আসসালামু আলাইকুম
🔴রাজতন্ত্র : [ হারাম নাকি জায়েজ ]
___________________________________
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। যিনি বলেছেন, “বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতঃপর মিথ্যা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়…।” [সূরাহ আম্বিয়া: ১৮ ]
এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি, যিনি বলেছেন,,
مَا بَالُ رِجَالٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللهِ مَا كَانَ مِنْ شَرْطٍ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللهِ فَهُوَ بَاطِلٌ وَإِنْ كَانَ مِائَةَ شَرْطٍ قَضَاءُ اللهِ أَحَقُّ وَشَرْطُ اللهِ أَوْثَق.
“লোকদের কী হলো যে, তারা এমন শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর বিধানে নেই। আল্লাহর বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাত্বিল বলে গণ্য হবে, শত শর্ত হলেও। আল্লাহর ফায়সালাই সবচেয়ে সঠিক এবং আল্লাহর শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়।” [স্বহীহ্ বুখারী, হা/২১৬৮]
.
▪প্রারাম্ভিকা,
দ্বীন কায়েম, খিলাফত প্রতিষ্ঠা, ইসলামীক রাষ্ট্র গঠনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত ‘ইসলামী আন্দোলন’ এর মতাদর্শ প্রচারকারী ও তাদেরই মানহাজে দীক্ষিত একদল গনতন্ত্র পুজারী সবসময়ই রাজতন্ত্রের প্রতি বিষোধগার করে আসছে। ১৯০০-২০০০ এই সময়ের মাঝে কিছু অল্প ইলম সম্পন্ন, স্বঘোষিত চিন্তাবিদ বের হয়েছেন ,যারা ক্বুরআন ও হাদীস গবেষণা করে ইসলামকে নতুনভাবে (!) আবিষ্কার করেছে। বিগত ১৪শ বছরের অধিক সময় ধরে মুসলিম উম্মাহ যা জানতে পারেনি, তাদের প্রচারিত এই নতুন ইসলামের কারণে মুসলিম উম্মত জানতে পারলো যে, “ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম”। নতুন (!) এই ইসলামের খাদেমগণ অহরহ ফাতওয়া দেওয়া শুরু করল যে, “ইসলামে রাজতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব নেই বরং ইসলাম হচ্ছে গনতান্ত্রিক ”।
দেখা যাচ্ছে কোনো একজন আলিম এই ফাতাওয়া দেন নি যে,“ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম”। তাহলে এই ফাতওয়া কারা দিচ্ছে? যদি কোন আলিম এই ফাতওয়া না দিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই এই ফাতাওয়া হচ্ছে একদল জাহেল (মূর্খ) ব্যক্তির।
▪ক্বুরআনুল কারীম থেকে :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন,
اَلَمۡ تَرَ اِلَی الۡمَلَاِ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مُوۡسٰی ۘ اِذۡ قَالُوۡا لِنَبِیٍّ لَّہُمُ ابۡعَثۡ لَنَا مَلِکًا نُّقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ قَالَ ہَلۡ عَسَیۡتُمۡ اِنۡ کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ اَلَّا تُقَاتِلُوۡا ؕ قَالُوۡا وَ مَا لَنَاۤ اَلَّا نُقَاتِلَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ قَدۡ اُخۡرِجۡنَا مِنۡ دِیَارِنَا وَ اَبۡنَآئِنَا ؕ فَلَمَّا کُتِبَ عَلَیۡہِمُ الۡقِتَالُ تَوَلَّوۡا اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡہُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌۢ بِالظّٰلِمِیۡنَ
তুমি কি মূসার পর বনী ইসরাঈলের প্রধানদেরকে দেখনি? যখন তারা তাদের নবীকে বলেছিল, ‘আমাদের জন্য একজন রাজা পাঠান, তাহলে আমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করব’। সে বলল, ‘এমন কি হবে যে, যদি তোমাদের উপর লড়াই আবশ্যক করা হয়, তোমরা লড়াই করবে না’? তারা বলল, আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করব না, অথচ আমাদেরকে আমাদের গৃহসমূহ থেকে বের করা হয়েছে এবং আমাদের সন্তানদের থেকে (বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে)’? অতঃপর যখন তাদের উপর লড়াই আবশ্যক করা হল, তখন তাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তারা বিমুখ হল। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।
— [ সুরা বাকারাহ, আয়াত : ২৪৬ ]
.
আরো বলেন,
وَ قَالَ لَہُمۡ نَبِیُّہُمۡ اِنَّ اللّٰہَ قَدۡ بَعَثَ لَکُمۡ طَالُوۡتَ مَلِکًا ؕ قَالُوۡۤا اَنّٰی یَکُوۡنُ لَہُ الۡمُلۡکُ عَلَیۡنَا وَ نَحۡنُ اَحَقُّ بِالۡمُلۡکِ مِنۡہُ وَ لَمۡ یُؤۡتَ سَعَۃً مِّنَ الۡمَالِ ؕ قَالَ اِنَّ اللّٰہَ اصۡطَفٰىہُ عَلَیۡکُمۡ وَ زَادَہٗ بَسۡطَۃً فِی الۡعِلۡمِ وَ الۡجِسۡمِ ؕ وَ اللّٰہُ یُؤۡتِیۡ مُلۡکَہٗ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
আর তাদেরকে তাদের নবী বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য তালূতকে রাজারূপে পাঠিয়েছেন। তারা বলল, ‘আমাদের উপর কীভাবে তার রাজত্ব হবে, অথচ আমরা তার চেয়ে রাজত্বের অধিক হকদার? আর তাকে সম্পদের প্রাচুর্যও দেয়া হয়নি’। সে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তোমাদের উপর মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও দেহে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ যাকে চান, তাকে তাঁর রাজত্ব দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’।
— [ সুরা বাকারাহ, আয়াত : ২৪৭ ]
আরো বলেন,
وَ اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِہٖ یٰقَوۡمِ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ جَعَلَ فِیۡکُمۡ اَنۡۢبِیَآءَ وَ جَعَلَکُمۡ مُّلُوۡکًا ٭ۖ وَّ اٰتٰىکُمۡ مَّا لَمۡ یُؤۡتِ اَحَدًا مِّنَ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۲۰﴾
” আর যখন মূসা তার কওমকে বলল, ‘হে আমার কওম, স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমত, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নবী বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে রাজা-বাদশাহ বানিয়েছেন, আর তোমাদেরকে দান করেছেন এমন কিছু যা সকল সৃষ্টির মধ্যে কাউকে দান করেননি’।
— [সূরা আল মায়েদাহ , আয়াত : ২০]
আরো বলেন,
اَمۡ یَحۡسُدُوۡنَ النَّاسَ عَلٰی مَاۤ اٰتٰہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ۚ فَقَدۡ اٰتَیۡنَاۤ اٰلَ اِبۡرٰہِیۡمَ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ اٰتَیۡنٰہُمۡ مُّلۡکًا عَظِیۡمًا
বরং তারা কি লোকদেরকে হিংসা করে, আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে? তাহলে তো আমি ইবরাহীমের বংশধরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি বিশাল রাজত্ব।
— [ সুরা আন নিসা, আয়াত : ৫৪ ]
নোট : উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাজত্ব, রাজতন্ত্র, বাদশাহী ইসলামে অবৈধ নয়।
কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলছেন: “আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহরূপে (রাজা) সাব্যস্ত করেছেন।
— [সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৭]
▪স্বহীহ হাদিস থেকে :
প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
خلافة النبوة ثلاثون سنة ثم يؤتي الله الملك من يشاء
নবুয়াতী খিলাফত ৩০ বছর যাবৎ বহাল থাকবে। অতঃপর মহান আল্লাহ তা’আলা যাকে চান তাকে রাজত্ব দান করবেন।
— [ আবু দাউদ, হা/ ৪৬৪৬, ৪৬৪৭ ; তিরমিযি, হা/ ২২২৬ ; তাহকীক তিরমিযি আলবানী, হা / ২২২৬; ছহীহাহ, হা/ ৪৫৯, ১৫৩৪ ]
‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,
حدثنا موسى بن إسماعيل، حدثنا حماد، عن علي بن زيد، عن عبد الرحمن بن أبي بكرة، عن أبيه، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال ذات يوم ” أيكم رأى رؤيا ” . فذكر معناه ولم يذكر الكراهية . قال فاستاء لها رسول الله صلى الله عليه وسلم يعني فساءه ذلك فقال ” خلافة نبوة ثم يؤتي الله الملك من يشاء ” .
একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের মধ্যে কে স্বপ্ন দেখেছে? অতঃপর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণিত। তবে অসন্তুষ্টির কথা উল্লেখ নেই। বরং বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, তুমি যা দেখেছ তার ব্যাখ্যা হলো, নবুওয়্যাতের প্রতিনিধিত্বের পর হলো রাজতন্ত্র। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন।
— [ সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬৩৫ ]
.
সাঈদ ইবনু জুহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
حدثنا أحمد بن منيع، حدثنا سريج بن النعمان، حدثنا حشرج بن نباتة، عن سعيد بن جمهان، قال حدثني سفينة، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم “ الخلافة في أمتي ثلاثون سنة ثم ملك بعد ذلك ” . ثم قال لي سفينة أمسك خلافة أبي بكر وخلافة عمر وخلافة عثمان . ثم قال لي أمسك خلافة علي . قال فوجدناها ثلاثين سنة . قال سعيد فقلت له إن بني أمية يزعمون أن الخلافة فيهم . قال كذبوا بنو الزرقاء بل هم ملوك من شر الملوك . قال أبو عيسى وفي الباب عن عمر وعلي قالا لم يعهد النبي صلى الله عليه وسلم في الخلافة شيئا . وهذا حديث حسن قد رواه غير واحد عن سعيد بن جمهان ولا نعرفه إلا من حديث سعيد بن جمهان .
সাফিনাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের খিলাফাতের সময়কাল (শাসনকাল) হবে ত্রিশ বছর, তারপর হবে রাজতন্ত্র।
— [ সিলসিলা আস সহীহাহ (৪৫৯, ১৫৩৪, ১৫৩৫, ২২২৬ ]
.
রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন,
.
أول هذا الأمر نبوة ورحمة، ثم يكون خلافة ورحمة، ثم يكون ملكًا ورحمة
.
দ্বীনের প্রথম ভাগ নবুওয়্যাতও রহমত। তারপর হবে খেলাফতও রহমত, তারপর হবে রাজতন্ত্রও রহমত।
—- [ সিলসিলা আস সহীহা / ত্বাবারানী — ১০৯৭৫, ইমাম আলবানী দুটো হাদিসকে স্বহীহ বলেছেন ]
.
নোট : উপরিউক্ত হাদিস সমুহ দ্বারা প্রতীয়মান যে, রাজতন্ত্র আসবে তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ভবিষ্যৎবানী থেকে প্রমাণিত। যদি রাজতন্ত্র হারাম হত তাহলে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলে যেতেন। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রাপ্ত ওহীর খেয়ানত করেন না।
.
▪রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনী থেকে :
প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনী থেকে জানা যায় যে, কাফেররা রাসূলুল্লাহ ﷺ – কে একবার মক্কার বাদশাহ বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিল, বিনিময়ে দ্বীন প্রচার বন্ধ করতে হবে। জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ – বলেছেন, আমার এক হাতে সূর্য অন্য হাতে চন্দ্র এনে দিলেও কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি দ্বীন প্রচার থেকে পিছু হটবো না। এখানে লক্ষনীয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ একথা বলেন নি যে, বাদশাহ হওয়া বা রাজ্য ব্যবস্থা আল্লাহ নিষেধ করেছেন তাই তা নেয়া যাবেনা!
এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ করেছেন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে এ কাজে মননিবেশ করেন। ষষ্ঠ হিজরীর যিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একইদিনে বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।
প্রেরিত দূতগণের মধ্যে, দাহিয়া ক্বালবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে, আবদুল্লাহ বিন হুযাইফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে পারস্যের সম্রাট পারভেজের কাছে, হাতিব বিন আবূ বুলতা’আ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে মিশরের শাসনকর্তার কাছে, আমর বিন উমাইয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে, সলীত বিন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে, এবং শুজা ইবনে ওয়াহাব আসাদী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র বাদশাহ নাজ্জাসী (রাহিমাহুল্লাহ) ছাড়া আর কেউই ইসলাম গ্রহণ করেননি। এখন প্রশ্ন হল, বাদশাহ নাজ্জাসী রাহিমাহুল্লাহ কি ছিলেন? খলীফাহ নাকি রাজা ? যদি রাজতন্ত্র হারাম হত তাহলে ইসলাম গ্রহণের পরে কেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বাদশাহ নাজ্জাসী রাহিমাহুল্লাহ-কে একথা বলেন নি যে,
হে নাজ্জাসী! যেহেতু ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম, তাই রাজতন্ত্র ত্যাগ কর! বরং রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা তাদের রাজত্ব আরো বাড়িয়ে দিবেন এবং ইহকালে ও পরকালে কল্যান দান করবেন এমনটাই নির্দেশ করেন। তাই এ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না যে রাজতন্ত্র ইসলামে বৈধ কিনা। জ্ঞাতব্য যে, কোন হালাল জিনিসকে হারাম মনে করা কূফুরী।
.
▪সাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে :
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস [ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
এই দ্বীনের প্রথম অংশ হল নবুয়্যাতও রহমত। তারপরে খেলাফতও রহমত। তারপরে বাদশাহীও রহমত।তারপরে আমীরী শাসনও রহমত। অত:পর লোকেরা ইমারত ও রাজত্ব নিয়ে কামড়া কামড়ি করবে এবং গাধার ন্যায় কামড়ে ধরবে।“
আল্লামাহ ইবনে হাজার হায়তামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ”এই হাদিসের সকল বর্ননাকারী অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
— [ তাতহিরুল জিনান, পৃষ্ঠা : ৩১ ]
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ ) এই হাদিসকে যাইয়িদ বলেছেন তার ‘সহীহাহ ৭/৮০২-৩ পৃষ্টাতে।
উল্লেখ্য যে, এই হাদিসটা মূলত মুমিনগণের মামা
সাহাবী মু‘আউয়িয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-র) গুণের হাদিস। সাহাবায়ে কেরামের দুশমন তথা সাহাবী মু‘আউয়িয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শাসনকালকে নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেন এই হাদিসটা তাদের বিরুদ্ধে কঠিন জবাব।
.
ওহীর লিখক, আল্লাহর ওলী, মুমিনগণের মামা ইমাম মু‘আউয়িয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
“আমিই (উম্মতে মুহাম্মাদীর) রাজাদের মধ্যে প্রথম রাজা।
— [ রিসালাহ : ১/৯৬ ]
.
সাহাবীদের সময়ে মু‘আউয়িয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-র)
শাসনামল (রাজতন্ত্র) চলমান ছিল অর্থাৎ, সাহাবীদের আমলে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু সাহাবীগণ এর প্রতিবাদ করেননি। হারাম হলে তাঁরা অবশ্যই বায়”আত না করে প্রতিবাদ করতেন। অতএব সাহাবীদের ইজমাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, রাজতন্ত্র জায়েজ।
.
▪তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের জীবনী থেকে :
তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের সময় রাজতন্ত্র ছিল কিন্তু তারা কেউই রাজতন্ত্রকে হারাম বলেননি।
ইমাম আবু হানিফাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে তৎকালীন বাদশাহ জেলে বন্দী করে রাখেন এবং যতদূর জানি উনাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় !
ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ)-কে তৎকালীন বাদশাহ গাধার পিঠে উল্টো করে বসিয়ে মুখে কালি মাখিয়ে পুরো এলাকা ঘুরিয়েছেন একটা ফাতাওয়ার কারণে!
ইমামু আহলিস সুন্নাহ আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ)-কে তৎকালীন বাদশাহ জেলে বন্দী করে বেত্রাঘাত করেছেন বছরের পর বছর!
উপরিউক্ত মহিমান্বিত ইমামগণের যুগে এবং পরবর্তী সকল যুগে মুসলিমদের মাঝে রাজতন্ত্রের শাসনামল বিদ্যমান ছিল কিন্তু কোন একজন ইমাম তো দূরের কথা একজন সাধারণ আলিমও রাজতন্ত্রকে হারাম বলেন নি। তাই রাজতন্ত্র জায়েজ হওয়া উম্মতের ইজমাহ দ্বারা প্রমাণিত।
.
▪একটি বিভ্রান্তির অপনোদন :
কেউ কেউ রাজত্ব, রাজতন্ত্র, রাজা, খলীফাহ শব্দগুলো নিয়ে ঝটলা পাকিয়ে ফেলেন। এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল [এখানে সাহাবী মু‘আউয়িয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-র আছারটা রয়েছে ] :
السؤال الثاني من الفتوى رقم (6363) : قال صلى الله عليه وسلم : الخلافة بعدي ثلاثون سنة ثم تكون ملكا عضوضا ولهذا قال معاوية رضي الله عنه بعد انقضاء الثلاثين سنة ، أنا أول الم لوك ، من رسالة أبي زيد القيرواني ج1 ص96 ، ما معنى هذا الحديث؟
জবাবে ফাতাওয়া কমিটি বলেন,
,
هذا الحديث أخرجه الإمام أحمد في [المسند] ، والحاكم في [المستدرك] ، وأبو يعلى في [المسند] ، وابن حبان في [صحيحه] ، والترمذي في [السنن] ومعنى هذا الحديث بينه الحافظ في [الفتح] فقال : [أراد بالخلافة خلافة النبوة وأما معاوية ومن بعده فعلى طريقة الملوك ولو سموا خلفاء] . وبالله التوفيق . وصلى الله على نبينا محمد ، وآله وصحبه وسلم .
اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاء
عضو عبد الله بن قعود, عضو عبد الله بن غديان, نائب رئيس اللجنة عبد الرزاق عفيفي, الرئيس عبد العزيز بن عبد الله بن باز
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে, হাকিম তার মুস্তাদরাকে, আবু ইয়ালা তার মুসনাদে, ইবনে হিব্বান তার স্বহীহ’তে এবং তিরমিযী তার সুনানে। আর হাদীসটির অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী তার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে।
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ খিলাফত বলতে নবুয়্যাতের খিলাফত (৩০ বছর)-কে বুঝিয়েছেন। আর
মু‘আউয়িয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এবং তার পরবর্তীতে যেকোন ব্যক্তি (এই পদে) আসলে ধরা হবে তারা রাজাদের পথ-পদ্ধতির উপর (অর্থাৎ রাজতন্ত্রের উপর) রয়েছেন, যদিও তাদের নাম ‘খলীফাহ’ হোক না কেন।
.
▪নিবন্ধকের মন্তব্য :
মোদ্দা কথা হল : খলীফার ছেলেই খলীফাহ হবে এটা যেমন খিলাফাত নয়, তেমনি রাজার ছেলেই রাজা হতে হবে এটাও রাজতন্ত্র নয়। মুলত যোগ্যতা থাকলে খলীফার ছেলেও খলীফাহ হতে পারেন তেমনি রাজার ছেলেও রাজা হতে পারেন। এই বিষয়টা নির্ভর করে যিনি রাজা তার উপর। রাজা যদি ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন এবং সৎ, নিষ্ঠাবান হন তবে তিনি অবশ্যই যোগ্য উত্তরসুরীর নির্দেশনা দিয়ে যেতে পারেন।
রাজতন্ত্র বিরোধীদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল যে, রাজার ছেলে রাজা হবে এটাই রাজতন্ত্র আর তাই রাজতন্ত্র হারাম ! অথচ এই হারামের কোনো দলিল ক্বুরআন, হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় নাই! মুলত গণতন্ত্র নামক কুফরী প্রথার প্রচলনের পর থেকেই পাশ্চাত্যের অনুসারী কিছু বিভ্রান্ত লোক ইসলামের নামে এই নতুন ফাতাওয়া বিলি করে থাকে। অথচ গণতন্ত্র চালু হয়েছে মাত্র দেড়শ-দুই’শ বছর হল ! খিলাফাত ছিল ৩০ বছর। খিলাফাতের পূর্বেও রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল, পরেও ছিল এবং বর্তমানেও আছে।
.
নিশ্চয় আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। উপরিউক্ত এই দীর্ঘ আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!
পরিশেষে দোয়া করছি – আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আমাদেরকে সালাফী মানহাজে অটল রাখুন এবং এর উপরই আমাদের মৃত্যু দিন। [আ-মীন]
.
▪সংকলক :
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
আখতার বিন আমীর।