সম্প্রতি ফেইসবুক ও কয়েকটা খবরের কাগজে শশী লজের সামনে মহিলার আবক্ষ মূর্তি নিয়ে লেখালেখি চলছে, নিশ্চয় এ বিষয়ে আপনি অবগত হয়েছেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনার দায় বোধ আছে জনগণের কাছে (গণতন্ত্রের ভাষায়) ও সরকারের কাছে। আপনি দুই দিক থেকেই আবদ্ধ এবং আপনাকে উভয়ের কাছেই জবাবদিহি করতে হয়। আপনার এই নীরবতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে কিছু লিখতে আপনাকে উদ্দেশ্য করে।
শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে বাগান। সেই বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরতা মর্মর মূর্তি। ১৯০৫ সালে জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী জমিদার বাড়ীর সৌন্দর্যবর্ধনে কিছু সংস্কারকাজ করেন যার মধ্যে ঐ গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরতা মর্মর মূর্তিও স্থান পেয়েছে।[i]
এবার আসুন, চিন্তা করা যাক, এই মূর্তি নিয়ে। প্রথম যে বিষয়টা ভাববার বিষয়, তা হোল ১৯৪৭ এ দেশ ভাগ হয় মুসলিম ও হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠতার নিরিখে ও পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ভাষা ভিত্তিক আন্দোলনের ফলে। শতকরা ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে মুসলিম কৃষ্টি ও সংস্কৃতিরই চর্চা করা উচিত যা আমাদের সত্য ধর্মের সাথে যেন কোন রুপ সংঘর্ষ না বাধে। যদি ধরেও নেই যে হিন্দুদের মূর্তি তাদের বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল, যেমন এখনো বাংলাদেশে তাদের মন্দিরে অনেক দেব দেবী আছে এবং যথারীতি তারা পুজাও করে, সেটা তাদের আঙ্গিনায় এবং আবদ্ধ ঘরে। কিন্তু এই গ্রীক দেবীর পূজা কে করে, না হিন্দু না খ্রিষ্টান। তাও আবার খোলামেলা গতর। তাও আবার মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে। কতটুকু দৃষ্টিকটু হতে পারে ভেবে দেখেছেন কি। প্রতিদিন কত মহিলা, নাবালক ছেলে মেয়ে, বৃদ্ধ বৃদ্ধা, যুবক, তাদেরকি একটুও চোখ পড়ে না এই উলঙ্গ মূর্তির প্রতি। দেশ ব্যাপী ধর্ষণের যে মহোৎসব চলছে, এই মূর্তির কি কোন অবদান নাই? আজ যদি সেই গ্রীক পুরানের কথিত ভেনাস মাটি ফেটে উঠে পড়ে আর দেখে তাঁর এই নাজেহাল অবস্থা, নির্দ্বিধায় সে আপনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা ঠুকে দিত। ভাবা যায় আমাদের এই দেশে আমার আপনার কোন আত্মীয়ার এ রুপ উলঙ্গ ছবি বা মূর্তি জনসম্মুখে প্রচারের জন্য টাঙানো সম্ভব? তাই কাকে খুশি করার এই ভ্রান্তি অভিলাষ। কার স্বার্থে একজনের বিকৃত নিলজ্জ আহ্ললাদকে জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানের সংখ্যালঘিষ্ঠ গুটিকয়েক লোককে খুশি করার এই ল্যাংটা মহোৎসবে সরকারও যোগ দিয়ে কাদের বাহাবা কুড়াচ্ছে। গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ-সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছার একটা প্রতিফলন জরীপ করে দেখতে পারেন, মূর্তি রাখবেন না বিলীন করে দিবেন। গ্রিসে যা মানান আমাদের এই মুসলিম দেশে তা একেবারেই বেমানান, নিশ্চয়ই এটা আপনি ভাল করে জানেন।
একজন সভ্রান্ত মুসলিম দেশপ্রেমিক হিসেবে আপনার কি করনীয়, আপনি নিশ্চয়ই ভাল করে জানেন। আমার দায়িত্ব হল আপনাকে মনে করিয়ে দিয়ে আল্লাহ্র কাছ থেকে আমাকে দায় মুক্ত করে নেওয়া। মূর্তি দুই প্রকার, এক পুজনীয় আর দুই ঐতিহাসিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বাহন যাকে আমরা সাধারণত ভাস্কর্য বলি।
যতদুর জানা যায় হযরত নুহ (আঃ) সময় থেকেই পুজনীয় মূর্তির প্রচলন শুরু হয়, আল্লাহ্ তা’আলা সরাসরি তাদেরকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করেছেন যারা মূর্তির পূজা করে। অতএব আমি বিষয় আর বাড়ালাম না। এই ভেনাসও কারও না কারও পুজনীয় ছিল, যদিও ধারণা করি যে আজ তারা বেঁচে নেই। এমন যদি হয় কেউই বাংলাদেশে ভেনাসের পূজা অর্চনা করে না, তাই বলে কি উলঙ্গ মূর্তি রাখতে হবে। সব রকম মূর্তি তৈরিতে আল্লাহ্ তা’আলা অত্যন্ত রাগান্বিত হন। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। এটা চরম ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোকেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদের স্পষ্ট নির্দেশ-
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَ اجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِۙ۳۰
‘তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -সূরা হজ্জ : ৩০
এই আয়াতে পরিস্কারভাবে সবধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড বর্জন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে. উপরের আয়াতে সকল ধরনের মূর্তিকে ‘রিজস’ শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘রিজ্স’ অর্থ নোংরা ও অপবিত্র বস্ত্ত। বোঝা যাচ্ছে যে, মূর্তির সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রুচিবোধের পরিচায়ক।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.
প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।’ -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫০
আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ : أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ.
ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِيْ؟ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً وَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً.
এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর!’ -সহীহ বুখারী হা. ৭৫৫৭, ৭৫৫৮;
এখানে আপনার ভূমিকা কি, আপনিতো মূর্তি বা ভাস্কর্য তৈরী করেন নাই। হাঁ আছে, দেখুন আমার আপনাকে উদ্দেশ্য করে রাসুল (সাঃ) কি বলেছেন, আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী ইবনে আবী তালেব রা. আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে, তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে,… এবং সকল চিত্র মুছে ফেলবে।’ -সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯
আল্লাহ্কে ভয় করুন! বর্তমান জেলা প্রশাসক হয়ে আপনি কি ভাবে পার পাবেন আল্লাহ্ তা’আলা থেকে, ভেবে দেখুন একবার!! আমার বিশ্বাস, আপনি নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেন যে এটি একটি মন্দ কাজ। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে। (সুরা ফাতির, আয়াত ৮) তিনি আরও বলেন, তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে। (সুরা আনআম, আয়াত ১২০) মূর্তিকে যে অভিধা দিয়েই আমরা সম্বোধন করি না কেন, তা পাপ, আল্লাহ্ বলেন, অনন্তর জালেমরা এতে অন্য শব্দ বদলে দিল তার পরিবর্তে, যা তাদেরকে বলা হয়েছিল। সুতরাং আমি তাদের উপর আযাব পাঠিয়েছি আসমান থেকে তাদের অপকর্মের কারণে। (সুরা আরাফ, আয়াত ১৬২) যে কথা বলে উপসংহার টানছি, তাহাও আল্লাহ্র ওহী, আল্লাহ্ বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী; (সুরা মুদ্দাত্থির, আয়াত ৩৮)
অনুরোধ করবো, মুসলিম দেশে ইসলামী সংস্কৃতির ধারক বাহক হউন। উচ্চ পর্যায়ে লেখালেখি করে সঠিক কাজটি করুন, হয়তো আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে এই উছিলায় সব অপরাধ মাপ করে দিতে পারেন, কারন তিনিই হলেন, রাহমানুর রাহিম। আপনার কল্যাণ কামনা করি।
নিবেদক
মিজানুর রহমান ছিদ্দিকী
মোবাইল নংঃ ০১৭১১৮৯০০৭৭
www.muslimummah.news
[i] https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%B6%E0%A7%80_%E0%A6%B2%E0%A6%9C
মহান আল্লাহতালা দায়িত্বশীলদের শুভবুদ্ধির উদয় করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তৌফিক দান করুক।
রাষ্ট্রীয় যন্ত্র নিয়ন্ত্রক প্রত্যেক দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা সেই জ্ঞান তাদের মধ্যে পৌছাইয়া দাও।
সরকার তার কর্মচারীদের কাছ থেকে আনুগত্য ও শৃঙ্খলার শপথ নিয়ে থাকেন, সরকারের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলরা ও এ শপথ নিয়ে থাকেন কিন্তু সে শপথ আল্লাহর নামে নেওয়া হয় না অথচ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা শির্ক বা কুফরী (তিরমিযী হাত/১৫৩৫) ফলে ওইসব শপথ কারীগণ স্রেফ বিবেকের কাছে ও দায়বদ্ধ থাকে না আর আল্লাহর কাছে তারা কিভাবে দায়বদ্ধ থাকবে ?