মানহাজ সিরিজঃ ৯
বই : আস-সিয়াসাহ আশ-শার’ইয়্যাহ।
সংকলনে : সাজ্জাদ সালাদীন।
সম্পাদনায় : আব্দুল আলীম বিন কাওছার মাদানী।
প্রকাশনায় : মাকতাবাতুস সুন্নাহ।
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২৬।
নির্ধারিত মূল্য : ১০০/-
বইটি একটি সংকলন গ্রন্থ। জাহিলি বিধান ও ইসলামী রাজনীতি নিয়ে ধুঁয়াসা চলছে তার বিরুদ্ধে একটি ক্ষূদ্র প্রচেষ্টা এই বইটি।
বইটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল : ২০১৭ সালে এবং
প্রথম প্রকাশের সময় বইটির নাম ছিল : আস সীয়াস্যাহ আস শারইয়্যাহ।
দ্বিতীয় প্রকাশ হয়েছে : ২০২০ সালে। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে : শারঈ রাজনীতি।
.
ভূমিকাঃ সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই। ছ্বলাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যিনি আল্লাহর দ্বীনের রিসালাত এর দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছেন। অতঃপর তার সাহাবায়ে কেরামের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক যারা ছিলেন উম্মাতে মুহাম্মদীর আদর্শ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর পালনে সকলের চেয়ে অগ্রগামী। পরসমাচার মুসলিম সমাজে খিলাফতের পতনের পর জাহেলী রাজনীতির কবলে অধিকাংশ মুসলিম দেশ আক্রান্ত। মুসলিমগণ জাহেলি রাজনীতির বিপরীতে শতাব্দী ধরে বিদআতী রাজনীতি গঠন করে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু শারঈ রাজনীতি সম্বন্ধে তারা থাকে অজ্ঞ। ফলে কাঙ্খিত ফল তারা পায়নি। তাই আজ মানহাজ সিরিজে শারঈ রাজনীতি সম্বন্ধে অসাধারণ একটি সংকলনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
.
.
বিষয়বস্তুঃ সিয়াসাহ বা রাজনীতির পরিচয়, ইসলামে রাজনীতির বিধান, রাজনীতির প্রকারভেদ, বিদআতী রাজনীতি, সাংগঠনিকভাবে দাওয়াতি কাজের ধরন, রাজনৈতিক দল গঠন করা ও একাধিক দলে বিভক্ত হওয়ার হুকুম, জাহেলী রাজনীতি, শারঈ রাজনীতি ও তা বাস্তবায়নের ধারাবাহিক চারটি পর্যায় যথাক্রমে এক.আল্লাহর দিকে দাওয়াত, দুই.বাইয়াতের মাধ্যমে ইমারত বা রাষ্ট্র গঠন ও জামাতবদ্ধ জীবনযাপন, গণতন্ত্রের বিধান ও এই পদ্ধতি গ্রহণ করা, তাতে ভোট দেয়া, এর থেকে নির্বাচিত করার হুকুম, তিন. দ্বীন বা শরীয়াহ ব্যতীত রাষ্ট্র পরিচালনা করার বিধান, চার. শির্কের মূলোৎপাটনে রাষ্ট্রীয়ভাবে জিহাদ ঘোষণা করা।
.
.
পর্যালোচনাঃ সিয়াসাহ পারিভাষিক অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে কথাটি রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত। দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি দিতে পারে- মানুষকে এমন পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের সংশোধন ও তাদের কার্যাবলী পরিচালনা করতে চাওয়ার নাম সিয়াসাহ। যদিও এর আরো অনেক অর্থ এবং ব্যাখ্যা ওলামারা করেছেন। কোরআন রাজনীতির মূলনীতি বিবৃতি করেছে, তার নিয়ম কানুন প্রকাশ করেছে এবং রাজনীতির সকল পথ সুস্পষ্ট করেছে। রাজনীতি হচ্ছে মানুষের কর্মকাণ্ডকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার পদ্ধতির নাম। যথাঃ আভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র নীতি। অতঃপর ইসলামী রাজনীতির প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামী রাজনীতি বা শারঈ রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত।
এক. সিয়াসাহ আদেলাহ বা ন্যায়ের ভিত্তিতে রাজনীতি। দুই. সিয়াসাহ যালিমাহ বা স্বৈরাচারী রাজনীতি। শরীয়াত যা হারাম করেছে। ইসলামী দলসমূহের বিদআতী রাজনীতি সম্পর্কে ফাদ্বীলাতুশ শাইখ আল আল্লামাহ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ’র দীর্ঘ প্রশ্ন উত্তর বক্তব্য পেশ করা হয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য মুসলিম সরকার বা কাফির সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার নীতিমালা।
সাংগঠনিকভাবে দাওয়াতি কাজের ধরন এবং রাজনৈতিক দল গঠন করা ও একাধিক দলে বিভক্ত হওয়া সম্পর্কে কিবারুল ওলামা ও সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের ফতোয়া সংযুক্ত করা হয়েছে। অতঃপর জাহিলি রাজনীতির ব্যাপারে শাইখ সালেহ আল ফাওযান হাফিজাহুল্লাহ’র দীর্ঘ বক্তব্য সংযোজন করা হয়েছে। অর্থাৎ শারঈ রাজনীতি বাস্তবায়নের প্রধান চারটি ধারাবাহিক পর্যায় যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত থেকে প্রমাণিত।
১। আল্লাহর দিকে দাওয়াত এবং সে ক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণের দাওয়াতি নীতি অবলম্বন।
২। বাইয়াতের মাধ্যমে ইমারত বা রাষ্ট্র গঠন ও জামাতবদ্ধ জীবনযাপন।
৩। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী শরীয়াতের পূর্ণ বাস্তবায়ন। ৪। শির্কের মূলোৎপাটনে রাষ্ট্রীয়ভাবে জিহাদ ঘোষণা করা।
.
.
? নবী-রাসূলগণের দাওয়াতী মূলনীতিঃ
১। তাওহীদ, আল্লাহর উপর ঈমান এবং শরীক বিহীন একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত দান।
২। মানুষের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছানো এবং তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করা ও তাদেরকে নাসিহাত করা।
৩। গ্রামগঞ্জ, বাড়িঘর, হাট-বাজার সর্বত্রই দাওয়াতের বিস্তার ঘটানো।
৪। দাওয়াত ও ইবাদত উভয়ের মাঝে সমতা বজায় রাখা।
৫। জ্ঞান অর্জন, আমল ও জ্ঞানদানের মাঝে সমতা সৃষ্টি করা।
৬। বোধগম্য ভাষায় মানুষকে দাওয়াত দান।
৭। আল্লাহর দিকে আহবান করে কাফের শাসকদের নিকট বার্তা প্রেরণ।
৮। দাওয়াত দানে অটল থাকা এবং যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা।
৯। ভয় ও ক্ষতির আশঙ্কা হলে কাফেরদের সাথে সৌজন্য মূলক আচরণ করা।
১০। মানুষের প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করা। আর তাদেরকে ক্ষমা মার্জনা করা।
১১। সৃষ্টির প্রতি বন্ধুত্ব, দয়া ও সহানুভূতি দেখানো।
১২। সকল কাজে সততা অবলম্বন করা ও সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা।
১৩। সকল কাজে একাগ্রতা, নিষ্ঠতা বজায় রাখা এবং বদন্যতা, সেবা-যত্ন করা ও বিনয়ী হওয়া।
১৪। পার্থিব জীবনে চাকচিক্যতা থেকে দূরে থাকা ও সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করা।
১৫। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যে উৎসাহ দান ও অবাধ্যতায় নিরুৎসাহ করা। অবাধ্যতার শাস্তি বর্ণনা করার সাথে সুসংবাদ ও ভীতি প্রদর্শন করা।
১৬। জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ করার চেষ্টা করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা।
১৭। যারা মুসলমানদের অতি কষ্ট দেয় তাদের জন্য বদ দোয়া করা ও কাফের মুশরিকদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করা।
প্রায় পঞ্চাশটির মতো নীতিমালা ব্যাখ্যা সহ বিবরণ করা হয়েছে।
.
.
➡️ বায়াতের মাধ্যমে ইমারাহ বা রাষ্ট্র গঠন ও জামাতবদ্ধ জীবনযাপনঃ এই অংশে খলিফার সংজ্ঞা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বিবরণ দেয়া হয়েছে। খলিফা নিয়োগের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। খিলাফত গঠন করা ফরজে কিফায়া এবং এই ফরজিয়াত দুই শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রযোজ্য ১.শূরা পরিষদ ও ২.নেতৃত্বের যোগ্য ব্যক্তি। খিলাফতের উদ্দেশ্য সমূহ, ইমাম হওয়ার যোগ্যতা, খলিফার বিধানবলি, আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ এর শর্তবলী, নারী নেতৃত্তের বিধান, ন্যায় পরায়ণ ইমাম বা শাসকের মর্যাদা, অত্যাচারী ইমাম বা শাসকের শাস্তি, খেলাফত গঠনের পদ্ধতি, খলিফা রাশেদীনের নেতৃত্ব নির্ধারণের পদ্ধতি, বায়’আতের কারনসমূহ এবং এর প্রকারভেদ, বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত সমূহ, বাই’য়াত ভঙ্গের বিধান, খলিফার আবশ্যকীয় কার্যাবলী, শাসকের প্রতি জনগণের দায়িত্ব কর্তব্য, আল্লাহর অবাধ্যতায় খলিফার আনুগত্য করার শাস্তি, শাসন ব্যবস্থায় খলিফাগনের শ্রেণীবিন্যাস, ইমাম বা শাসকের বিরোধিতা করার বিধান। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা, গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান করা হয়েছে সৌদি আরবের ফতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কিবারুল উলামা হতে।
.
.
⬛ রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী শরীয়তের পূর্ণ বাস্তবায়নঃ ইসলামী শরীয়ার অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথাক্রমেঃ এটি রব্বানী তথা আল্লাহ প্রদত্ত, এটি বিশ্বমানবতার জন্য, এর ব্যাপকতা মৌলিকত্ব চিরস্থায়িত্ব, পালনে সহজতা প্রদান ও কঠোরতা বিলোপ, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক ব্যাপারে চমৎকার সমন্বয়, উদারতা, যুগোপযোগিতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। অতঃপর দ্বীন বা শরীয়াহ ব্যতীত রাষ্ট্র পরিচালনা করার বিধান ও জাহিলিয়্যাতের বিধান সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল ফাউযান হতে দীর্ঘ আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
.
.
️ শির্কের মূলোৎপাটনে রাষ্ট্রীয়ভাবে জিহাদ ঘোষণা করাঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ অর্থাৎ আল্লাহর কালিমা তথা তাওহীদকে উড্ডয়ন করার নিমিত্তে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করাই হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। সর্বশেষ এই অধ্যায়টিতে ইসলামে জিহাদ শরীয়ত সম্মত হওয়ার তাৎপর্য এবং শারঈ জিহাদের পর্যায়, আল্লাহর পথে জিহাদের বিধান, জিহাদের প্রকারভেদ,জিহাদের অবস্থাসমূহ নাতিদীর্ঘ ভাবে আলোচনা করে সমাপ্ত করা হয়েছে।
.
.
? উপসংহার ও মন্তব্যঃ বইটির দুই-তৃতীয়াংশই মূলত “ইসলামী ফিকাহ” গ্রন্থ হতে সংকলিত। যার মূল লেখক শাইখ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ আত তুওয়াইজিরী। এছাড়াও বইটির আদ্যেপান্ত আরব সালাফি কিবারুল উলামাদের ফতওয়া বা গবেষণাগুলো থেকে সংকলন করা হয়েছে। সর্বোপরি সমাজে প্রচলিত বিদয়াতী ও জাহিলী রাজনীতির বিপরীতে এই বইটির ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার জরুরী বলে মনে করি।
বইটি রিভিউ লিখেছেন প্রিয় ভাই Mahedi Lohani। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁকে উত্তম বিনিময় প্রদান করেন। আমীন ওয়া ইয়্যাকুম।