টিভি নিয়ে একটি সরস লিখা আছে, ইনশা’আল্লাহ্ একদিন প্রকাশ করবো। বলছিলাম, আজ ৭১টিভি, কাল ডিবিসি, পরশু এবিসিডি, সবারই কমবেশ লেজ একই জায়গায়। ২০১১ সনের পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০.৫ ভাগ মুসলিম[i] এবং সরকারি ভাবে ঘোষিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ২ক ধারায় বলা হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। অর্থাৎ এই দেশ মুসলিম রাজ্য[ii]।
অন্য ধর্মের সাথে এই লিখার কোন সংঘাত নাই। উপরোক্ত বিষয়ে যাওয়ার আগে আমাদেরকে পরিষ্কার করে নিতে হবে আমরা কোন বিবেচনায় মুসলিম। ইসলামই মুসলিমের একমাত্র ধর্ম।
আল্লাহ্ তা’আলা সুরা বাক্কারার আয়াত ১৩১ শে উল্লেখ করেন, স্মরণ করো! তাঁর প্রভু তাকে (ইব্রাহীম) বললেন — “ইসলাম গ্রহণ করো!” তিনি বললেন — “আমি সমস্ত সৃষ্টজগতের প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।” ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহ্র কাছে মিনতি করলেন এই বলে, “আমাদের প্রভু! আর তোমার প্রতি আমাদের মুসলিম করে রেখো, আর আমাদের সন্তানসন্ততিদের থেকে তোমার প্রতি মুসলিম উম্মৎ করো, আর আমাদের উপাসনা-প্রণালী আমাদের দেখিয়ে দাও, আর আমাদের তওবা কবুল করো, নিঃসন্দেহ তুমি নিজেই তওবা কবুলকারী, অফুরন্ত ফলদাতা। মুসলিম হতে হলে কিরূপ মুসলিম হতে হবে, পড়ুন আল্লাহ্র বানী, আর অন্ধদের তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে তুমি পথ-প্রদর্শক হতে পারবে না। তুমি তো শোনাতে পার শুধু তাকে যে আমাদের বাণীসমূহ বিশ্বাস করে, ফলে তারা মুসলিম হয়। (সুরা নামল, আয়াত ৮১) আমাদের এই বলাও কিন্তু যথেষ্ট নয়, তাইতো আল্লাহ্ বলেন, আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। (সুরা বাক্কারা, আয়াত ৮) আল্লাহ্ তাদেরকে ভাল করে চেনেন, সুরা বাক্কারার আয়াত ১১ ও ১২ তে আল্লাহ্ বলেন, আর যখন তাদের বলা হলো — “দুনিয়াতে তোমরা গন্ডগোল সৃষ্টি কর না”, তারা বলে — “না তো, আমরা শান্তিকামী।” মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না। এই আয়াত দিয়ে আমি আল্লাহ্র আয়াতের যবনিকা টানছি, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১০২)
আবার পূর্বের প্রসঙ্গে চলে যাই, উপরোক্ত এই ঐশী অকাট্য বানী গুলো যদি আমরা মনে প্রানে বিশ্বাস করি এবং ধারন করি তবেই আমরা আল্লাহ্র নৈকট্য বান্দা, নতুবা নয়। টিভিতে (৭১ টিভি ও ডিবিসি) গত কয় দিন ধরে যে উদ্ভট আলোচনা চলছে, তাতে বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের মনে এই কথা বদ্ধমূল হয়েছে যে, যে বা যারা ইসলামের সঠিক সংজ্ঞাকে কলঙ্কিত করছে তারা মুসলিম নয়। এ কথা ধ্রুব সত্য যে তাদের নাম গুলো শুনতে মুসলিম নামের সাথে সামঞ্জস্য আছে বিধায় আমাদের গাত্রজ্বালা বহু গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বলে ফেললেই পারেন যে তারা মুসলিম নয়, একজন মুসলিমের মুখ থেকে এরুপ কথা নিঃসৃত হতে পারে না, পারে শুধু মুনাফেক বা কাফের থেকে। তা’হলে বিষয়টা অন্য দিকে গড়াবে। ভিন্ন মতাবলম্বী হলেও কেউই কারও ধর্মকে আঘাত করতে পারে না।
আপনারা ডক্টরেট বা অন্য উপাধি ইসলাম ধর্ম নিয়েতো পান নাই, যা নিয়ে পেয়েছেন, তার শাঁক চিবাতে থাকুন, সাধারণ জনগণের তাতে কিছু আসে যায় না। যা স্মম্নন্ধে আপনারা একেবারেই অজ্ঞ, হয় এ বিষয়ে আরও পড়ালিখা করুন বা মাথা ঘামানো ছেড়ে দিন। অযথা ঘাস কচলিয়ে তিতা করছেন কেন?
যদি তারা বলতে চায় এটা তাদের বাক স্বাধীনতা। তাও ভুল, দেখে নিন বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়, প্রকৃতপক্ষে বাক-স্বাধীনতা এমন একটা অধিকার, যা মানুষকে মানুষ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার অধিকার দেয়। সমাজে অন্যায় অবিচার হলে, মানুষ কথা বলতে চায়, প্রতিবাদ করতে চায়, সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা চায়, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার চায়। এটাই বাক স্বাধীনতার মূল অনুপ্রেরণা।
এই অধিকার, রাস্ট্রের প্রতিপক্ষে জনগনের অধিকার। Public vs Government.
রাস্ট্র মানুষকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।
এটা অন্য ধর্মকে, অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কটাক্ষ করার অধিকার নয়।
মডেল হিসাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনী (First Amendment) বিলের কথা আলোচনা করতে পারি। Its a right preserved for public against the government. Don’t use it for wrong cause!
অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ করে কিছু বলা যাবে, এমন কোন অধিকারের কথা কি এখানে বলা হয়েছে?
আপনারা যা করছেন, তা বাক-স্বাধীনতা না, অশুভ ইন্ধনযুক্ত চেতনা। কোন পক্ষকে নিশ্চয়ই খুশি করতে চান, দেশের বারটা বাজলে বাজুক, আপনাদের মত অবিবেচকদের জন্যই, ইউরোপের মত দেশে নতুন করে আইন-প্রনয়ন করতে হয়েছে যে, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে কটাক্ষ করে কিছু বলা বাক-স্বাধীনতা নয়।[iii]
অথচ আমরা ৯০.৫% জনগণই মুসলিম। কি করে সম্ভব এই অনাকংখিত আলোচনা, তাও আবার উপস্থাপক ও অতিথি উভয়েই খুব রসালো ভাবে আলোচনায় মশগুল। জানালার বাইরে চোখ রাখুন, দেখেন জনগণের উষ্মা কত প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশ যদি বেসামাল হয় তা হবে আপনাদের জন্যই।
মুসলিম ভাইরা যে কাজটি এবার করেছে, আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই, দরকার নেই অযথা হাতাহাতি, মারামারি, কাটাকাটির। যদিও কিছু গালমন্দ করা হয়েছে, কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। বর্জনই হোল বেস্ট মেডিসিন।[iv] বর্জনের একটা সুধুর প্রসারী ফল আছে, এক দিনে তা অর্জন হবে না, আমাদেরকে লাগাতর বর্জন ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হবে। সরকার যখন বিষয়টাকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করছে না, তখন জনগণকে এই হাতিয়ার ব্যবহার করতেই হবে। বর্জনের সীমা রেখা কিন্তু বেশ গভীর। ৭১, ডিবিসি না, তাদের হাতে উৎপাদিত যত প্রোডাক্ট আছে তার সবই বর্জন করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকেও। কান টানলে মাথা আসবেই। একঘরে বলে একটা কথা আছে না? অথচ চাইলে মালিক পক্ষ সহজেই এর মীমাংসা করে দিতে পারতো। ক্ষমার চেয়ে উন্নত কোন আর্জি হতে পারে না।
প্রেক্ষিত -ড. জিয়া হাসান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়[v]
[i] https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh
[ii] http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-957/section-29339.html
[iii] https://www.dw.com/en/calling-prophet-muhammad-a-pedophile-does-not-fall-within-freedom- of-speech-european-court/a-46050749
[iv] একটা ফ্লাটফর্ম তৈরির কাজ চলছে।
[v] https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2767019350283612&id=100009267214692