আসসালামু আলাইকুম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
এটা আমার দ্বিতীয় পত্র আপনার কাছে। আশা করি ভাল আছেন। দেশ পরিচালনায় আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করি। আল্লাহ্ আপনাকে তৌফিক দিন যতদিন তিনি চান আপনাকে ক্ষমতায় রাখতে। পুরো বিষয়টাকে দুই পত্রে লিখলে ভাল দেখাত, কিন্তু এক জায়গায় এসে দুইটা বিষয়ের মধ্যে সম্পৃক্ততা চলে আসে তাই একত্রে উপস্থাপন করেছি। আগেই বলে রাখি আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী না, আবার এর অর্থ এই না যে আমি আপনার কুৎসা রটনাকারী, আপনার তথা দেশের মঙ্গল হোক আমি তাই প্রার্থনা করি। আমি আল্লাহ্কে ভয় করি এবং তাঁর আয়াতে বিশ্বাস রাখি। তিনি বলেন, “দুর্ভোগ প্রত্যেক সামনে নিন্দাকারীর ও পিছনে কুৎসা রটনাকারীর” (সুরা হুমাযাহ, আয়াত ১) এই দুর্ভোগ তাফসীর কারীরা বিভিন্ন অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন, কেউ বলেছেন, এটা দুর্ভোগ না, এটা ওয়াইল নামক একটি জাহান্নাম, আবার কেউ বলেছেন এটা ওয়াইল নামের জাহান্নামের উপত্যকা। যাই হোক এটা যে অপরাধের শাস্তি তাতে কোন সন্দেহ নাই। আমি তা হতে মুক্ত থাকতে চাই।
আপনার পছন্দের লোকজন যারা নিশ্চয়ই আপনার দৃষ্টিতে কাজে পারদর্শী তাদেরকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দান করেছেন। আমি এটাও আশা করি একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলে তাদের কাজের ফিরিস্তি আপনি মূল্যায়ন করেন। পাশাপাশি আপনি কিছু সংখ্যক উপদেষ্টাও নিয়োগ দিয়ে রাখছেন। যারা সার্বক্ষণিক আপনার সাহচর্যে থেকে আপনাকে দেশের সার্বিক অবস্থা অবগত করান। এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। যে বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তোলে তা হোল মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার আগে তাদের কি অভিজ্ঞতা আছে যে তারা তার মন্ত্রণালয়ের খুঁটিনাটি সম্বন্ধে পুরোপুরি জ্ঞান রাখে। খুব কম মন্ত্রীই তার মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। মজার বিষয় হোল সেক্রেটারি মহোদয় একমাত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি থাকেন যিনি দু অর্থে পারদর্শী, ট্রেনিংপ্রাপ্ত ও বহুদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। উনিই মন্ত্রীকে যেমনি চালান তেমনি মন্ত্রী মহোদয় চলেন, ধারণা করতে পারি যে, মন্ত্রী সাহেব নিজের বুদ্ধিমত্তা ও প্রয়োজনবোধে অন্য কারও হতে উপদেশ নেন কিন্তু দিনশেষে দায়বব্ধতা ও জবাবদিহিতা কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের। বেশীর বেশী ভুল ভ্রান্তি হলে সেক্রেটারি সাহেব অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলী হবেন আর মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব চলে যাবে। অন্য কেউ উনার স্থলাভিষিক্ত হবে। এটাই চিরাচরিত নিয়ম।
আমরা কি এই চিরারিত নিয়মকে আরও উন্নত করতে পারি না? নিয়োগপ্রাপ্ত যে কোন প্রজাতন্ত্রের ব্যক্তিবর্গ যে পদেই নিয়োগ পান না কেন, হোক তিনি মন্ত্রী বা অন্য কিছু, তার জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা। এবং প্রশিক্ষণ উত্তর উক্ত নিয়োগপত্রে একটা নির্ণায়ক সুচক থাকবে জবাবদিহীতার বিষয়টি। প্রমোশনের স্কোরিংও ঐ ভিত্তিতে হবে। অদক্ষতা বা অবহেলার ক্ষতির মাপকাঠী হবে প্রথম, চাকুরীচ্যুতি, অর্জিত সুবিধাগুলি ফেরত সহ আর দ্বিতীয়টা হবে, ডাউনগ্রেড করা (আর্থিক ও পদবীসহ), তাও হবে পরবর্তী সময়সীমা নির্ধারণ করে। এবারও যদি অযোগ্যতা প্রমান করে তবে তার শেষ প্রাপ্য ডিসমিস। বাংলাদেশে এখন অনেক শিক্ষিত বেকার আছে, আপনার নূতন লোকবলের অভাব হবে না। কর্ম সংস্থানের এ এক অবর্ণনীয় সুযোগ।
কালেভদ্রে শুনেছি কিনা জানিনা মন্ত্রীদের কোন ট্রেনিং হয়? বেশীর বেশী বিদেশ ছফরের কথাই পত্র পত্রিকায় আসে। তাও পরিবার পরিজন নিয়ে, এতে আমরা কি অর্জন করলাম তার হিসাব কি কারও কাছে আছে? নিস্ফল যাত্রা সাথে সরকারী কোষাগারের অর্থ অপচয়। অন্য কর্মকর্তাদের ট্রেনিং এর বিষয়টা আজ উহ্য রাখলাম। তবে আমার নিন্মোক্ত প্রস্তাবে সবারই কাজে লাগবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স এখন প্রায় ৫০ বৎসর, ইতিমধ্যে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও সৎ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী পদবীদারী ব্যক্তিবর্গ অবসরে গিয়েছেন বা সাবেক হয়েছেন। তাদের পরিচয় আমাদের নথিপত্রে উল্লেখ আছে। যদি আপনি চান, তবে একটি সমন্বিত ট্রেনিং বিভাগ খুলে উক্ত অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ও সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদেরকে নিয়ে সাংবৎসরিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে পারেন। দেশের উন্নতিতো হবেই পাশাপাশি দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হবে। ভেবে দেখতে পারেন। সম্প্রতি পত্রিকাগুলোতে একটা সংবাদ চাউর হয়েছে যে, সরকারী কর্মকর্তারা খিচুরী রান্নার ট্রেনিং এর জন্য সরকারের কাছে তাদের ট্রেনিং ও বিদেশভ্রমণের টাকার জন্য চাহিদাপত্র পেশ করেছিল। কত হাস্যকর ও লজ্জাজনক প্রস্তাব!! দেশের তহবিল তসরুপের কি সাঙ্ঘাতিক উদাহরণ। অভিজ্ঞতার যে কোন বিকল্প নেই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হোল, এক ভাই ফেইস বুকের পেইজে এই ভ্রমণবিলাসের পরিবর্তে প্রস্তাব করেন যে, ঐ কর্মকর্তাদেরকে বাংলাদেশের তাবলীগে পাঠাতে, ফলে দুইটা উপকার একসঙ্গে হবে, খিচুরী রান্নাও শিখবে পাশাপাশি সালাত/নামাযের বিষয়েও যত্নবান হবে। খাঁটি কথা!! আমিও এই সংবাদটা পাবলিশ করেছি।
এবার আসি আপনার উপদেষ্টাদের বিষয়ে। বিশ্বাস করি আপনার নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা সবাই যার যার অবস্থানে পরিপক্ক এবং আপনি তাই বাছাই করে তাদের কাজ দিয়েছেন। কিন্তু যে টা মানতে আমি নারাজ তা হোল সব বিভাগে আপনি উপদেষ্টা নিয়োগ দেন নাই। সব মন্ত্রণালয়গুলোর উপর শেন্যদৃষ্টি রাখার জন্য এখনো আপনার উপদেষ্টার পরিমাণ নিতান্ত কম। যেটা ভেবে বেশী কষ্ট পাই তা হোল ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আজ অবদি কোন পূর্ণ মন্ত্রীতো নাই এমন কি উপদেষ্টাও নাই। অথচ বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম এবং মনে হয় তাদের দৃষ্টিভঙ্গী, চাহিদা ও যোগানের ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়। মাঝে মাঝে যে সব রাজনৈতিক ঝামেলা আসে তা তৎক্ষণাৎ তড়িৎ বুদ্ধি দিয়ে আপনারা সামাল দেন কিন্তু এর শুধুর প্রসারী ফলাফল বড়ই তিক্ত বলে আমি মনে করি। এবং কোন কোন সময়ে তড়িৎ ঐ সামাল ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী আরও একটা নূতন সমস্যা তৈরী করে।
মনে করিয়ে দিলে নিশ্চয়ই অসন্তুষ্ট হবেন না, যে এই মন্ত্রণালয় চালানোর জন্য যিনি সচিব আছেন, তার অন্য অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত থাকলেও ইসলাম ধর্ম নিয়ে না শিক্ষা আছে, না ধর্ম নিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ড চালানোর বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ আছে। করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর পর আজ পর্যন্ত কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয় নাই, অথচ বৃহত্তর জনগুষ্টি মুসলমান। এখানে এই অবহেলা কেন বুঝতে পারছি না। খুবই মজার বিষয় যদি এক বার উইকিপিডিয়া ঘুরে আসেন, দেখবেন প্রকৃতপক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় কি সব কাজে ব্যস্ত, তা হোল হজ্জ, ওমরাহ্ আর তাবলীগ ভাইদের বিশ্ব এজতেমা নিয়ে। কত কাজ বুঝতেই পারছেন।
দেশের কর্ণধার ও নিজে একজন মুসলিম হয়ে কি কিছুই দেখতে পান না যে, দেশে মুসলমানদের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলছে। সবাই সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে বসে আছে। আপনার হয়ত হাতে সময় নাই, যদি থাকতো দেখতে পেতেন ইউটিউবের ভিডিও ক্লিপ গুলো, কে কাকে কত গালি দিতে পারে, তারই প্রতিযোগিতা চলছে। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে আপনার কি উচিত না এগুলো থামানো। আজ দেশের দায়িত্ব যখন নিয়েছেন কাল বিচারের দিনেও আপনাকে তার উত্তর দিতে হবে। আল্লাহ্ বলেন, নিঃসন্দেহ মুমিনরা ভাই-ভাই, সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে তোমরা শান্তিস্থাপন করবে, আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয়-ভক্তি করবে যেন তোমাদের অনুগ্রহ করা হয়। (সুরা হুজরাত, আয়াত ১০) রাসুল (সঃ) বলেন, “প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সভ্রম ও ধন সম্পদ অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।“ (মুসলিম হাদিস নং ৬৭০৬) সরকার প্রধান হিসাবে আপনার দায়িত্ব অনেক বড়।
এই বিভাজনে আপনি কি খুব স্বস্তিতে আছেন? কেউ কেউ বলেন, জনগণের বিভাজন মানুষকে সরকারের বিষয়ে অমনোযোগী করে রাখে আর এর ভিতর দিয়ে সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু এটা কারও কাম্য নয়। সময়তো আবার ফিরে আসবে। আপনাকে যারাই যে উপাধিতে ভূষিত করুক না কেন, অন্যরা যে সন্তুষ্ট না তা কি উপলব্ধি করতে পেরেছেন, বিশেষ করে মাওলানা আহমেদ সফি সাহেবের মৃত্যুর পরে। অথচ আপনিতো সবার প্রধানমন্ত্রী, সবাই ভাল থাকলে আপনি ভাল ত্থাকবেন। নতুবা নয়।
বর্তমানে দেশে অনেক শিক্ষিত, বিদগ্ধ, সৎ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেম আছেন যারা আপনার সচিবের মতই পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারী ইসলাম বিষয়ে, অন্তত এই মন্ত্রণালয়ে তাদের গুটি কয়েককে নিয়োগ দিতে পারেন, ঐ রুপ একজন উপদেষ্টাও রাখতে পারেন আপনার কাছে যে আপনাকে দেশের জনগনের আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয়ে সাহায্য করবেন। ধর্মীয় ব্যুৎপত্তির অভাবে আপনার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বর্তমানের কেউই উলামাদের মধ্যে সমাধান আনতে পারবে না এবং ঝগড়াও থামাতে পারবে না। এক সময় তা স্ফুলিঙ্গের রুপ নিবে, সামাল দেওয়াও কঠিন হয়ে যাবে তার জলন্ত উদাহরণ তাবলীগের মধ্যে দুই ভাগ হওয়া, অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাহ্মনবাড়িয়ায় দুই মুসলিম পক্ষের মধ্যে বিতণ্ডা বা পুলিশ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে গেন্ডারিয়ায় মুসলমানদের বিবাদ হওয়া। আশা করি আমার উদ্বেগ বুঝতে পারছেন, ক্ষমতা প্রয়োগের শ্রেষ্ঠ সময়কে কাজে লাগালে আপনার মুখই উজ্জল হবে আর পরকালের প্রাপ্তিতো আপনার জমাই রইল আল্লাহ্র কাছে। আমিন।