গাজার যেসব এলাকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে সেই এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য হামাস তার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্যকে তলব করেছে। এছাড়া পাঁচজন নতুন গভর্নরকে নিয়োগ করেছে যাদের সবাই সামরিক পটভূমির অধিকারী। এদের মধ্যে কেউ কেউ পূর্বে হামাসের সশস্ত্র শাখার ব্রিগেডগুলোকে অভিযান তদারকি করার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। স্থানীয় সূত্র অনুসারে, ফোন কল এবংক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে এই সমাবেশের আদেশ জারি করা হয়েছে। ক্ষুদে বার্তাগুলোতে লেখা ছিল, “জাতীয় ও ধর্মীয় কর্তব্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা গাজাকে ইসরাইলের অবৈধ সহযোগীদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য একটি সাধারণ সমাবেশ ঘোষণা করছি। আপনাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনাদের নির্ধারিত স্থানে আপনার অফিসিয়াল কোড ব্যবহার করে রিপোর্ট করতে হবে।” গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, হামাসের সশস্ত্র ইউনিটগুলো ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। ইউনিটের সদস্যরা কেউ বেসামরিক পোশাক পরে এবং অন্যরা গাজা পুলিশের নীল ইউনিফর্ম পরে অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে গাজা কে শাসন করবে তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে হামাস সমাবেশ ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনাকে জটিল করে তুলতে পারে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করার কিন্তু ক্ষমতায় থাকার কথা বলা হয়েছে। বিদেশে হামাসের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, “আমরা গাজাকে চোর এবং ইসরাইলি দখলদারিত্বের সমর্থিত মিলিশিয়াদের করুণার উপর ছেড়ে দিতে পারি না। আমাদের অস্ত্র বৈধ, দখলদারিত্ব প্রতিরোধের জন্য এগুলো বিদ্যমান এবং যতক্ষণ দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ এগুলো থাকবে।” অপর এক খবরে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে ইসরাইল ও হামাসের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হলেও তা মেনে নেবে না হামাস। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্ন ‘অসম্ভব এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে শনিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রস্তাবিত অস্ত্র হস্তান্তর কোনোভাবেই সম্ভব নয় এবং এটি আলোচনাযোগ্যও নয়।’ হামাসের অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে আলোচিত হবে বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অস্ত্র জমার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে এবং অভিবাসন নীতির আওতায় ইচ্ছা করলে তারা গাজা ত্যাগের অনুমতি পাবে। এক্ষেত্রে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ ও গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার এই দুটি বিষয়কে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে ছাড়া না দেওয়ার বিবৃতি এমন সময় দিয়েছে হামাস যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। এরই মধ্যে শান্তি প্রস্তাবের প্রথম ধাপ কর্যকরের পর ৭২ ঘণ্টার সময়সীমার মধ্যে হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ফলে গাজায় আটক থাকা অন্তত ২০ জীবিত ইসরাইলি বন্দি এবং ২৮ জনের লাশ ইসরাইলে ফেরত পাঠানো হবে। এর বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরাইল, যাদের মধ্যে ২৫০ জন ইসরাইলি আদালতে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত। ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এ যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি শিশু; যাদের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিবিসি, আরব নিউজ।

