জনাব হাসান মাহমুদ সাহেব,
প্রথমেই ধরে নিয়েছিলাম আপনি আপনার নিজ জ্ঞানপ্রসূত প্রজ্ঞা দিয়ে মূর্তি বনাম ভাস্কর্যকে ব্যাখ্যা দিয়ে ভাস্কর্যের পক্ষে ছাপাই গেয়েছেন, কিন্ত যখন দেখলাম আপনি কুরআন ও হাদিসকে ভাস্কর্যের বিষয়ে ভুলভাবে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, পাশাপাশি বিডিনিউজে আপনার কর্মযজ্ঞের যে পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে, তাতে আমার মত স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিও আর নিরব থাকতে পারে না। আপনার বোধোদয় হলেই এবং আপনার মতের পক্ষে যারা সাড়া দিয়েছিল তাদের ভুল ভাঙবে, এই হউক আমার প্রাপ্য, আশা করি আল্লাহ্ তা’আলা আখেরাতে আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না।
ইতিমধ্যে আপনার দুইটা নিবন্ধ বিডিনিউজে প্রকাশিত হয়েছে[1] ক) প্রতিমা বনাম ভাস্কর্য: হাদিস ও কোরানের রেফারেন্স, খ) মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক নামে। সত্যকে কোনভাবেই মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না, যতই কথামালা দিয়ে বক্তব্যের কলেবর বাড়ানো হউক না কেন, আল্লাহ্ তা’লা বলেন, বলুন, (হে মুহাম্মাদ) সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (আল কুরআন সুরা ইসরা, আয়াত ৮১) আমি মাত্র কয়েকটি অনুচ্ছেদ দিয়েই আপনার ভুল ভাংগার চেষ্টা করবো।
১) আরবীতে মূর্তি ও ভাস্কর্য কে “তামাসিল” বলা হয়, যার আদী শব্দ “মেসাল” অর্থাৎ অনুরুপ, ছবি, চিত্র, একরকম, প্রতিবিম্ব, তৈরী, নরত্বারোপ, প্রতিকৃতি, সাদৃশ্য ইত্যাদি, এখন যে বিষয়টা পরিষ্কার করা দরকার তা হোল, ঐ বস্তুটা কি প্রানহীন অবয়ব হতে হবে কিনা? এখানে রাসুল (সঃ) এর এই হাদিসই প্রনিধানযোগ্য, তা হোল, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদের সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার করো। (সহীহ বুখারী : ৭৫৫৭; ৭৫৫৮)। আরেকটা হাদিস জেনে নিন, নবী করিম (সা.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভেতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি এবং তাঁর রাসুলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ গদি কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরো বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮১)
অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ঘরে কুকুর থাকে বা প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪৯) এখানে আপনার কি কিছু বলার আছে? আর রাসুল (সঃ) যে নিজের থেকে যে কিছু বলেন না, কুরআন মাজিদের সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা।(সুরা আল হাক্কা, আয়াত ৪৪-৪৬) এই আয়াত কি যথেষ্ট নয়? কুরআনুল কারিম ও সহীহ হাদিস কোন ভাবেই পরস্পর বিরোধী নয়। অতএব অনুবাদের উপর নির্ভর করে কুরআনুল কারিমের মুল ভাব বা অর্থকে স্ববিরোধী উপস্থাপনা করা কোনমতেই একজন দায়ীর উচিত না। অন্তত আল্লাহ্ তা’আলার সাথে প্রবঞ্চনা করা নিজের ক্ষতির নামান্তর। আপনি আরবী মূল হর্ফ উপর ভরসা করবেন, সরাসরি কোন অনুবাদের উপর নয়, সবাই তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নির্ভর অনুবাদ করেছে।
অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিশেষ করে ইসলামের মৌলিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সর্বোপরি আল্লাহ্ ও তার রাসুলের নিসৃত বানীর ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত ছিল আপনার। অনুবাদের ভিন্নতায় অর্থ কি ভাবে পাল্টায় তার উদাহরণ দেখুন। আপনি কুরআনুল কারিমের সুরা সাবার আয়াত ১৩ এর যে অনুবাদ নিয়েছেন তা কিন্তু সঠিক নয়, ঐ একই আয়াতের অনুবাদ দেখুন[2],
আরবীর সমস্ত dictionary খোঁজ নিয়ে দেখুন, যখন তা আল্লাহ্ রাসুল দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয় তখন ভাস্কর্য হতে হবে প্রানহীন কোন প্রানীর নয়, না হলে আল্লাহ্র আয়াত ও রাসুলের কথা মিথ্যা হয়ে যাবে।
উপরোক্ত বক্তব্যই কি যথেষ্ট নয় যে আপনার উদ্ধৃত সমস্ত হাদিসের অনুবাদ ভুল ভাবে নেওয়া হয়েছে, দুঃখের বিষয়, এত গুলো হাদিসের উদ্ধৃতি দিলেন, অথচ উপরের হাদিস বেমালুম ভুলে গেলেন নাকি লুকিয়ে ফেললেন। আর আপনি তা ইংরেজী থেকে বাংলা করেছেন। অন্তত আল্লাহ্র কালামের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকা জরুরী, কাদের কাছ থেকে জানবেন, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে দিক নির্দেশনা আছে, নিজের প্রজ্ঞা বা ব্যক্তিগত ইল্ম খাটানোর কোন সুযোগ নাই। ডঃ হাশিম কামালীকে উদ্ধৃত করে কি বুঝাতে চাচ্ছেন, তাও পরিষ্কার না। ইসলাম শাশ্বত ধর্ম, এর কোন পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজনের প্রয়োজন নাই। দেখুন, রাসুল (সঃ) বানী,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، .
‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, “আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, অতঃপর যারা তাদের পরবর্তী। অতঃপর যারা তাদের পরবর্তী ( অর্থাৎ তিন প্রজন্ম রাসূল (সাঃ) এর যুগ সহ”। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৫২ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
আপনারা যারা ইল্ম বিতরণ করছেন, ভেবে দেখুন আপনি নিচের হাদিস অনুসারে কোন শ্রেণীতে পড়েন,
يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ، يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ، وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ، وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلِينَ.
এই ইলমকে ধারণ করবে প্রত্যেক উত্তর প্রজন্মের আস্থাভাজন শ্রেণি। তাঁরা একে মুক্ত রাখবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার থেকে এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে। –শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস, ৩৮৮৪; শারাফু আসহাবিল হাদীস, খতীব বাগদাদী, পৃ. ২৯; বুগইয়াতুল মুলতামিস, আলাঈ, পৃ. ৩৪, আশা করি শুধরে নিবেন।
এবার আসি ভাস্কর্য যে প্রকারন্তরে পূজারই বেদী, তা উদঘাটন করি। পুজার বেদীতে দেব/দেবীকে বিশ্বাসে এনে অর্চনা তথা প্রশংসা করা, ফুল/ফল, পিদিম/চেরাগ/ মোমবাতি জ্বালিয়ে তার কাছে কিছু চাওয়া, এটাই মুল উদ্দেশ্য। আর পাথরের তৈরী ভাস্কর্যকে ব্যক্তির বা প্রানীর প্রতিবিম্ব মনে করে কোন কোন নির্দিষ্ট দিনে স্তুতি করা, ফুল ছড়ানো এবং শেষে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ সভা শেষ করা। এবার দেখুন কতটুকু পার্থক্য এই দুইয়ের মধ্যে। আর প্রকারন্তরে যে ভাস্কর্য একদিন পুজার বেদী হবে না এই গ্যারান্টি আপনি কি দিতে পারেন?
নুহ (আঃ) ঘটনা তাহলে শুনুন আল কুরআনে, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, তারা বলছেঃ তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নসরকে (সুরা নুহ, আয়াত ২৩) এই ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নসর প্রথমে কিন্তু ভাস্কর্যই ছিল, পরে কালক্রমে তাদেরকে পরবর্তী এক প্রজন্ম পূজা করতে শুরু করে। কাফিররা পরস্পর এই চুক্তিতেও উপনীত হয়েছিল যে, আমরা আমাদের দেব-দেবীর বিশেষত; এই পাঁচ জনের উপাসনা পরিত্যাগ করব না। আয়াতে উল্লেখিত শব্দগুলো পাঁচটি মূর্তির নাম। হাদীসে এসেছে, এই পাঁচজন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলার নেক ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দা ছিলেন। তাদের সময়কালে ছিল আদম ও নূহ্ আলাইহিস সালাম এর আমলের মাঝামাঝি। তাদের নেক ভক্ত ও অনুসারী ছিল। তাদের ওফাতের পর ভক্তরা সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদত ও বিধি বিধানের প্রতি আনুগত্য অব্যাহত রাখে। কিছুদিন পর শয়তান তাদেরকে এই বলে প্ররোচিত করলঃ তোমরা যেসব মহাপুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে উপাসনা কর যদি তাদের মূর্তি তৈরী করে সমানে রেখে দাও তবে তোমাদের উপাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং বিনয় ও একাগ্রতা অর্জিত হবে। তারা শয়তানের ধোঁকা বুঝতে না পেরে মহাপুরুষের প্রতিকৃতি তৈরী করে উপাসনালয়ে স্থাপন করল এবং সম্পূর্ণ নতুন এক বংশধর তাদের স্থলাভিষিক্ত হল। এবার শয়তান এসে তাদেরকে বোঝাল, তোমাদের পূর্বপুরুষের ইলাহ্ ও উপাস্য মুর্তিই ছিল। তারা এই মূর্তিগুলোই উপাসনা করত। এখান থেকে প্রতিমা-পূজার সূচনা হয়ে গেল। [বুখারী; ৪৯২০] উপরোক্ত পাঁচটি মূর্তির মাহাত্ম্য তাদের অন্তরে সর্বাধিক প্রতিষ্ঠিত ছিল বিধায় তাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর][3] গ্যারান্টি দিতে পারেন যে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম ভাস্কর্যের পূজা করবে না, তা হলে ভাবুন, আপনি কিন্তু তার বীজ বপন করে গেলেন, অতএব তাদের অর্চনার গুনাহর ভাগি আপনিও হবেন, রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য এ পথের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময় কিছুমাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার উক্ত পথের অনুসারীদের গুনাহের সমান গুনাহ হবে, এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র কম হবে না।” [মুসলিম, হাদীস নং – ৪৮৩১]
কোন দেশ দিয়ে ইসলামকে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না, ইসলাম এসেছে পৃথিবীকে শাসন করতে আল্লাহ্র আইনের দ্বারা। কারন পৃথিবীর একমাত্র স্রষ্টা তিনি। এখানে এখন আমরা স্বাধীন অভিব্যক্তি প্রয়োগ করতে পারঙ্গম যেহেতু আল্লাহ্ আমাদেরকে সেই সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু পাশাপাশি তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু এবং আমাদেরকে পদস্খলন করে দিতে পারে। তাই কোন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ক্ষমতার জোরে যাচ্ছে তাই করতে পারে, কিন্তু তা কোনভাবেই কোন মুমিনের জন্য উদাহরণ হতে পারে না। ইসলামী বিদ্ধগ্ধ জ্ঞানীরা সব সময়েই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছে, কেউ শুনুক আর নাই শুনুক। আপনি কি ভাবে ঢালাও ভাবে বলে দিলেন যে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে এ বিষয়ে কেউই কোন উচ্চবাচ্য করে না, তাহলে দেখুন সউদী শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদের ফতোয়া, ভাস্কর্যের বিষয়ে[4]। মাদ্রাসার ছাত্রদের ভাস্কর্যের পাশে ছবি তুলে তা নিউজ হিসাবে ছাপালেই ভাস্কর্য জায়েজ হয়ে যায় না। ভাস্কর্য নিশ্চিহ্ন করার পক্ষে যদি আপনি কোন মুসলিম দেশে কোন দলীল নাও পেয়ে থাকেন, তাহলেই কি ভাস্কর্য জায়েজ হয়ে যায়? আল্লাহ্ বলেছেন, তাঁর বিধানের কোন পরিবর্তন কস্মিনকালেও হবে না, এই বিশ্বাস থাকলে আমার আর বাড়িয়ে বলতে হবে না।
যে হাদিস কে আপনি দলিল হিসাবে সাব্যস্ত করে ভাস্কর্যকে জায়েজ করছেন, তা আরও বড় অপরাধ বা গোমরাহ দিকে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছেন, আমি সবার জানার জন্য পুনরায় হাদিসটা তুলে ধরছি, “তখন কাবার দেয়ালে ৩৬০টি মূর্তি (বুখারি ৩য় খণ্ড – ৬৫৮) ও অনেক ছবির সঙ্গে ছিল হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবিও। উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “রাসুল (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবি বাদে বাকি সব ছবি মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন।” (সিরাত (ইবনে হিশাম/ইবনে ইশাক-এর পৃষ্ঠা ৫৫২)
কাবার দেয়ালে ৩৬০টি মূর্তি ছিল, তা সঠিক, কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) ও মাতা মেরির ছবি? কিভাবে সম্ভব? আজ পর্যন্ত আপনি সহ কেউ কি বিশ্বাস করবে যে সেখানে ঈসা (আঃ) ও মাতা মেরির ছবি? তখনকার আরবের লোকরা মূর্তি পূজা ঠিকই করতো, কিন্তু তারা ঈসা (আঃ) ও মাতা মেরিকে কোনভাবেই চিনত না, সেখানে তখন ইহুদী বা খৃষ্টান ধর্ম পৌঁছে নাই, তাহলে বুঝা যায় এ কথা নির্জলা মিথ্যা।সবচেয়ে বড় যুক্তি হলো এই বর্ণনাটা বানোয়াট হওয়ার পিছনে। সেটা হল কোরাইশ এবং কাবার আশেপাশের লোকেরা কখনো মারিয়াম আলাইহিস সালাতু সালাম কে দেখেনি। ইসা আঃ সালাম কেও দেখেনি, তো তাদের ছবি অথবা মূর্তি কাবা শরীফের থাকাটাও অবাস্তব, রেখে দেওয়া তো পরের বিষয়। আরো অনেকগুলো যুক্তি আছে, এটা দেখলাম যে আরববিশ্বে এটা নিয়ে অনেক বড় ধরনের কথাবার্তা হয়েছে, এরাবিয়ান খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের মিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটাকে অনেক বড় ধরনের যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। উক্ত হাদিসটা “মুনকাত” রেফারেন্স দিলাম দেখে নিবেন দয়া করে[5]।উক্ত লিংকের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে,
এ বর্ণনাটা মুনকাতে, অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই বর্ণনাটা বর্ণনা করেছে, সে জাহিলিয়াত যুগেও তার জন্ম হয় নাই, নবী সঃ এর যুগও সে পায়নি, সে পেয়েছে সাহাবীদের শেষ জামানা,
এরপরে এই বর্ণনাগুলোর যে সনদ বর্ণিত হয়েছে, অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে ভায়া হয়ে এসেছে, এদের অধিকাংশই মিথ্যুক। এই দুর্বলতা প্রত্যেকটা বর্ণনার ক্ষেত্রে আছে।
ইমাম বুখারী এই হাদিসটা কেমোন কার কথা পরিত্যাজ্য, বানোয়াট বলেছেন, ইমাম নাসায়ী দলিল দেওয়া যাবে না বলেছেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ প্রত্যেকটা ইমাম এই হাদিসটা কে পরিত্যাজ্য বলেছেন।
আপনি ভাল করেই জানেন রাসুল (সঃ) নামে অনেক জাল, জয়ীফ, মুনকাত হাদিস বাজারে আছে, এর পিছনের দুরভিসন্ধিও আপনি জানেন, তাই আর কথা বাড়ালাম না। তবে তাঁর নাম দিয়ে হাদিস পরিবেশনে সচেতন হওয়া জরুরী। আবু উমামাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَنْ حَدَّثَ عَنِّيْ حَدِيْثاً كَذِباً مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার নামে ‘মিথ্যা হাদীস’ বলবে তাকে জাহান্নামে বসবাস করতে হবে। তাবারানী, সুলাইমান ইবনু আহমাদ (৩৬০ হি), আল-মু’জামুল কাবীর ৮/১২২।
রাসুল (সঃ) ছবির ব্যাপারে আপনি আবারও অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছেন, আপনি কি ইরানী শিয়াদেরকে মুসলমান মনে করেন, তা হলে আপনি ভুলের মধ্যে আছেন, শিয়ারা কোন মতেই মুসলিম না যদিও তারা মুসলমানদের সাথে হজ্জ সম্পাদন করে আসছে। তাদের কল্পিত অঙ্কন কোনভাবেই ইসলামী সংস্কৃতি বহন করে না, যদি আরও জানতে চান তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আজ পর্যন্ত কেউই প্রমান করতে পারে নাই যে রাসুল (সঃ) সম্পূর্ণ অবয়ব কোন মুমিন উম্মত চিত্রাঙ্কন করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। অমুসলিমরা সবসময়ই ইসলাম বিরোধী, তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারে।
আমার বক্তব্যের শেষ পর্যায় টানছি আল্লাহ্ তা’আলার একটা আয়াত দিয়ে, কষ্টিপাথরে নিজেকে ঝালাই করে নেন, আপনার ঠিক অবস্থানটা কোথায়? আবারো বলছি, আল কুরাআনের বানী শাশ্বত, অপবিত্র (মুনাফিক)কে পবিত্র (মু’মিন) হতে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় রয়েছ, আল্লাহ সে অবস্থায় বিশ্বাসিগণকে ছেড়ে দিতে পারেন না। [১] অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা আল্লাহর (নিয়ম) নয়। [২] অবশ্য (তার জন্য) আল্লাহ তাঁর রসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। [৩] সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে বিশ্বাস কর। বস্তুতঃ তোমরা বিশ্বাস করলে ও সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চললে, তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত ১৭৯)
[১] এই জন্যই মহান আল্লাহ পরীক্ষার কষ্টিপাথরে ঘষে নেন, যাতে তাঁর প্রকৃত বন্ধু কে তা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তাঁর শত্রু লাঞ্ছিত হয়। আর ধৈর্যশীল মু’মিন মুনাফিক থেকে পৃথক হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা উহুদের দিন ঈমানদারদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন। সেদিন ঈমানদারগণ তাঁদের ঈমান, ধৈর্য, সুদৃঢ়তা এবং আনুগত্যের চরম উদ্দীপনার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পেশ করেছিলেন এবং মুনাফিকরা নিজেদেরকে মুনাফিক্বীর যে পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল, সে পর্দা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল।
[২] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ যদি এইভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষদের অবস্থাসমূহ এবং তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারসমূহকে প্রকাশ না করে দেন, তাহলে তোমাদের নিকট তো এমন কোন গায়বী জ্ঞান নেই, যার দ্বারা তোমাদের নিকট এই জিনিসগুলো প্রকাশ হয়ে যাবে এবং তোমরা জানতে পারবে যে, মুনাফিক কে এবং খাঁটি মু’মিন কে?
[৩] অবশ্য মহান আল্লাহ তাঁর মনোনীত রসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান, তাঁকে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত করেন। ফলে তাঁদের নিকট মুনাফিকদের যাবতীয় অবস্থা এবং তাদের সমূহ চক্রান্তের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে যায়। অর্থাৎ, তা কখনো কখনো কোন কোন নবীর জন্য প্রকাশ করা হয়। সাধারণতঃ প্রত্যেক নবী (যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা না চান) মুনাফিকদের আভ্যন্তরিক মুনাফিক্বী এবং তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অনভিজ্ঞই থাকেন। (যেমন, সূরা তাওবার ৯ঃ১০১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর কিছু কিছু তোমার আশে-পাশের মুনাফিক এবং কিছু লোক মদীনাবাসী কঠোর মুনাফিক্বীতে অনড়। তুমি তাদেরকে জান না, আমি তাদেরকে জানি।) এর অর্থ এও হতে পারে যে, আমি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কেবল আমার রসূলগণকেই অবহিত করি। কারণ, তাঁদের (নবুঅতী) পদের জন্য এটা জরুরী। এই আল্লাহর অহী এবং অদৃশ্য বিষয় দ্বারা তাঁরা মানুষদেরকে আল্লাহর প্রতি আহবান করেন এবং নিজেদেরকে আল্লাহর রসূল বলে সাব্যস্ত করেন। এই বিষয়টাকে অন্যত্র এইভাবে বলা হয়েছে, [عَالِمُ الْغَيْبِ فَلا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا، إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ] “তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্তু তিনি অদৃশ্য বিষয় কারোও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত।” (সূরা জিন ৭২ঃ২৬-২৭) প্রকাশ থাকে যে, অদৃশ্য বিষয় বলতে সেগুলোকে বোঝানো হয়েছে, যা রিসালাতের পদ এবং তার দায়িত্ব পালনের সাথে সম্পর্কিত। তা অতীত ঘটিত এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত ঘটিতব্য বিষয়ের জ্ঞান নয়। যেমন, অনেক বাতিলপন্থী মনে করে ও করায় যে, আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম) এবং তাদের কিছু ‘নিষ্পাপ’ ইমামরা নাকি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন।
মা’আসসালামাহ
মিজানুর রহমান ছিদ্দিকী
সম্পাদক
মুসলিম উম্মাহ ডট নিউজ
Phone: 01711890077
[1] https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/64703, https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/45411
[2] https://quranwbw.com/
[3] https://qurano.com/bn/71-nuh/ayah-23/
[4] https://islamqa.info/en/answers/7222/prohibition-of-images-and-erecting-statues-and-the-effect-this-has-on-aqeedah
[5] http://howiyapress.com/%D9%87%D9%84-%D8%A3%D8%A8%D9%82%D9%89-%D8%A7%D9%84%D9%86%D8%A8%D9%8A-%D8%B5%D9%84%D9%89-%D8%A7%D9%84%D9%84%D9%87-%D8%B9%D9%84%D9%8A%D9%87-%D9%88%D8%B3%D9%84%D9%85-%D8%B9%D9%84%D9%89-%D8%B5%D9%88%D8%B1/