আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলার কাজটি এই সময়ে খুবই দ্রুত ঘটে চলেছে। ফলে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ কখন কতটুকু উপরে উঠে আসবে, সে ব্যাপারে এখন আর সঠিক আন্দাজ-অনুমান করতেও পারছেন না। কোনো সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীও উচ্চারণ করছেন না। তবে বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে চলা এবং সেই সূত্রে জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তনের বর্তমান প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, সে ব্যাপারে সবাই একমত। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন মতে ১৯৯০-এর মধ্য দশকের চেয়ে বর্তমানে আবহাওয়া সঙ্কটের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে চলা আরো বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত এক অনুমিত হিসাব মতে, ১৯৯০-এর দশকে বিশ্বে বরফ গলার হার ছিল প্রতি বছর ৭৬০ বিলিয়ন টন। কিন্তু ২০১০-এর দশকে এই হার ৬০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় বছরে ১.২ ট্রিলিয়ন টন বা ১২০০ বিলিয়ন টন। প্রতিবেদনটি গত ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় ‘দ্য ক্রাইওস্ফিয়ার’ জার্নালে। আরেকটি সমীক্ষা প্রতিবেদন গত জানুয়ারির প্রথম দিকে প্রকাশিত হয় ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ সাময়িকীতে। এ প্রতিবেদনেও বিষয়টির স্পষ্ট ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়। সেই সাথে মেরু অঞ্চলের বরফ গলার বিষয়টিকে মানবজাতির উদ্বেগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই উদ্বেগের বাইরে নয় আমাদের এই বাংলাদেশও।
ক্রাইওস্ফিয়ারের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয় আবহাওয়ার এ পরিবর্তনে উদ্বেগজনকভাবে বরফ গলার হার বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনে পৃথিবী-ব্যবস্থায় আটকা পড়া সব এনার্জির প্রায় ৩ শতাংশ কাজ করে বরফ গলাতে। পৃথিবীর বরফ তিন দশক আগে যে হারে গলত, এখন তা গলে তার চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি হারে। ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে সার্বিকভাবে সমুদ্রের ভাসমান বরফ ও হিমবাহের ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ গলে সমুদ্রের পানিতে মিশেছে।
উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফের পাহাড়গুলো শত বছর ধরেই গলে বড় বড় হিমবাহের সৃষ্টি করছে। সময়ের সাথে হিমবাহের এই বরফ গলে যাওয়া ক্রমেই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত এক দশক ধরে উত্তর মেরুর এই বরফ গলে সমুদ্রে মিশেছে সব চেয়ে বেশি হারে। এ সময়ে প্রতি বছর ১৫০ গিগাটন তথা ১৫০ বিলিয়ন মেট্রিক টন বরফ গলে পরিণত হয়েছে সমুদ্রের পানিতে। পাঠক সাধারণকে জানিয়ে রাখি, ১ গিগাটন = ১,০০০,০০০,০০০ মেট্রিক টন, আর ১ মেট্রিক টন = ১০০০ কেজি।
যদি গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের সব আইসশিট ও সুমেরু অঞ্চলের বরফের সবগুলো পাহাড়ে বরফ গলা ঠেকানো না যায় এবং সত্যি সত্যিই সে বরফ পুরোপুরি গলে এর পানি সমুদ্রে গিয়ে মিশে, তবে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা ৭.৯ মিটার বেড়ে যাবে বলে অভিজ্ঞজনরা বলছেন। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান হার ঠেকাতে না পারলে এমন ভয়াবহ বিপজ্জনক ঘটনাটি ঘটে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। তখন অনেক দেশই সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাবে। অস্তিত্ব হারাবে অনেক দেশ। আমাদের বাংলাদেশও একইভাবে সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা প্রবল। মেরু অঞ্চলের এই অস্বাভাবিক হারে বরফ গলে যাওয়ার প্রবণতা রোধের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে গোটা মানবজাতির জন্য। এ ব্যাপারে আর্কটিক কাউন্সিল বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারকে সাথে নিয়ে সম্মিলিত সতর্ক পদক্ষেপ না নিলে মানবজাতিকে নিশ্চিত এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিষয়টির ওপর বাংলাদেশের সচেতন নজর রাখা দরকার।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়ই চলছে মেরু অঞ্চলে এই অস্বাভাবিক হারে বরফ গলে যাওয়ার প্রক্রিয়া। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়নই বদলে দিচ্ছে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু। বিজ্ঞানীদের ঐকমত্যভিত্তিক ধারণা আজ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার বছর আগের সর্বশেষ ‘ইন্টারগ্ল্যাসিয়েল’ যুগের চেয়ে আজকের দিনের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ থেকে ৯ মিটার বেশি। ১৯০০ সালের পর থেকে আর্কটিক বা উত্তর মহাসাগরের ‘সামার আইস’ ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা হিমায়িত বরফজলে ঢেকে গেছে, যার আয়তন ২৮টি বাংলাদেশের সমান। অন্য হিসাবে তা ১৭০০ সালের বিশ্বের মোট ফসলি জমির আয়তনের চেয়ে বড়। ২০০৫-২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই সময়ে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা বাকি দুনিয়ার তাপমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২১০০ সালের মধ্যে আরো ২ থেকে ৫.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়তে পারে বলে দেখানো হয়েছে।
সুমেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা মাপা শুরু হয় ১৮৮০ সালে। তখন থেকেই এ অঞ্চলের তাপমাত্রা কেবল বেড়েই চলছে। ১৮৮০ থকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে শীতের মৌসুমে সেখানকার বরফের পুরুত্ব ৩.৬৪ মিটার থেকে নেমে এসেছে ১,৮৯ মিটারে। মেরু অঞ্চলের বরফ ঢাকা ভূভাগ ১৯৬৬ সালের পরবর্তী কালে গ্রীষ্মের সময়ে কমে গেছে ১৮ শতাংশ। ১৯৮০-এর দশকের পরবর্তী সময়ে ‘পার্মাফ্রস্ট’ তাপমাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ১৯৯৫-২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে গ্রিনল্যান্ডের আইসশিটের হারিয়ে যাওয়া বেড়েছে চার গুণ। সুমেরু অঞ্চলের প্রায় সব পাহাড়ের হিমবাহ ও আইস ক্যাপ ক্ষয় হয়ে চলেছে ১০০ বছর ধরে। গত এক দশকে বরফ ক্ষয় হয়েছে বছরে ১৫০ গিগা মেট্রিক টন হারে।
ড্রেইক প্যাসেজ নামের বিশাল এক জলাধার রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন, চিলি এবং অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানে। এই জলাধার অ্যান্টার্কটিকা মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাংশকে সংযুক্ত করেছে। এই ড্রেইক প্যাসেজ পার হলেই চোখে পড়ে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ। সে যেন এক ভিন্ন পৃথিবী। সামুদ্রিক পানিবেষ্টিত অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপে রয়েছে বরফে ঢাকা সারি সারি পাহাড়। এর চার পাশের সমুদ্রের পানিতে প্রচুর প্রাণীর বসবাস। এখনো সেখানে এর আদি ও অকৃত্রিম দৃশ্য বিদ্যমান মনে হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব-প্রক্রিয়া চলমান। সেখানে বাড়তি মাত্রার তাপের প্রভাবে বরফ গলে মিশছে সমুদ্রে। বড় বড় বরফখণ্ড ধাবিত হচ্ছে সমুদ্রের দিকে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ আরো উপরে উঠছে। বিশ্বে ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি ধারণ করে অ্যান্টার্কটিকা। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফখণ্ড গিয়ে মিশে উপদ্বীপের দক্ষিণ দিকটায়। সে পানিই সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ায় ২০ ফুটের মতো। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বিশ্বের অনেক নিম্নাঞ্চল এবং এর কাছাকাছি অবস্থিত দ্বীপগুলোর ওপর। বরফ গলে যাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গেলে পার্থক্য বোঝা দরকার দু-ধরনের বরফের : স্থলভূমিতে থাকা বরফ এবং সমুদ্রে ভাসমান বরফ। যখন পানিতে ভাসমান বরফ গলে, তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ে না। কিন্তু ভূভাগের বরফ কিংবা হিমবাহের মাধ্যমে সমুদ্রে যাওয়া বরফ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে তোলে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ও গ্রিনল্যান্ডের বরফ এ শ্রেণীতে পড়ে। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, আগামী এক শতাব্দীতে এ ধরনের বরফ গলার পরিমাণ কত দাঁড়াবে। তবে এটি নির্ভর করে মানবজাতি সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে আগামী দিনে পৃথিবীর উষ্ণায়ন কতটা ঠেকাতে পারল, তার ওপর। কিন্তু এরই মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ যে আরো উঁচু হয়ে উঠছে তা আমরা জানতে পেরেছি। আর বিশ্বের মানুষের ওপর এর বিরূপ প্রভাবও প্রত্যক্ষ করছি; বিশেষ করে বিভিন্ন উপকূল অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিশ্বের বড় বড় উপকূলীয় বন্দরনগরীর চার কোটি মানুষ এখন হুমকির মুখে বড় ধরনের বন্যার কবলে পড়ার। আগামী ৫০ বছরে এই জনসংখ্যা বেড়ে এর ৩ গুণে পৌঁছাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনদের আশঙ্কা।
এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী দেশগুলোও এর বিরূপ প্রভাব থেকে আশঙ্কামুক্ত নয়। যেমন এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর এলাকাগুলো হচ্ছে : মিয়ামি বিচ, চেজাপিক, উপকূলীয় লুজিয়ানা ও উপকূলীয় টেক্সাস। সমুদ্রপৃষ্ঠতল উপরে উঠে আসায় কিছু এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।
অতি সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠ আর মাত্র ১০ সেন্টিমিটার উপরে উঠলে শুধু ওয়াশিংটন ডিসির ৬৮ হাজার মানুষের ২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিনষ্ট হবে। এর বাইরে ট্রপিক্যাল স্টর্ম নিউ ইয়র্কের মতো নগরীর সাবওয়ে ও টানেলকে পানিতে ভাসিয়ে ফেলে দিতে পারে হুমকির মুখে। তবে সবচেয়ে ভঙ্গুর এলাকা হচ্ছে দ্রুত জনসংখ্যা বেড়ে চলা উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিভিন্ন অঞ্চল; যেখানে অবকাঠামো উন্নয়নের তহবিলের অভাব রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে ওঠায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ভারতের কলকাতা ও মুম্বাই, চীনের গুয়াংঝু এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন নগরী। আসন্ন বিপদের মুখে আছে মালদ্বীপের মতো পুরো দেশ, তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। এর পরপরই আসন্ন এ বিপদের ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। কিছু সুমেরু বিশেষজ্ঞের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে যেতে পারে। তখন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার আড়াই কোটি থেকে সাড়ে তিন কোটি মানুষকে কর্মস্থান ও বাসস্থান হারাতে হতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দু-তৃতীয়াংশ ভূমি বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটারের কম উচ্চতার মধ্যে রয়েছে। এখনই অতিমাত্রায় জনবহুল, বাংলাদেশে সাড়ে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ ঠাসাঠাসি করে বসবাস করছে : যেখানে প্রতি বর্গমাইল ও প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে যথাক্রমে ৩,২৭৭ জন ও ১,২৬৫ জন। এর মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ উপরে উঠে আসার কারণে কোটি কোটি মানুষের স্থানচ্যুতি ঘটলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। সমুদ্রের উপরিতল আরো উঁচুতে উঠে আসলে উপকূল ছাড়িয়ে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে যাবে বাংলাদেশের নদীগুলোতে। তখন ২ কোটি লোকের জমিতে চাষবাস বন্ধ হয়ে যাবে। এসব মানুষ তখন ছুটে যাবে জনাকীর্ণ শহরগুলোতে। তখন পরিস্থিতি যে ভয়াবহ ধারণ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই মেরু অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ওপর সতর্ক নজর রেখে চলা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তেমনি অপরিহার্য হচ্ছে বাংলাদেশের ‘আর্কটিক কাউন্সিলে’ অবজারভার হয়ে এর তথ্য-উপাত্ত সরসরি পাওয়ার সুযোগ নেয়া। কারণ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ আমাদের বাকি দুনিয়া থেকে যতই বিচ্ছিন্ন থাক, এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পুরো মানববজাতির জন্যই ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন প্রতিটি দেশের সরকারের সম্মিলিত আন্তরিক জোরালো প্রয়াস।
বিষয়টির ওপর বাংলাদেশের সচেতন নজর রাখা দরকার। বাংলাদেশের উচিত আর্কটিক কাউন্সিল তথা সুমেরু পরিষদের একটি পর্যবেক্ষক দেশ হওয়া। কারণ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বরফ গলে বাংলাদেশের শুধু নিম্নাঞ্চলই সমুদ্রের পানির নিচে তলিয়ে যাবে না, নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপও বাড়বে। তা ছাড়া তখন বাস্তুচ্যুতিও ঘটবে দুঃসহ মাত্রায়। আজ বঙ্গোপসাগর উপকূলে যে নতুন নতুন চর জেগে উঠছে সেগুলো তখন আবার সমুদ্রের পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করবে। তাই সেখানকার যাবতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা চালাতে হবে এসব বিষয় মাথায় রেখে।
মেরু অঞ্চলের প্রশাসন চালায় আটটি আর্কটিক তথা সুমেরীয় রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত ‘আর্কটিক কাউন্সিল’। এর রয়েছে ৬টি স্থায়ী পার্র্টিসিপেন্ট, ৬টি ওয়ার্কিং গ্রুপ ও ৩৪টি অবজারভার। অবজার্ভার স্ট্যাটাস উন্মুক্ত নন-আর্কটিক দেশ, আন্তঃসরকার কমিটি, আন্তঃসংসদীয় কমিটি এবং এনজিওগুলোর জন্য। ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান রয়েছে এর অবজারভারদের মধ্যে। ভারত শুধু অবজাভারই নয়, মেরু অঞ্চলে দেশটির স্থায়ী গবেষণা কেন্দ্র ‘হিমাদ্রি’ রয়েছে।
আর্কটিক কাউন্সিলের নিজস্ব ডাটা ও গবেষণায় বাংলাদেশের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে মরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া ও হিমবাহের কারণে ‘সবচেয়ে ভঙ্গুর দেশ’ হিসেবে। বাংলাদেশের জন্য মেরু অঞ্চলের চলমান পরিবর্তন সম্পর্কে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য এই কাউন্সিল থেকে সরাসরি পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ এর অবজারভার নয়, অথচ এ সময়ে বাংলাদেশের জন্য আর্কটিক কাউন্সিলের অবজারভার স্ট্যাটাস অর্জন অপরিহার্য।