মালির অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি বাহ এনডাও সাবেক মালিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোক্তার ওয়ানকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেছেন।
গত রবিবার এই নিয়োগের মাধ্যমে মালির উপর প্রতিবেশী দেশগুলির পক্ষ থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। যেগুলো আগস্টে দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের পরে আরোপিত করা হয়েছিল।
১৮ই আগস্টের অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম বাউবাকার কেইটাকে সরিয়ে দিয়েছিল। যেখানে কোনও ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছিল দেশটির তখনকার সামরিক সরকার। ঠিক তার দুই দিন পরেই, পশ্চিম আফ্রিকার অর্থনৈতিক সম্প্রদায় (ইকোওয়াস) দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইকোওয়াসের নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহারের পূর্বশর্ত ছিল একজন বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ।
৬৪ বছর বয়সী প্রবীণ কূটনীতিক ওয়ান, ১৯৯৫-২০০২ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে মালির রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আমাদৌ তৌমানী টুরের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে ২০০৪-২০০৯ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
গেলো শুক্রবার, প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও কর্নেল বাহ এনডাও এবং তার সহযোগী হিসেবে আসিমি গোয়েতা মালির সুপ্রিম কোর্টের সামনে শপথ নেন। আসিমি গোয়েতা আগস্টের অভ্যুত্থান পরবর্তী সামরিক সরকারের প্রধান ছিলেন।
নতুন এই সামরিক সরকার অন্তর্বর্তীকালীন ১৮ মাস তত্ত্বাবধায়ন শেষে দেশটিকে বেসামরিক শাসনে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার ওয়ান সরকারের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।- সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপি বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছে।
ওয়ান ২০১৬ সাল থেকে পশ্চিম আফ্রিকান মুদ্রা ইউনিয়নে(ডাব্লুএএমইউ) শান্তি ও সুরক্ষা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি মূলত মধ্য মালির বিডি অঞ্চলের বাসিন্দা। অঞ্চলটি সশস্ত্র দলগুলির আক্রমণ এবং আন্ত-জাতিগত সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা দেশটিকে বছরের পর বছর ধরে ভুগিয়েছে।
অভ্যুত্থানের আগে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কেইটা কয়েক মাস বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান ঘটাতে বা দেশকে নাকাল অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকট থেকে উদ্ধারে ব্যর্থতার দরুন বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা
গেলো শুক্রবার ইকোওয়াস জানায়, একজন বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হলে তারা মালির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।
ডাকার থেকে আল জাজিরার নিকোলাস হক বলেন, নেতৃত্বের পদে প্রথম বেসামরিক নাগরিক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন ওয়ান। এই নিয়োগের ফলে, ”অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টিতে সফল হিসেবে গ্রহণ হওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছে। যাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা গুলি, মালির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল”।
হক বলেন, ওয়ানকে মালির অতি ব্যাপক অভিযোগগুলির সমাধান করতে হবে।
‘সোজা ভাষায় এর অর্থ দাড়ায়, পুনরায় স্কুলগুলো চালুকরণ, শিক্ষকদের বেতন প্রদান, হাসপাতালগুলি পুনরায় কাজ করার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ-ভাণ্ডারে পর্যাপ্ত অর্থ নিশ্চিতকরণ। এছাড়াও রয়েছে বিদ্যুৎ এবং পানি নিশ্চিতকরণ যা দেশটিতে প্রায়শই অনুপস্থিত থাকে।’- হক বলেন।
সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি এবং সহ-রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকলেও, রাষ্ট্রকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নতুন এই প্রধানমন্ত্রীর হাতেই থাকবে।
সামরিক বাহিনী দ্বারা স্থায়ী ক্ষমতা দখলের ভয়ে, ইকোওয়াস আরও দাবি করে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কোনো পরিস্থিতিতেই প্রেসিডেন্টকে প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন না।
এটি অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাবুউ কিসিসহ গ্রেপ্তার হওয়া লোকদের মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
অনুমোদিত শর্ত এবং সময়সূচীর আওতায় স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সফল ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মালিয়ানদের দৃঢ়তা তুলে ধরে, অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি এনডাও শুক্রবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ইকোওয়াসকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
এনডাও বলেন, ‘প্রশ্নবিদ্ধহীন বা স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচিত ভবিষ্যতের রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা না পর্যন্ত আমি কখনো খুশি হতে পারব না।’ এছাড়াও তিনি আরো জানান যে, এই মাসে তিন দিনের আলোচনা থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা রূপান্তর পরিকল্পনাটি তার মূল কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা দিবে।
পরিকল্পনাটির সঠিক বিষয়বস্তু এখন পর্যন্ত সর্বজনীন করা হয়নি।