মুসলিম বিশ্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে সুকুক বা ইসলামিক বন্ড জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। সুকুকের বাজার ছাড়িয়েছে ট্রিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে সুকুক। যদিও বাংলাদেশে সুকুকের সুচনাই হয়নি এখনো। এ অবস্থায় দেশের বাজারে সুকুক’কে জনপ্রিয় ও কার্যকর করে তুলতে আয়োজন করা হয়েছে চার দিন ব্যাপী কর্মশালার।
যৌথ উদ্যোগে কর্মশালাটি আয়োজন করেছে সেন্ট্রাল শরিয়াহ্ বোর্ড ফর ব্যাংকস অব বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল শরিয়াহ্ রিসার্চ একাডেমি ফর ইসলামিক ফিন্যান্স (ইসরা)। শনিবার অনলাইন প্লাটফর্মে (জুম ওয়েবিনারে) আয়োজিত এ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সারাবিশ্বেই সুকুক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমরা চাইছি, উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশেও শরীয়াহভিত্তিক ইসলামিক বন্ড তথা সুকুক চালু হোক। এজন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের পুঁজিবাজারে সুকুক চালু করা সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এম আযীযুল হক বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিগগিরই সুকুক প্রবর্তন করার কথা ভাবছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ মিশন (বিএসইসি) ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত নীতিমালা ইস্যু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। ব্যাংকসহ কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী মার্কেটে সুকুক চালু করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট ২৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বেলা ২টায় শুরু হয় কর্মশালা। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিআইবিএম, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের ১৬৫টি জন নির্বাহী ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। চারদিন ব্যাপী এ কর্মশালাটি ২৯ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। প্রতিদিন বেলা ২টি থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ার্কশপের গণমাধ্যম সহযোগী হিসেবে থাকছে বণিক বার্তা।
প্রসঙ্গত, বৈশ্বিকভাবে সুকুক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও বাংলাদেশে এটি নিয়ে কাজ হচ্ছিল কচ্ছব গতিতে। এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নেই এক দশকের বেশি সময় নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর মুদ্রাবাজারে সুকুকের ব্যবহার নিয়ে এখনো নীতিমালা প্রণয়নের কাজই শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। সামগ্রিক এ পরিস্থিতি নিয়ে চলতি বছরের ২৩ জুলাই ‘সুকুকের অগ্রগতি নিয়ে হতাশ ইসলামী ধারার ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বণিক বার্তা। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সজাগ হয়। এ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় চারদিন ব্যাপী কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশের সেন্ট্রাল শরিয়াহ্ বোর্ডের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম আযীযুল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসরার নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মোহামদ আকরাম লালদিন। অন্যদের মধ্যে বাহরাইনভিত্তিক সংগঠন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনসের (এএওআইএফআই) সেক্রেটারি জেনারেল ওমর মুস্তফা আনসারী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক অর্থ সচিব আরাস্তু খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ তারিকুজ্জামান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. নাজমুল হাসান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুস সামাদ ও ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান রুমি এ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. এম. কবির হাসান বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল মো. আবদুল্লাহ শরীফ।