গত পাঁচ মাসে অন্তত চারটি ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অভিযুক্তরা হিন্দু এবং ভিক্টিমরা সবাই মুসলিম। অথচ এসব ঘটনায় দেশের কথিত বিশিষ্ট নাগরিক, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, সেক্যুলার বামনেতারা, ও রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত নীরব। কোনো বিবৃতি নেই, নেই প্রতিবাদের ভাষা, এমনকি একটি ছোট্ট ফেসবুক পোস্টও নয়।
মে ৭, ২০২৫: নোয়াখালীর এক মাদ্রাসাছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঢাকায় এনে একাধিকবার ধর্ষণ করে এবং পতিতালয়ে বিক্রি করে শুভজিৎ মন্ডল।
আগস্ট ১৪, ২০২৫: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ১৪ বছরের এক তরুণীকে তুলে নিয়ে টানা সাতদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে জয় কুড়ি।
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫: সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কালিবাড়ি বাজার এলাকায় ১২ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে স্থানীয় পুরোহিত নবদ্বীপ বৈদ্য।
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে কনিক রায় নামে এক ছেলে।
এসব ঘটনায় মুসলিম কিশোরী, বাচ্চাদের ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হলেও তথাকথিত বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল গুলার নেই নূনতম প্রতিবাদ।
আমরা দেখেছি গতবছর কলকাতায় আরজিকর হাসপাতালে ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আছিয়ার বাড়িতে গিয়েও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা স্বান্তনা দিয়ে আসছে
এইতো কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এক বামপন্থী নারী শিক্ষার্থীকে ফেসবুকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। এক্ষেত্রে বিশিষ্ট নাগরিকরা কঠিন প্রতিবাদ জানান, রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়, তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করে, আর মূলধারার গণমাধ্যম ঘন্টার পর ঘন্টা ব্রেকিং নিউজ প্রচার করে।
অবশ্যই তাদের এই প্রতিবাদকে আমরা স্বাগত জানাই । কিন্তু যখন দেখা যায়— ধর্ষক হিন্দু হলে একই বিশিষ্ট নাগরিক, একই রাজনৈতিক শক্তি ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণি নীরব থাকে, তখন প্রশ্ন উঠে: তাদের লক্ষ্য কি আসলে ধর্ষণের বিচার, নাকি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধকেও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা?
লেখক ও ডাক্তার রাফান আহমেদ বলেন:
“আমাদের সমাজে ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারা বিশিষ্টজনেরা যে সংস্কৃতির ধারক বাহক তা বাঙালি, লিবারেল, আধুনিক নানা নামে পরিচিত। তো স্বভাবতই উদারনৈতিক হলে সবার প্রতি হওয়া অন্যায়ে সমানভাবে প্রতিবাদ করার কথা। কিন্তু এখানেই শুভঙ্করের ফাঁকি। হিন্দু পুরোহিত ধর্ষণ করলে, কিংবা চিন্ময়রা শিশু নিপীড়ন করলে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না যেমনটা মুসলিম সম্পৃক্ত কেউ করলে দেখা যায়। এর কারণ কী? বাঙালির কল্পনার উদারনীতির ময়দানে ইসলাম জায়গা পায়নি। সে ক্ষমতার কাছে ‘অপর’ হিসেবে সাব্যস্ত। তাই হয়ত তার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধ নিয়ে বাঙালি যে রাজনীতি করে, মুসলমান নির্যাতিত হলেও তেমন প্রতিক্রিয়া হয় না। বরং এমন কাঠামো তৈরি করা হয় যাতে মুসলমান নির্যাতিত হয়েও জালিম হিসেবে পরিচিত থাকে।”
এখানেই মূল দ্বিচারিতা। মানবাধিকারের প্রশ্নে সমতা দাবি করা হয়, কিন্তু বাস্তবে ধর্মীয় পরিচয় দেখে প্রতিবাদের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধর্ষণ বা নির্যাতনের ক্ষেত্রে যদি ভিক্টিম মুসলিম হয় আর অপরাধী হিন্দু হয়— তবে তা মূলধারার লিবারেল মহল, তথাকথিত বিশিষ্টজনের কাছে এটি কোন খবরই নয়। এই নীরবতা কেবল অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয় না, বরং সমাজে ভয়াবহ বিভাজন তৈরি করে।ধর্ষণ কোনো রাজনৈতিক অস্ত্র নয়। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। কিন্তু বাংলাদেশের লিবারেল-সেক্যুলার মহল প্রমাণ করেছে যে তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে নয়, বরং নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আঘাত করার হাতিয়ার হিসেবে ধর্ষণ ইস্যু ব্যবহার করে। এতে ভিক্টিমদের ন্যায়বিচার তো দূরের কথা, বরং অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হয়।