এই মুসলিম রাষ্ট্রের শেষ সুলতান ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে ক্ষীণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন মাত্র। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় নিজামের সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। শেষ হয় আসিফ জাহি রাজবংশের সাতপুরুষের ২২৪ বছরের কর্তৃত্ব। প্রায় ছয় শ বছরের স্বাধীনতাও হারিয়ে যায় ইতিহাসের অন্ধগলিতে। স্বাধীন হায়দরাবাদের শেষ প্রধানমন্ত্রী মীর লায়েক আলীর  ‘The Tragedz of Hyderabad’ গ্রন্থে হায়দরাবাদের স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষের বেদনাবিধুর কাহিনির বর্ণনা পাওয়া যায়।

হায়দরাবাদের যুদ্ধের চরম শিক্ষণীয় দিক হলো যুগ-যুগান্তরে মুসলমানের পতন ও বিপর্যয় তার ভেতর থেকেই শুরু হয়। যুদ্ধের অবসান এত শিগগির হতো না, যদি হায়দরাবাদ বাহিনীর প্রধান সাঈদ আহমদ এল এদরুস বেঈমানি না করতেন। পলাশীর প্রান্তরের মীর জাফরের ভূমিকার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ছিলেন এল এদরুস!

বিডি প্রতিদিন/নাজিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 5 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য