দীনের সঠিক জ্ঞান অর্জন বা ইলম শিক্ষা মুমিনের উপর প্রথম ফরয। আল্লাহ বলেন:
“অতএব তুমি জান (জ্ঞান অর্জন কর) যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই।”
১.
এ আয়াত থেকে আমরা জানতে পারছি যে, ঈমানের আগে ইলম ফরয। কিভাবে ঈমান আনতে হবে এবং কিভাবে ঈমান বিশুদ্ধ হবে তা প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে। অনুরূপভাবে সকল কর্মের সফলতা ও কবুলিয়্যত নির্ভর করে সে বিষয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞানের উপর। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরয। প্রাতিষ্ঠানিক ইলম শিক্ষা সম্ভব না হলেও ব্যক্তিগত পড়ালেখা ও শোনার মাধ্যমে এ ফরয আদায় করতে হবে। ইলম শিক্ষা করলে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত পালনের সাওয়াব ও মর্যাদা লাভ করব। শুধু তাই নয়, ঈমানের পরে ইলমই হলো আল্লাহর নিকট মর্যাদা বৃদ্ধির প্রথম উপায়। আল্লাহ জানিয়েছেন যে, ঈমান এবং ‘ইলম’-এর দ্বারাই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে তাদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন। তোমরা কি কর্ম কর তা আল্লাহ সম্যক অবগত আছেন।”
২.
অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে ইলম শিক্ষার সাওয়াব ও মর্যাদা বেশি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“ইবাদতের ফযীলতের চেয়ে ইলমের ফযীলত অধিক উত্তম।”
৩.
ইলম শিক্ষা করার জন্য পথে চলা, হাঁটা, কষ্ট করা ইত্যাদিও ইবাদত। এগুলির মর্যাদা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বেশি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যদি কেউ ইলম শিক্ষার মানসে কোনো পথে চলে, তবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। ফিরিশতাগণ ইলম শিক্ষার্থীর এই কর্মের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার জন্য তাদের পাখনাগুলি বিছিয়ে দেন। আলিমের জন্য আসমান এবং জমিনের সকলেই ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারকাররাজির উপরে চাঁদের যেমন মর্যাদা, ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত ‘আবিদের’ উপরে ‘আলিমের’ মর্যাদা তেমনই। আলিমরাই হচ্ছেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীরা (আ) কোনো টাকা-পয়সা দীনার-দিরহাম উত্তরাধিকার রেখে যান নি। তাঁরা শুধু ইলম-এর উত্তরাধিকার রেখে যান। কাজেই যে ব্যক্তি ইলম গ্রহণ করল, সে নবীদের উত্তরাধিকার থেকে একটি বড় অংশ গ্রহণ করল।”
৪.
আমরা হয়ত মনে করতে পারি যে, এই মহান মর্যাদা বোধহয় শুধু মাদ্রাসায় যারা পড়েন অথবা যারা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ইলম শিক্ষা করেন তাদের জন্যই। প্রকৃত বিষয় তা নয়। যে কোনো বয়সের যে কোনো মুমিন ওয়াজ মাহফিলে, মসজিদে, খুতবার আলোচনায়, আলেমের নিকট প্রশ্ন করে, বই পড়ে বা যে কোনো ভাবে ইলম শিক্ষা করতে গেলেই এই মর্যাদা ও সাওয়াব লাভ করবেন।
ইলম শিক্ষার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করলে, কোনো আলিমের নিকট গমন করলেও একইরূপ সাওয়াব ও মর্যাদা পাওয়া যাবে বলে বিভিন্ন হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন:
“যদি কোনো ব্যক্তি সকাল সকাল বা দ্বিপ্রহরের পূর্বে মসজিদে গমন করে, তার গমনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় (ইমামের খুতবা থেকে) কোনো ভাল কিছু শিক্ষা করা অথবা শিক্ষা দেওয়া, তবে সেই ব্যক্তি একটি পরিপূর্ণ হজ্জের সাওয়াব লাভ করবে।”
৫.
অন্য হাদীসে তিনি বলেন:
“যে ব্যক্তি আমার মসজিদে আগমন করবে, তার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে কোনো ভাল বিষয় শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেওয়া, সেই ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণের মর্যাদা লাভ করবেন।”
৬.
অন্য হাদীসে তিনি সাহাবী হযরত আবূ যার (রা) কে বলেন:
“তুমি যদি যেয়ে কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা কর, তবে তা তোমার জন্য ১০০ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করার থেকেও উত্তম। আর যদি তুমি ইলমের একটি অধ্যায় শিক্ষা কর- আমলকৃত অথবা আমলকৃত নয়- তবে তা তোমার জন্য ১০০০ রাক‘আত সালাত আদায় থেকেও উত্তম।”
৭.
আমরা দেখেছি যে, মহান আল্লাহ ঈমানের পরে ইলমকে মর্যাদার মূল উৎস বলেছেন। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে, সকল সৃষ্টি আলিমদের ও শিক্ষকদের জন্য দুআ করে। সকল মুমিনের দায়িত্ব আলিমদের ও শিক্ষকদের সম্মান করা।
———————————
১.সূরা মুহাম্মাদ: ১৯ আয়াত।
২.সূরা মুজাদালা: ১১ আয়াত।
৩.হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/১৭১; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১২০; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/১৬। হাদীসটি সহীহ।
৪.বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৭; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২০৭৪; তিরমিযী, আাস-সুনান ৫/২৮, ৪৮; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৮১-৮২। হাদীসটি হাসান।
৫.মুনযিরী, আত-তারগীব ১/৫৯; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১২৩; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২০। হাদীসটি হাসান।
৬.ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৮২; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২০। হাদীসটি সহীহ।
৭.ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৭৯; মুনযিরী, আত-তারগীব ১/৫৪, ২/২৩২। মুনযিরী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
খুতবাতুল ইসলাম
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ