নতুন এই দল স্বাধীন বিচার বিভাগ, নির্বাচিত সংসদ এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।
সৌদি আরবের নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশটিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সংস্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের মাঝে এই উদ্যোগ নেয় তারা।
নভেম্বরে রিয়াদে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রাক্কালে গত বুধবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পার্টির (নাস) ঘোষণা দেন নির্বাসিতরা।
এদিন এক বিবৃতিতে সদ্য গঠিত সৌদি বিরোধী দলটি জানায়, ‘আমরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পার্টির ঘোষণা দিচ্ছি, যার লক্ষ্য সৌদি আরবে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা।’
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমাতে দেশটির ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ব্যক্তিগত ও সরকারী জায়গাগুলির নিয়ন্ত্রণ ও একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের অনুপস্থিতি- এই সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
রাজনৈতিক দলটির নথিপত্রে সই করা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছেন লন্ডন ভিত্তিক অধ্যাপক মাদাভি আল-রশিদ। এছাড়াও সৌদি শিক্ষাবিদ ও কারাবন্দী ইসলামী পন্ডিত সালমান আল-আওদারের পুত্র আবদুল্লাহ আলাউদ ও শিয়া কর্মী আহমেদ আল-মাশিকসও আছেন।
সংসদ সম্পূ্র্ণ নির্বাচিত হবে
উদ্বোধনী বিবৃতিতে দলটি সৌদি আরবের যে রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে বলে আশ্বস্ত করে তা হল, সমস্ত নাগরিক বৈষম্যহীনভাবে আইনের আওতায় সমান থাকবে। এছাড়া তারা রাজ্যের সম্পদ, সমস্ত নাগরিক এবং সব অঞ্চলের জন্য সমানভাবে অন্তর্ভুক্ত রাখার ব্যাপারেও জোর দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি কর্তৃত্ব জনগণের থেকে আসে। এর অর্থ হ’ল প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিনিধিত্ব বাছাই করার অধিকার রয়েছে। যিনি তাদেরকে একটি সম্পূর্ণ নির্বাচিত সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এবং এই সংসদ রাজ্যের নির্বাহী সংস্থাগুলির উপর আইনী ও তদারকি করার ক্ষমতা রাখবেন।’
ক্ষমতা পৃথক করে, জনগণের সমর্থিত সংবিধানের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানায় নাস। রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে রাজ পরিবার কী ভূমিকা নেবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেনি তারা।
বিবৃতিতে এই অঞ্চলের দেশগুলির বিরুদ্ধে রাজ্যের “আগ্রাসী” বৈদেশিক নীতির সমালোচনাও করা হয়েছে।
সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা বার্ষিকীর দুই সপ্তাহেরও কম আগে নতুন দলটি আত্মপ্রকাশ করে।
সৌদি সাংবাদিক হত্যার এই ঘটনা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি রিয়াদের নির্মম অসহিষ্ণুতার পরিচয় উঠে এসেছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এমবিএস নামেও সমধিক পরিচিত। সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে সরকারী গুপ্তচরদের দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল।
এমবিএস ও তার দমন-নিপীড়ন
২০১৭ সালে তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরপরই এমবিএস যুবরাজ হওয়ার লক্ষে, সহ-রাজকীয়দের পাশাপাশি রাজ্যের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এক বিরাট শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন।
সাংবাদিক, ভিন্ন মতাবলম্বী ও নারী অধিকারের আইনজীবীরাও এই অভিযানের লক্ষ্য বস্তু হয়েছিল।
তবুও এটি ছিল খাশোগির হত্যাকাণ্ড, যা পশ্চিমা রাজধানীগুলিতে ক্ষোভের কারণ হয়েছিল। খাশোগি ওয়াশিংটনে থাকতেন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার পাশাপাশি বার্তাসংস্থা মিডেলইস্ট আই-এ লেখালেখি করতেন।
সৌদি বিরোধী ওমর আব্দুলাজিজ বলেন, ‘নতুন দল ঘোষণা করা নেতাকর্মীদের পক্ষে বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।’ যিনি মন্ট্রিয়ালে অবস্থানরত সামাজিক গণমাধ্যমে জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্ব।
‘আমরা বিশ্বাস করি যে এই পার্টিতে থাকা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে আমি জানি যে অতীতেও এইরুপ চেষ্টা করার সময় অনেকে তাদের স্বাধীনতা এবং জীবন হারিয়েছে।’- নাসের টুইটার অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।