Saturday, October 5, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদাওয়াবিশ্বাস, বিজ্ঞান ও যুক্তিঃ নাস্তিকতার অপনোদন ও স্রষ্টার অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমাণ- ২য়...

বিশ্বাস, বিজ্ঞান ও যুক্তিঃ নাস্তিকতার অপনোদন ও স্রষ্টার অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমাণ- ২য় পর্ব

স্রষ্টা ও ধর্ম বিশ্বাস মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিঃ

 সৃষ্টিকর্তাকে  বিশ্বাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই বিশ্বাসের বীজ একটি শিশুর মন ও মগজে রোপিত থাকে। স্বাভাবিক পরিবেশে তা বিকশিত হয়, সে বিশ্বাস করতে থাকে তাকে নিয়ন্ত্রণকারী একটি সত্ত্বা আছে, যে তার ভালো মন্দের সব কিছুর মালিক। প্রতিকুল পরিবেশ তথা লালন-পালনে যদি নেতিবাচক কোনো প্রভাব না থাকে, তাহলে যদি সে কোনো নিয়মাতান্ত্রিক ধর্ম-বিশ্বাসের সংস্পর্শে  নাও আসে, এক স্রষ্টার অস্তিত্ব তার মন ও মজ্জায় সুদৃঢ় অবস্থা লাভ করে। এখানে নেতিবাচক প্রভাব বলতে বাবা-মা অথবা তার অভিভাবকের বিশ্বাস বোঝানো হয়েছে, যা তার ভেতরে শিক্ষার মাধ্যমে প্রথিত হয় এবং সেই বিশ্বাস যদি স্রষ্টা বিশ্বাসের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে।

প্রথাগত মনোবিজ্ঞান তথা ফ্রয়েডীয় ধারা ( নাস্তিকতাবাদী ধারা)  যদিও দাবী করে স্রষ্টায় বিশ্বাস শিশুর মন ও মগজে আরোপিত। Oxford university Center for Anthropology and Mind এর দুইজন গবেষক ( Dr. Justin Barret  এবং Emily Reed Burdett)  বলেন  যে, স্রষ্টা ও পরকালে বিশ্বাস মানব জাতির স্বাভাবিক প্রবণতা।  ( NDTV ১২ই মে, ২০১১ তে প্রকাশিত অন লাইন ভার্সনে একটি নিবন্ধে এই দাবী করা হয়েছে ) এই গবেষনার সাথে সম্পর্কিত একজন জেষ্ঠ্য  গবেষকের কথায় আরো উঠে এসেছে যে, আমরা যদি একদল শিশুকে কোনো একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ছেড়ে দেই, এবং তাদের নিজেদের কে বেড়ে উঠতে দেই, তাহলে দেখব যে তারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করে। ( A rational Approach to Affirm the existence of God- By Mohammed A. Al- Abdulhay)  এ যেন আন্দালুসীয় ঔপন্যাসিক ইবনে তোফায়েলের লিখিত উপন্যাস ‘ হাই ইবন ইয়াযকান’ এর প্রতিধ্বনি করে।

এই উপন্যাসে একটি বাচ্চা পিতা-মাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন-মানব হীন একটি দ্বীপে উপনিত হয়, সেখানে একটি হরিনীর মাতৃ স্নহের ভেতর দিয়ে সে হরিণ ছানাদের  সাথে বড় হয়। এক পর্যায়ে কার্যকারনের উপর চিন্তা ভাবনা করে স্রষ্টার অস্তিত্ত্বের নিশ্চিত ধারনা লাভ করে।

অপর দিকে অধুনা এক গবেষক দাবী করেছেন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস এর জন্য মানব দেহে এক প্রকার জিন দায়ী। বংশগতি বিদ Dean Hamer তার ২০০৪ সালে  লিখিত বইয়ে (The God Gene: How Faith is Hardwired into our Genes) দাবী করেন  vesicular monoamine transporter 2 (VMAT2) নামে একটি জিন মানব মনে স্রষ্টার বিশ্বাস আগে থেকেই প্রোগ্রামিং করে। তবে তিনি জিন কে কার্যক্ষম হওয়ার জন্য অনুকুল পরিবেশকে শর্ত করেছেন।

এখানে আমরা দেখতে পাই, মানব মননে স্রষ্টা সৃষ্টি লগ্ন থেকেই তথ্য দিয়ে রেখেছেন, যার প্রভাবে সারা জীবনই সে স্রষ্টা সঙ্ক্রান্ত ব্যাপারে প্রকট বা প্রচ্ছন্ন ধারনা লালন করে। সেটাই হলো বিশ্বাস।

আল্লাহ বলেনঃ

وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُواْ بَلَى شَهِدْنَا أَن تَقُولُواْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ

আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।

(সুরা আরাফঃ  আয়াত নং-১৭২)

এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিম্নোক্ত হাদীসটি কতইনা প্রাসঙ্গিকঃ

আদম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নবজাতক ফিতরতের(ইসলাম) উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃস্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রুপান্তরিত করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাংগ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ?   

(সহীহ বুখারী, ইফাঃ হাদীস নং ১৩২০)  

ধর্ম বিশ্বাস- ইতিহাস কথা বলেঃ 

আমরা যদি নিকট কিংবা দূর ইতিহাসের বিভিন্ন সভ্যতার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তাহলে দেখব এমন কোনো সভ্যতা গত হয়নি যেখানে ধর্মবিশ্বাস অনুপস্থিত ছিলো। সুমেরীয়, মেসোপটেমিয়া, আসিরীয়, মিশরীয়, সিন্ধু, গ্রীক, রোমান, পারস্য  ইত্যাদী সভ্যতার দিকে তাকালে, সেখানে কোনো না কোনো রূপে স্রষ্টার উপস্থিতি প্রকট ভাবে পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যদিও তা স্রষ্টার সত্য প্রকৃতি থেকে অনেক দুরে অবস্থান করে। তবে স্রষ্টার ধারনা সেখানে প্রবল ভাবে বিরাজ  করত। প্রায় সব ক্ষেত্রেই উপাস্য  সংক্রান্ত ধারনা এদের ইতিহাস রচনায় অন্যতম নিয়ামক হয়ে আছে।

পৃথিবীতে প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি ভাষা আছে। আমরা যদি পৃথিবীর যে কোনো ভাষার অভিধান খুলি, সেখানে ইংরেজী God শব্দের প্রতিশব্দ খুঁজে পাবো। এর দ্বারা  এটাই প্রমাণিত হয়, কোনো সভ্যতা, কোনো সংস্কৃতি স্রষ্টার ধারনা থেকে মুক্ত  ছিলোনা। বরং এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, কোনো রকম স্রষ্টা বা উপাস্যে বিশ্বাস করেনা এমন কোনো মানব গোষ্ঠীর অস্তিত্ব তখন খুঁজেই পাওয়া যেতনা। ( বিচ্ছিন্ন ভাবে ২/১ জন থেকে থাকলেও জন সমষ্ঠি হিসাবে কখনোই ছিলোনা)  তবে স্রষ্টায় এই বিশ্বাস একেশ্বরবাদী এবং বহুশ্বরবাদী এই দুই ধারায় বিভক্ত ছিলো। 

আর বহুশ্বরবাদী মানুষের জন্যই আল্লাহ যুগে যুগে সকল সম্প্রদায়ের কাছে পথ-প্রদর্শক প্রেরন করেছেন, আল্লাহ বলেনঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ

আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।

(সুরা নহলঃ আয়াত নং-৩৬)

নাস্তিক্যবাদ এবং অজ্ঞেয়বাদ- অবিশ্বাস না বিশ্বাস?

 নাস্তিক্যবাদ কি? এই প্রশ্নের উত্তর উইকিপিডিয়া নিম্নলিখিত ভাবে দিয়েছে,

নাস্তিক্যবাদ (অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য।

শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি বিশ্বাস কে ভ্রান্ত বলে তারা স্বীকার করে।

অপর পক্ষে অজ্ঞেয়বাদের সংজ্ঞা নির্ধারন করতে গিয়ে উইকিপিডিয়া বলেছে,

অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে এমন একটি দার্শনিক চিন্তা বা মতবাদ বা ধারণা যেখানে বলা হয় যে কোনো ঈশ্বর বা কোনো পরমসত্ত্বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা নিরস্তিত্ব মানুষের অজানা এবং এটি তাদের দ্বারা কখনো জানা সম্ভব হবেনা।

মার্কিন দার্শনিক উইলিয়াম এল. রোয়ে বলেন, “অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে মানবজাতি কখনো ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যে আছেন এটি শক্তভাবে প্রমাণ করতে সমর্থ হবেনা আবার ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যে নেই এটিও শক্তভাবে প্রমাণ করতে অসমর্থ থেকে যাবে”। অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে একটি মতবাদ অথবা কতিপয় যুক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি ধারণা, এটি কোনো ধর্ম নয় যদিও এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেনা আবার স্বীকারও করেনা।

তবে একথা অনস্বীকার্য যারা নিজেদের নাস্তিক দাবী করে, তারা কখনোই প্রমাণ করতে সমর্থ হয়নি যে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। তারা মূলতঃ সংশয়ে আপতিত। আর সে কারণে মুলত সকল নাস্তিকই অজ্ঞেয়বাদী বা সংশয়বাদী।

উপরোক্ত দুইটি সংজ্ঞা,  নাস্তিক্যবাদ এবং অজ্ঞেয়বাদ সংক্রান্ত ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত চিন্তা-ভাবনারই প্রতিধ্বনি করে। এই দুইটি সংজ্ঞার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো দ্বিমত নেই। তবে আমি এখানে এই বিষটিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করতে চাই।

একটি শব্দে নাস্তিক্যবাদ কে যদি কেউ প্রকাশ করতে বলে, তাহলে তা হবে ‘অবিশ্বাস’ আর অজ্ঞেয়বাদের ক্ষেত্রে সেটা হবে সংশয়। 

কিন্তু আসলে কি নাস্তিক্যবাদ অবিশ্বাস?  বিশ্বাসের সংজ্ঞা পর্যালোচনা কালে আমরা জেনেছি যে, কোনো সুত্র বা তথ্য বা উপাত্ত এর উপর ভিত্তি করে মানব মনে যে দৃঢ় প্রত্যয় মূলক ধারনা জন্মে তাই বিশ্বাস। আমরা এখন নাস্তিক্যবাদ কে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করবঃ

নাস্তিক্যবাদ এমন এক দর্শন বা  মতবাদ, যেখানে এই মতবাদ লালন কারীরা বিশ্বাস করে  এই মহাবিশ্ব কেউ সৃষ্টি করেনি, বরং এটা নিজে নিজেই তার অস্তিত্বে এসেছে।  

সুতরাং নাস্তিক্যবাদ এক প্রকার বিশ্বাস, এবং এই বিশ্বাস অনুযায়ী মহাবিশ্ব নিজেই নিজের স্রষ্টা।  অর্থাৎ তারাও আস্তিক।

অপর পক্ষে আমরা যদি অজ্ঞেয়বাদকে ভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি তাহলে বলা যায়ঃ

অজ্ঞেয়বাদ এমন এক প্রকার মতবাদ বা দর্শন যে মতবাদ লালন কারীরা বিশ্বাস করে এই মহাবিশ্ব কেউ সৃষ্টি করেছে কিনা জানা সম্ভব নয়, তবে করে থাকলেও সেই  স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমান করা সম্ভব নয়।  

উপরের সংজ্ঞার আলোকে এটা স্পষ্ট হয় যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে অজ্ঞেয়বাদীরা দুইটি সম্ভাবনাকে লালন করেন, কিন্তু কোনোটির ব্যাপারেই তারা নিশ্চিত ননঃ

১। এই মহাবিশ্ব কোনো একজন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন

২। এই মহাবিশ্ব নিজেই নিজের অস্তিত্বে এসেছে, অর্থাৎ মহাবিশ্ব নিজেই নিজের স্রষ্টা। 

অর্থাৎ, তাদের মতে তার নিজেরাও (অজ্ঞেয়বাদীরাও) আস্তিক।

আসলেও কি কোনো নাস্তিকের অস্তিত্ব আছে? মূলতঃ যারা আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ বুঝতে পারে, তবুও হঠকারীতা বশতঃ অবিশ্বাস করার ভান করে, এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ

يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ

তারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ চিনতে পারে, তথাপি তারা সেইটি অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।

(সুরা নাহলঃ আয়াত নং-৮৩)

এখানে আমরা মুসা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সময় ফেরাউনের উদাহরণ আনতে পারি, সে প্রকাশ্য জনসম্মুখে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলো। ফেরাউন তার প্রজাদের বলেছিলো, “আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ রব” কিন্তু সে যখন লোহিত সাগরে নিমজ্জিত হচ্ছিলো এবং মৃত্যুর খুব নিকটে অবস্থান করছিলো, তখন সে বলেছিলো, “ আমি আল্লাহর অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছি, এবং আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই”

এই বিষয়ে আল- কুরানুল কারীমে আল্লাহ বলেনঃ

وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنتُ أَنَّهُ لا إِلِـهَ إِلاَّ الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।

(সুরা ইউনুস আয়াত নং-৯০)

সংক্ষেপে বলা যায়, অনেক মানুষ বাহ্যিক ভাবে নাস্তিক কিন্তু অন্তর্গত ভাবে বিশ্বাসী। আমাদের দেশের অনেক কম্যুনিস্ট নেতাকে দেখা যায় হজ্ব করতে, যদিওবা কম্যুনিজমে ধর্ম বিশ্বাসকে আফিমের সাথে তুলনা করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে জেনেছিলাম, এদেশের প্রখ্যাত এবং নির্বাসিত  নাস্তিক নারীবাদী লেখিকার তওবা করার ইচ্ছা হয়েছিলো, তবে এখনো তার সেই ইচ্ছা পুরন হয়নি বলেই জানি।

 নাস্তিকতা নিয়ে ইংরেজীতে একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে,  “There are no atheists in the foxholes” যার অর্থ বিপদে পতিত হলে, কোনো মানুষ আর নাস্তিক থাকেনা, তখন সে কোনো এক অতিন্দ্রীয়/অতিপ্রাকৃত শক্তি কে খুঁজতে থাকে, যে তাকে সাহায্য করতে পারে। হয়ত স্বগতোক্তি করে ফেলে, “ O God, help me!” অর্থাৎ “ হে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করো!”

আমরা ডঃ লরেন্স ব্রাউনের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী স্মরণ করতে পারি। তিনি একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং প্রাক্তন ইউ এস বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা। ডঃ ব্রাউন নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী দাবী করতেন। তিনি মনে করতেন, কোনো সমস্যার সমাধান তার আয়ত্তের বাইরে নয়, জীবনে যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছেন, তখন নিজে নিজেই তার সমাধান করেছেন নানা ভাবে, আর তাই তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশী ছিলো। কিন্তু তার প্রথম সন্তান জন্মের পর দেখতে পান তার নবজাতিকা কন্যা এক বিরল হৃদপিন্ডের রোগে ভুগছেন, যার কোনো চিকিৎসা নেই। রক্ত সঞ্চালনের ত্রুটির কারনে অক্সিজেনের অভাবে  তার সদ্যোজাত কন্যার সারা শরীর নীল বর্ণ ধারণ করেছে। তখন তিনি জীবনে সর্ব প্রথম বুঝতে পারলেন, তিনি অসহায়, তার অতিন্দ্রীয় সাহায্য দরকার। তিনি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে একটি নির্জন কক্ষ বেছে নিয়ে সিজদায় পড়ে গেলেন, এবং বলেন, “ ও ঈশ্বর! তোমার অস্তিত্ব যদি যদি সত্যিই থাকে তাহলে আমার কন্যাকে ভালো করে দাও, এরপর তুমি তোমার পছন্দনীয় ধর্মে আমাকে দীক্ষিত করো” কিছুক্ষন পর তিনি যখন আপারেশন থিয়েটারে ফিরে এলেন এবং দেখতে পেলেন, সকল চিকিৎসক এক যোগে তার কন্যার উপর ঝুঁকে তাকিয়ে আছেন, তাদের  চোখে-মুখে বিস্ময়ের চিহ্ন। তিনি দেখতে পেলেন, তার কন্যার শরীর থেকে রোগের সকল উপসর্গ দুর হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর পর ধর্ম নিয়ে বিস্তর অনুসন্ধান করে খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নেয়া ডঃ ব্রাউন  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তার কন্যা ১৯ বছরের একজন সুস্থ্য যুবতী ছিলো।

এবার একটি বৈজ্ঞানিক গবেষনার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক, ‘Atheists Become Emotionally ArousedWhen Daring God to Do Terrible Things’  নামের একটি গবেষনা নিবন্ধে Marjaana Lindeman, Bethany Heywood ,Tapani Riekki এবং Tommi Makkonen নামের গবেষক চতুষ্টয় দাবী করেন, তারা একটি পরীক্ষা করেন জানার জন্য যে, ‘ যদি স্রষ্টা নাস্তিকের বা তাদের নিকটজনের কোন ক্ষতি করতে চান’ এমন কোনো বিবৃতি তাদের পড়তে বা শুনতে দিলে মানসিক ভাবে কি প্রতিক্রিয়া হয়’।

১ম পরীক্ষা যেখানে অংশ গ্রহণ কারীর সংখ্যা  ছিলো ২৯ জন, তাদের মধ্যে ১৬ জন নাস্তিক এবং ১৩ জন ধার্মিক ব্যাক্তি। তাদের ৩৬টি তিন প্রকারের বিবৃতি ( স্রষ্টা, আক্রমনাত্মক এবং নিরপেক্ষ)  উচ্চ স্বরে  পড়তে দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষায় যেখানে নাস্তিকের সংখ্যা ছিলো ১৯ জন। আরো ১০ টি নতুন উত্তেজনাকর বিবৃতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো, যেখানে নাস্তিকরা তাদের জন্য খারাপ কিছু ঘটুক এমন কিছুর আকাঙ্ক্ষা মূলক বিবৃতি পাঠ করেছিলো। মৌখিক রিপোর্ট অনুযায়ী নাস্তিকরা দাবী করেছিলো এটা পড়তে তাদের তেমন খারাপ লাগেনি, তবে ধার্মিকরা স্বীকার করেছিলো, তাদের জন্য এমন বিবৃতি পড়া অস্বস্তিকর। কিন্তু ত্বকের পরিবাহকের মাধ্যমে ফলাফল পাওয়া গিয়েছিলো  যে, স্রষ্টার কাছে নিজের জন্য কোনো ক্ষতি প্রার্থনা করা, ধার্মিকদের মতোই তথাকথিত নাস্তিকদের জন্যেও একই রকম কষ্টকর ছিলো, তবে নাস্তিকদের জন্য স্রষ্টার বিবৃতি যে, তিনি তাদের ক্ষতিকর করবেন এমন কিছু পাঠ করা ছিলো অনেক বেশী কঠিন ও ভীতিকর। অর্থাৎ নাস্তিকরা মিথ্যা বলেছিলো। এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, তারা বাহ্যিক ভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও, অন্তর্গত ভাবে পরিপুর্ণ বিশ্বাসী। 

আল্লাহ নিজেই বলেছেন, সত্য অবিশ্বাসীদের কাছে স্পষ্ট করে দেবেন, যাতে করে তাদের আর অজুহাত না থাকে, আল্লাহ বলেনঃ

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ        

এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়?

(সুরা ফুসিলাতঃ আয়াত নং-৫৩)

তবে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ বিপদে পড়ে আল্লাহর শরনাপন্ন হয়, আবার বিপদ কেটে গেলে আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। 

আল্লাহ সুবহানুতাআ’লা আল কুরানুল কারীমে বলেন, 

أَلَمْ تَرَ أَنَّ الْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِنِعْمَتِ اللَّهِ لِيُرِيَكُم مِّنْ آيَاتِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّار شَكُور

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর অনুগ্রহে জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করেন? নিশ্চয় এতে প্রত্যেক সহনশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে নিদর্শন রয়েছে।

وَإِذَا غَشِيَهُم مَّوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُم مُّقْتَصِدٌ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلَّا كُلُّ خَتَّارٍ كَفُور

যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।

(সুরা লোকমানঃ আয়াত নং-৩১-৩২)

তবে প্রশ্ন আসতে পারে বিশ্বাসের পক্ষে তাদের এত অন্তর্গত সাক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও, কোন তথ্য বা সুত্র বলে, তারা নিজেদের নাস্তিক বলে দাবী করে? আসুন নাস্তিক্যবাদ/ অজ্ঞেয়বাদের ইতিহাসের দিকে একটু চোখ বুলানো যাক। 

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

twelve − five =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য