তাফসীর “সূরা আল ফালাক”আয়াত নং ০৩ ( ومن شر غاسق اذا وقب )”এবং রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে, যখন তা গভীর আচ্ছন্ন হয়ে যায়”।
غسقশব্দের অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া। কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ নিয়েছেন রাত্রি। وقبএর অর্থ অন্ধকার পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পাওয়া বা ছেয়ে যাওয়া।
সৃষ্টি জগতের অনিষ্টকারিতা থেকে সাধারণভাবে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়ার পর এবার অত্র আয়াতে কয়েকটি বিশেষ সৃষ্টির অনিষ্টকারিতা থেকে বিশেষভাবে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে বিশেষ করে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দেবার কারণ হচ্ছে এই যে, অধিকাংশ অপরাধ ও জুলুম রাতের অন্ধাকরেই সংঘটিত হয়। হিংস্র জীবেরাও রাতের আঁধারেই বের হয়।
আর এ আয়াতগুলো নাযিল হবার সময় আরবে অরাজকতা যে অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল তাতে অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে লুটেরা ও আক্রমণকারীরা বের হতো। তারা জনবসতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো লুটতরাজ ও খুনোখুনি করার জন্য।
এমনকি হিজরতে রাত্রিতে যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণনাশের চেষ্টা করছিল, তারাও রাতের আঁধারেই তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। তাই রাতের বেলা যেসব অনিষ্টকারিতা ও বিপদ-আপদ নাযিল হয় সেগুলো থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।
এ জন্য রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
ان الشمس اذا غربت انتشرت الشياطين فاكفتوا صبيانكم واحبسوا مواشيكم حتى تذهب فحمه العشاء-
“যখন সূর্য ডুবে যায়, তখন শয়তানরা সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই শিশুদেরকে তখন ঘরের মধ্যে রাখো এবং নিজেদের গৃহপালিত পশুগুলো বেঁধে রাখো, যতক্ষণ রাতের আঁধার খতম না হয়ে যায়।”। – বুখারী: ৩২৮০
শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:যেহেতু কালের বিবেচনায় অপরাধ ও বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম সংঘটিত হওয়ার নিরাপদ ও অভায়ারণ্য সময় হচ্ছে রাত। তাই রাতের অন্ধকারেই বেশিরভাগ অপরাধ সংঘটিত হয়। সেজন্য প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, জ্ঞাত ,অজ্ঞাত সকল ধরনের অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা অত্র আয়াতে দেওয়া হয়েছে।