আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে ‘উমার (রা:) তার খিলাফতের সময় একবার মদীনাবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন পাপ করা বন্ধ করতে না হলে তিনি মদিনা ছেড়ে চলে যাবেন কারণ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছিল। চিন্তা করা যায় – উমার (রা:) মদীনাবাসী পাপ ছেড়ে দেয়ার জন্য বলছেন!!!! আমাদের আজকের সমাজ দেখলে তিনি কি বলতেন আর কি করতেন তা চিন্তা করা সম্ভব বলে মনে হয় না!!!
চোখ খুলে দেখলে, দেখা যায় আমাদের সমাজে পাপের অবস্থা!!! একটা হল quality, আরেকটা হল quantity। আ’উযুবিল্লাহ, আমাদের সমাজ কোনটাতেই পিছিয়ে নেই। আর এই পাপে যারা জড়িত তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারা? – যুবক, কিশোর রা (ছেলে এবং মেয়ে)। রাস্তায় বের হলে এই কথা আর ব্যাখ্যা করার দরকার হবে না। এই দলের একটা বড় অংশ, হয়তোবা সবাই বিপরীত লিঙ্গের সাথে মেলামেশায় অভ্যস্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বিবাহহীন দম্পতির মত। অথচ, একই সম্পর্কটা একই জনের সাথে রাখা যেত বিয়ের মাধ্যমে, সুন্দরভাবে। কিন্তু, এই সমাজে বিয়ে এতটাই কঠিন করে ফেলা হয়েছে তারা এখন ভাবছে – ওই বিয়ের ঝামেলায় না গিয়ে ভালই তো আছি।
একদিকে ছেলের বাবা – মা কে জিজ্ঞেস করলে মুচকি হাসে আর বলে ছেলে আরেকটু বড় হোক; বিয়ে করে খাওয়াবে কি!!! আরেকটু ভাল চাকরি করুক। আরেকদিকে মেয়ের বাবা – মা কে জিজ্ঞেস করলে সেই মুচকি হাসি দেয় আর বলে আমার মেয়ে তো সংসারের দায়িত্ব নেয়ার মত বড় হয়নি। আরে, আপনাদের এই কথার ফাঁকে ফাঁকে আপনাদের ছেলে – মেয়েরা কোথায় কোথায় ঘর – সংসার করে ফেলতেছে তার খবর রাখেন!!! এই কথা বললে বলবে – আমার ছেলে বা আমার মেয়ে এমন না!!! আশ্চর্য!!! আপনার ছেলের বা আপনার মেয়ের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ নেই!!! যদি না থাকে তাহলে তাকে ডাক্তার দেখান। আর যদি স্বীকার করে নেন যে আছে – তাহলে তার এই যে আকর্ষণ আপনি বৈধ ভাবে পূরণ করতে দিচ্ছেন না, আপনি জেনে রাখুন এই আকর্ষণ সে অবৈধভাবে পূরণ করছে-ই করছে। আপনার ছেলে বা আপনার মেয়ে যে বয়সের – ই বালেগ হোক না কেন তার বিয়ের কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়া বন্ধ করুন।
একদিকে বিয়ের জন্য ছেলেদের এত এত expectations – মেয়ে লম্বা হতে হবে, মেয়ে ফর্সা হতে হবে, মেয়ে ডাক্তার হতে হবে, মেয়ে আমার মা কে সেবা করতে হবে। এইসব expectations বলে তারপর বলবে মেয়ে পর্দা করতে হবে, সেটাও আবার ছেলের ভাই – বোন জামাই দের সামনে করা যাবে না, তাদের সাথে কথা বলতে হবে, তাদের সামনে হাসতে হবে। একটু দ্বীন পালন করল আর অনেকটুকু দুনিয়া করতে হবে। এটা হল বহু দ্বীনি ছেলের পাত্রী দেখা। আরেকদিকে, বিয়ের জন্য মেয়ের চাই ছয় ডিজিটের বেতন পাওয়া ছেলে, স্ত্রীকে চাকরি করতে দেয়া ছেলে, লম্বা ছেলে, ফর্সা হওয়া যাবে না কিন্তু খুব বেশি কালোও হওয়া যাবে না, দাড়ি থাকা যাবে না। ফলাফল – অগনিত অবিবাহিত ছেলে – মেয়ে। কিন্তু মুখে তারা বলবে আমরা তো দ্বীনদার পাত্র বা পাত্র-ই চাচ্ছি।
আমার নিজের পরিচিত কয়েকজন পাত্রী আছে যারা অনেক বয়স হওয়া সত্বেও বিয়ে করতে পারছে না। ইনাদের কয়েকজনের বয়স ৩০+ বছর।
উপরের সবকিছু ফেলে কোন ছেলেমেয়ে যদি বিয়ের জন্য রাজি-ও হয়, তাহলে এরপর আসে পাত্র পাত্রীর বাবা মা। এক বড় ভাই বলছিলেন তিনি এক পাত্রকে চিনেন যার মা ছেলের জন্য কোন দ্বীনদার মেয়ে পাত্রী হিসেবে আসলেই ওই মেয়ের খুঁত বের করে সম্মন্ধ না করে দেয়। ওই মায়ের অবস্থা এমন যে ছেলের জন্য ‘বস্ত্রহীন’ কেও না এলে তিনি ছেলে বিয়ে দিবেন না, আ’উযুবিল্লাহ। ওই ভাইকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে এটা তার দুর্বলতা যে তিনি তার মায়ের কথার অবাধ্য হন না। আলহামদুলিল্লাহ, ভাই, ভাল কথা। কিন্তু কাকে obey করে কাকে disobey করতেছেন!!! উত্তর ready রাখেন, আমাদের জন্য না; বিচারের মাঠে দেয়া লাগবে কারণ, আপনি আল্লাহর নামে শপথ করে বলেন তো আপনি কোন হারাম কাজ করছেন দেরিতে বিয়ে করার কারনে? এরপর আসি ছেলেদের বাবা মায়ের ‘gift’ এর কথা আর মেয়েদের বাবা মায়ের কোটি টাকা কাবিনের কথা!! ছেলের বাবা-মা-রা একটু চিন্তা করবেন যে এই ‘gift’ নিয়ে আপনি কি ভাবেন যে আপনার পুত্রবধূ আপনার ছেলেকে শান্তিতে থাকতে দিবে!!! আর মেয়ের বাবা-মা-রা একটু ভাববেন যে এই কোটি টাকা কাবিনের exactly কত টাকা আপনার মেয়ে এই জীবনে পাবে বা অন্ততপক্ষে চোখে দেখবে!!! উত্তর যদি negative হয় তাহলে কেন এসবের জন্য নিজের সন্তানকে গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়া!!
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও সম্মানিত দ্বীনি বোন, বিয়েটাকে সহজ করুন। আমার নিজের দাদা-র বাবা অবিবাহিত অবস্থায় তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করে দিব্যি সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করে গেছেন। বিয়ে তখন এতটাই সহজ ছিল।
শেষ করি, সম্মানিত শাইখ রফিকুল ইসলাম মাদানীর একটা উদাহরণ টেনে। শাইখ এক খুৎবায় বলেছিলেন – ধরেন আল্লাহ্ আপনার ছেলের বা মেয়ের মনে তার spouse কে দেয়ার জন্য ১০ কেজি ভালবাসা-মায়া দিয়েছেন। কিন্তু এই ছেলে বা মেয়ে বিয়ের আগেই রাস্তায়, রেস্টুরেন্টে, হোটেলে গিয়ে গিয়ে ৮ কেজি ভালবাসা বিলিয়ে আসছে বিভিন্ন জনকে বা একজনকে। তার বাকি আছে ২ কেজি যার পুরোটা সে বিয়ের পর তার spouse কে দিচ্ছে। কিন্তু তার spouse এর তো আশা আরও বেশি কিন্তু ওই ছেলে বা মেয়ের তো আর বেশি দেয়ার ক্ষমতা নাই কারন সে তো ৮ কেজি বিলিয়ে আসছে। সে কোত্থেকে দিবে!!! এথেকেই শুরু হয় দাম্পত্য কলহ যা আজকাল বহু ক্ষেত্রেই divorce এ গিয়ে শেষ হয়।
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও সম্মানিত দ্বীনি বোন, দয়া করে বিয়েটাকে সহজ করুন। অন্ততপক্ষে, যিনি সহজ করছেন তার দিকে বাঁকা দৃষ্টি দিবেন না।
মা আস সালামাহ
আবু মারইয়াম আল আমিন