Wednesday, November 29, 2023

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমবিবিধপার্থিব জীবনে কি আল্লাহ্‌কে দেখা সম্ভব? পঞ্চম পর্ব - আখেরাতে সফল কারা...

পার্থিব জীবনে কি আল্লাহ্‌কে দেখা সম্ভব? পঞ্চম পর্ব – আখেরাতে সফল কারা ?

যারা পথভ্রষ্ট (আদ্‌দ্বোয়াল্লীন), ভ্রান্ত মতবাদের প্রবর্তক, প্রচারক এবং অনুসারী, তাদের মতবাদ হচ্ছে, আল্লাহ্‌কে না দেখে ‘আমল করলে, ইবাদত করলে, সালাত আদায় করলে, সে ‘আমল, ইবাদত ও সালাত ইত্যাদি আল্লাহ’র দরবারে গ্রহনযোগ্য হবে না। তারা এটাও বিশ্বাস করেন যে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহ্‌কে দেখতে পেলো না – তাদের জন্য আখেরাতেও কিছু নেই। আখেরাতেও তারা আল্লাহ্‌কে দেখতে পাবে না।

আসলেই কি তাই?

আগেই বলেছি, এহেন ভ্রান্ত দাবীর পিছনে কুরআনীম-মুবীনের মুবীন অর্থাৎ স্পষ্টতা নেই। কুরআনীম মুবীনে – আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, যারা আল্লাহ্‌কে না দেখে ভয় করে, আল্লাহ্‌কে না দেখে বিশ্বাস করে, তারাই মুত্তাকীন, তারাই সুনিশ্চিতভাবে আখেরাতে সফলকাম এবং তারাই আখেরাতে কল্যাণকর প্রতিদান পাবেন। আসুন এক এক করে কুরআনীম-মুবীনের স্পষ্ট আয়াতগুলো দেখে নেই।

সুরাতুল মা’য়েদাতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা’আলা বলেন,

আল্লাহ্‌কে না দেখে বিশ্বাস করা আর ভয় করার এই পরীক্ষা শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্যই নয়, বরঞ্চ পূর্ববর্তী নবী রাসুলগণের (আঃহিঃসাঃ) ক্কওমের জন্যও ছিল । সুরাতুল-আম্বিয়াতে বলা হয়েছে,

আরো সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে। ভেবে দেখুন সেই দিনটির কথা। যেদিন কেউ কারো বিন্দুমাত্র উপকারে আসবে না। এমনকি নিকট আত্মীয়-স্বজনও না। সেদিন কারা সফলকাম হবে? সুরাহ ফাতির এ বলা হয়েছে,

অর্থাৎ যারা আল্লাহ্‌কে না দেখে ভয় করে এবং বিনীতভাবে সালাতে নিজেকে আল্লাহ’র কাছে সমর্পন করে, সেই ভয়াবহ দিনে তারাই হবে প্রকৃত সফলকাম।

যারা আল্লাহ্‌কে দেখার দাবী করেন, তারা কি এখনো দাবী করবেন, দুনিয়াতেই আল্লাহ্‌কে দেখা যায়? যদি এখনো তা দাবী করেন, তাহলে কিতাবুম্‌-মুবীন থেকে একটি সুস্পষ্ট আয়াত উপস্থাপন করুন নিজেদের দাবীর পক্ষে।

বস্তুত আল-কুরআনের মূল-উপজীব্যই হচ্ছে – না দেখে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের প্রতি পরিপূর্ন বিশ্বাস স্থাপন করা। যাকে আল-কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘ইলমাল-ইয়াকীন’ – যুক্তিযুক্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে বিশ্বাস। আসুন আরো কিছু আয়াত জেনে নেওয়া যাক।

সুরাহ ইয়াসীনে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদের প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) কে এই বলে সান্তনা দিয়েছিলেন যে, আল্লাহ’র ওহী প্রচার করে সবাইকে হিদায়াত প্রদান করা যাবে না। কারন, যারা চোখ, কান, অন্তর থাকা সত্ত্বেও ইন্দ্রিয় শক্তি এবং বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার না করে, আল-কু’রআনের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে, তাদের সতর্ক করা আর না করা একই কথা। তারা আল্লাহ’র সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করেই যাবে আর গোমরাহীর পথে চলতেই থাকবে। শুধুমাত্র তাদেরকেই সতর্ক করা যাবে, যারা আল্লাহ্‌কে না দেখেই ভয় করে, আর প্রকৃতপক্ষে তারাই হবে আখেরাতে সম্মানিত এবং পুরস্কৃত সফল মানুষদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্‌ বলেন,

আর ঠিক এই আয়াতের পরপরই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ইতিহাস থেকে এক গল্পের মিসাল (উদাহরন) দিয়ে এক জান্নাতি লোকের কাহিনী বর্ননা করেন, যিনি আল্লাহ্‌কে না দেখেও বিশ্বাস করেছিলেন এবং তার ক্ক’ওমের মাঝে প্রেরিত তিনজন রাসুল (আঃহিঃসাঃ) এর কথা বিশ্বাস করে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সত্যবাদী সেই মানুষটিকে তার নিজ ক্ক’ওমের মানুষেরা হত্যা করে। আর সাথে সাথে সেই শহীদ লোকটিকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দেওয়া হয়। লোকটি সেই সুসংবাদ পেয়ে প্রথমেই যে কথাটি বলেছিল – “হায় আফসোস! যদি আমার ক্কওমের লোকজন জানতো, আমার রব্ব আমাকে ক্ষমা করেছেন, আর আমাকে সম্মানিত মানুষদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেছেন”।

সুতরাং যারা বলেন, আল্লাহ্‌কে দুনিয়াতে না দেখলে – আখেরাতে কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে না, তাদের এই ধরনের মনগড়া কথা যে কত বড় গোমরাহী ও জাহেলীপনা, সেই বিষয়ে নিশ্চয়ই আর কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।

সেইদিন (শেষ বিচারের দিন), যারা আল্লাহ্‌কে না দেখেই বিশ্বাস করতো, প্রতিনিয়ত আল্লাহ্‌কে স্মরন করতো, প্রতিমূহুর্ত আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল রাখতো, তাদের সামনে জান্নাতকে হাজির করা হবে, আর বলা হবে – শান্তির সাথে প্রবেশ করো – এটাই সেই চিরস্থায়ী বাসস্থান – যার ওয়াদা করা হয়েছিলো। সুরাহ ক্কা-ফ্‌ এ আল্লাহ্‌ বলেন,

সুতরাং কারা হবে জান্নাতের অধিকারী? যারা না দেখে আল্লাহ্‌কে ভয় করতো।

যারা দুনিয়াতেই আল্লাহ্‌কে দেখার দাবী করছেন, তারা একবার ভেবে জবাব দেবেন –আছে কি আল-ক্কু’রআনে এমন একটি আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ্‌কে দেখেআমল করো? আছে কি আল-ক্কু’রআনে এমন একটি আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে – যারা আল্লাহ্‌কে দেখে ইবাদত করবে – তারাই হবে আখেরাতে সফলকাম?”

উত্তর কষ্ট করে না খুঁজলেও হবে। কারন উপরের প্রশ্ন দু’টির উত্তর হচ্ছে – না। আপনাদের দাবীর স্বপক্ষে একটাও সুস্পষ্ট আয়াত নেই।

আসুন আরো একটি আয়াত দেখি। সুরাতুল-হাদীদে আল্লাহ্‌ বলেন,

শুধুমাত্র আল্লাহ্‌কে না দেখে বিশ্বাস করলেই হবে না, না দেখা সত্ত্বেও আল্লাহ্‌কে এবং আল্লাহ’র রাসুলগণকে সাহায্যও করতে হবে। আল্লাহ্‌কে কর্জ দিতে হবে, আল্লাহ্‌ এবং আল্লাহ’র রাসুলের আনুগত্য করতে হবে, আল্লাহর প্রেরিত দিক-নির্দেশনা (Guidance – হিদায়াত), কিতাবুন-মুবীনকে অনুসরন করতে হবে। তা না হলে – সীরাতুল মুস্তাকীম থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাই বেশী।

আরো একটি আয়াত দিয়ে শেষ করছি। অনেক পছন্দের আয়াত সমূহের মাঝে একটি অতি প্রিয় আয়াত। এটি এমন একটি সুরাহ, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিরাতে ঘুমাবার আগে এই সুরাহটি পাঠ করে, এই সুরাহটির সতর্কবানী স্মরন রেখে নিজের জীবনকে এই সুরার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত করে, তাহলে সুরাহটি আখেরাতে আল্লাহ্‌’র কাছে সেই ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম মুক্তির সুপারিশ করবে, ততক্ষন পর্যন্ত, যতক্ষন না পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হয়। সুরাহটি হচ্ছে সুরাতুল মুল্‌ক্‌।

সুরাহটির মূল অংশে রয়েছে, জাহান্নামী মানুষদের বর্ননা। যখন জাহান্নামের অধিবাসীদের দলে দলে জাহান্নামের ক্রোধান্বিত গর্জন করা লেলিহান আগুনের মাঝে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নামের প্রহরীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে – “তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী (নবী-রাসুল) আসেননি, আল্লাহ’র ওহী আসেনি?” এই প্রশ্নের জবাবে জাহান্নামীরা জবাব দেবে – “হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছি, আল্লাহ্‌ ওহীকে অস্বীকার করেছি। হায় আফসোস! সেদিন যদি আমরা আমাদের বিবেক-বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আজকে আমাদের এই ভয়ংকর আগুনের বাসিন্দা হতে হতো না”।

অন্যদিকে জান্নাতের অধিবাসীদের বর্ননায় বলা হচ্ছে,

সুতরাং আখেরাতে ক্ষমা এবং পুরস্কার একটি সংরক্ষিত বিষয়, সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। আর কারা এই মাগফেরাত আর আজরের প্রকৃত হক্কদার? শুধুমাত্র তারা – যারা আল্লাহ্‌কে না দেখে বিশ্বাস করে। অন্তরে আখেরাতের ভয় রাখে, রব্বের সামনে হাজির হতে হবে – সেই ভয়ে যাদের অন্তর কেঁপে উঠে।

যারা আল্লাহ্‌ প্রেমের শরাব পিঁয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকার দাবী করেন, মনগড়া কথা বলেন – আল্লাহ্‌কে ভালবাসার দাবী করেন, আল্লাহ্‌কে দুনিয়াতে দেখার দাবী করেন, তাদের জন্য আল-কুরআনের ভয়ংকর সতর্কবানী ছাড়া আর কিছুই নেই। তাদের কথা শুনতে মধুর হলেও – তাদের কথার সাথে আল-কুরআনে ব্যক্ত আল্লাহ’র দিক-নির্দেশনার বিন্দুমাত্র মিল নেই।

আল-কুরআনের অপর নাম – ফুরক্কান। সত্য আর মিথ্যার মাঝে পার্থক্য বিধানকারী এক অতুলনীয় কিতাব। এ এমন এক মিজান, যাতে সহজেই পরিমাপ করা যায়, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।

সুতরাং আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে – আর কতকাল প্রতারকদের মিষ্টি কথায় প্রতারিত হবেন। মিষ্টি কথা, যত মধুরই হোক না কেন, আখেরাতে তা বিন্ধুমাত্র কাজে আসবে না।

সুতরাং ফিরে আসুন আল-কু’রআন প্রদর্শিত সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

5 × five =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য