তাফসীর
“সূরা আল- ফাতিহা”
নামকরণ:
‘আল- ফাতিহা’ অর্থাৎ শুরু করা। যেহেতু এই সূরার মাধ্যমে তেলাওয়াতের দিক থেকে ও লিখিত দিক থেকে পবিত্র কোরআন শুরু করা হয়েছে । আবার সকল সালাত এই সূরার মাধ্যমে শুরু করা হয় তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘আল ফাতিহা’। যদিও ফাতিহা প্রথম অবতীর্ণ সূরা নয়,কিন্তু রাসূল (সঃ) এর যুগ হতে এই নামে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।
সূরা ‘আল ফাতিহার‘ গুরুত্ব:
এটি পবিত্র কোরআনের একমাত্র সূরা যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের উপর প্রতিদিন কমপক্ষে ১৭ বার তেলাওয়াত করা ফরজ করে দিয়েছেন। সালাতের একটি রাকাত ও গ্রহণযোগ্য হবে না সূরা আল ফাতিহা পাঠ করা ব্যতীত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন:
«لا صلاة إلا بفاتحة الكتاب»
‘ফাতিহা’ ছাড়া কোন নামাজ হবে না”।
এই সূরাটি কে ( ام الكتاب ) ‘কুরআনের জননী’ বলা হয়। যেহেতু এই সূরায় দীনের সকল উদ্দেশ্য তথা তাওহীদ, ইবাদত, আহকাম, সতর্কবাণী এবং প্রতিশ্রুতি সমূদয় বিষয়াদির অন্তর্ভুক্তি রয়েছে।
সূরা ‘আল ফাতিহার‘ ফযিলতঃ
১.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ফাতিহাকে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা বলেছেন । বুখারী ৪৪৭৪।
২.সুনানে আন-নাসায়ীতে এসেছে
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: ” بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِذْ سَمِعَ نَقِيضًا فَوْقَهُ، فَرَفَعَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَصَرَهُ إِلَى السَّمَاءِ، فَقَالَ: ” هَذَا بَابٌ قَدْ فُتِحَ مِنَ السَّمَاءِ مَا فُتِحَ قَطُّ، قَالَ: فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَبْشِرْ بِنُورَيْنِ أُوتِيتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ: فَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَخَوَاتِيمِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ لَمْ تَقْرَأْ حَرْفًا مِنْهُمَا إِلَّا أُعْطِيتَهُ “
ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে ছিলেন আর তাঁর কাছে ছিলেন জিবরাঈল (আঃ)। হঠাৎ জিবরাঈল (আঃ) তাঁর মাথার উপর এক বিকট আওয়াজ শুনলেন তখন তিনি আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখলেন যে, আকাশের একটি দরজা খুলে দেয়া হয়েছে, যা কখনও খোলা হয়নি। তিনি বলেন, এরপর দরজা দিয়ে একজন ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি এমন দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা শুধু আপনাকেই দান করা হয়েছে। আপনার পূর্বে অন্য কোন নবীকে তা দান করা হয়নি। একটি হলো, সূরা ফাতিহা এবং অন্যটি হলো, সূরা বাকারার শেষাংশ। এতদুভয়ের একটি অক্ষর পাঠ করলেও (তার প্রতিদান) তা আপনাকে দেওয়া হবে। আন-নাসায়ী ৯১২
৩. ফাতিহা পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও মর্যাদা ব্যপারে হাদীস শরীফে এসেছে:
“ مَنْ صَلَّى صَلاَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ غَيْرُ تَمَامٍ ” . قَالَ فَقُلْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ إِنِّي أَكُونُ أَحْيَانًا وَرَاءَ الإِمَامِ . قَالَ فَغَمَزَ ذِرَاعِي وَقَالَ اقْرَأْ بِهَا يَا فَارِسِيُّ فِي نَفْسِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” قَالَ اللَّهُ تَعَالَى قَسَمْتُ الصَّلاَةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ فَنِصْفُهَا لِي وَنِصْفُهَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ ” . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” اقْرَءُوا يَقُولُ الْعَبْدُ { الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ حَمِدَنِي عَبْدِي يَقُولُ الْعَبْدُ { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ } يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَثْنَى عَلَىَّ عَبْدِي يَقُولُ الْعَبْدُ { مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ } يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مَجَّدَنِي عَبْدِي يَقُولُ الْعَبْدُ { إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ } يَقُولُ اللَّهُ وَهَذِهِ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ يَقُولُ الْعَبْدُ { اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ } يَقُولُ اللَّهُ فَهَؤُلاَءِ لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ ” .
“যে ব্যাক্তি সলাত আদায় করল, যার মধ্যে ‘কুরআনের মা’ অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহা পাঠ করল না, তার ঐ সলাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবু হুরায়রা্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বললেন, হে ফারসী! তুমি মনে মনে পাঠ করবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি সলাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দাহ’র মধ্যে দু’ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দাহ’র জন্য এবং আমার বান্দাহ আমার কাছে যা কিছু চায়, তাকে তাই দেয়া হয়।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। বান্দাহ যখন বলে, “আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “আর-রহমানির রহীম”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার গুনগান করছে। বান্দাহ যখন বলে, “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমাকে সম্মান প্রদর্শন করছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন”- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দাহ যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম, সীরাতালাযীনা আন’আমতা ‘আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দালীন”- তখন আল্লাহ বলেন, এর সবই আমার বান্দাহ’র জন্য আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হবে”। মুসলিম৩৯৫,সুনানে আবু দাউদ, ৮২১।
এগুলো ছাড়াও হাদিসের গ্রন্থসমূহে সূরা ফাতেহার আরো বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।