ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গত ফেব্রুয়ারির দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক ছাত্র নেতা ওমর খালিদকে গ্রেফতার করেছে।
উমর খালিদকে (৩৩) রোববার রাতে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) এর আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । এই সহিংসতার ঘটনায় কমপক্ষে ৫৩ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই মুসলমান ছিলেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের এবং কর্মীদের উপর পুলিশের ইউএপিএ প্রয়োগ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। এই আইন জামিনের সুযোগ হ্রাস করে, যার অর্থ বিচার ছাড়াই জেলের শর্ত আরোপ হবে।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পেছনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সমাজ কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত ডিসেম্বরে পাস হওয়া ইউএপিএর অধীনে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিল্লির দাঙ্গায় সুষ্ঠু তদন্ত করার পরিবর্তে পুলিশ এটিকে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি মহড়াতে পরিণত করেছে।
ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট (ইউএএইচ) থেকে নাদিম খান।
জাতিসংঘ কর্তৃক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কে, “মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক” বলা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে তিনটি প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য দ্রুত নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করে, তবে সেখানে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সিভিল সোসাইটি গ্রুপ ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট (ইউএএইচ) বলেছে, প্রাক্তন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খালিদকে “দোষী সাব্যস্ত” করা হয়েছে।
"উমর খালিদকে দিল্লির দাঙ্গায় 'মাস্টারমাইন্ড' হিসাবে চিহ্নিত করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লির দাঙ্গায় সুষ্ঠু তদন্ত করার পরিবর্তে পুলিশ এটিকে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত বল প্রয়োগের শিকারের মহড়ায় পরিণত করেছে," ইউএএইচ থেকে খান আল জাজিরাকে জানিয়েছেন।
সিএএ পাসের ফলে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
“পুলিশ প্রথমে তাকে দোষী সাব্যস্ত” করার জন্য তার বক্তৃতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এবং পরবর্তীতে সাক্ষীদের বানোয়াট করার চেষ্টা করেছিল। এই ঘটনা গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরকে গলা টিপে হত্যা করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বলা যায়।
গ্রেফতার হচ্ছে নির্দোষ কর্মীরা
সিএএবিরোধী বিক্ষোভকারীদের উস্কানি দেওয়া এবং মদদ দেওয়ার অভিযোগে দিল্লি পুলিশ বিশিষ্ট নেতাকর্মী ও শিক্ষাবিদদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ঠিক এর একদিন পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দাঙ্গার ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৭০০ টিরও বেশি এফআইআর দায়ের করেছে । তবে নেতাকর্মীরা বলছে যে, ঘৃণ্য বক্তৃতা দেওয়া সত্ত্বেও সরকার দলীয় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অনেক রাজনীতিবিদ এবং সমর্থকরা রেহাই পেয়ে গেছেন।
দাঙ্গার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পরিবর্তে পুলিশ উমর খালিদ এবং আরো কিছু লোককে জড়িত করার চেষ্টা করছে । যেমন, সৈয়দ কাসি্ রসুল ইলিয়াস, খালিদের বাবা
ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সিএএ-র বিপক্ষে একটি শক্তি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের স্থানে অতর্কিত আক্রমণ করার পরেই সহিংসতা শুরু হয়েছিল।
বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ টুইট করেছেন, “তদন্তের বেড়াজালে শান্তিপূর্ণ কর্মীদের দোষী সাব্যস্ত করা পুলিশের এক গভীর ষড়যন্ত্র ।”
দিল্লি পুলিশের একজন মুখপাত্র প্রথমে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে আল জাজিরার সাথে একটি বিবৃতি শেয়ার করে জানায় যে, খালিদকে সোমবার আদালতে হাজির করা হবে।
‘মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় ভারতের পুলিশ ‘জড়িত’’, অ্যামনেস্টির অভিযোগ।
খালিদের বাবা সৈয়দ কাসিম রসুল ইলিয়াস আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, রবিবার তার ছেলেকে পুরো দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পরে স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মামলায় গ্রেপ্তারের আগে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা ভারতের একটি সাধারণ বিষয়।
খালিদ, উপজাতির অধিকার নিয়ে পিএইচডি করা এই সাবেক ছাত্রকে, দিল্লিতে সংগঠিত ভয়াবহ সহিংসতার সাথে জড়িত অন্য আরেকটি মামলায় ইউএপিএর আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
ইলিয়াস আল জাজিরাকে জানান, “প্রথম এফআইআরটি অনেক আগে দায়ের করা হয়েছিল, সেই থেকেই খালিদের গায়ে আসামির তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগসহ অনেক অভিযোগ আনা হয়েছিল,” ।
প্রত্যেকেরই জানা আছে কারা দাঙ্গাবাজি শুরু করেছে, কারা ঘৃণ্য বক্তৃতা করেছে, কারা মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং কারা সম্পত্তি ও জীবন হারিয়েছে। দাঙ্গার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পরিবর্তে পুলিশ উমর খালিদ এবং আরো কিছু লোককে জড়িত করার চেষ্টা করছে ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া গত মাসে প্রকাশিত তার প্রতিবেদনে ফেব্রুয়ারির সহিংসতায় দিল্লি পুলিশকে ” দুষ্কর্মকারী ও পক্ষপাতযুক্ত” বলে অভিযুক্ত করেছে।
তবে পুলিশের দাবি তারা তদন্তের স্বার্থে দাঙ্গায় সম্পৃক্ত থাকা ১৫৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। দিল্লি পুলিশ রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “দাঙ্গা সম্পর্কিত মামলায় আড়াইশ’রও বেশি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, যার মধ্যে ১১৫৩ আসামি (৫৭১ হিন্দু এবং ৫৮২ মুসলিম) দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছে।