ইন্ডিয়াকে ‘আশ্বস্ত’ করার জন্য গতকাল সারাদিন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গালি খেয়েছেন।
তবে ইন্ডিয়াকে মীর্জা ফখরুল একা আশ্বস্ত করেছেন, এমন না। জামাতে ইসলামী শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা ইতোপূর্বে ইন্ডিয়াকে ‘আশ্বস্ত’ করেছেন। আমীরে জামাত মাসখানেক আগে এক ইন্ডিয়ান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘জামাত কখনো ভারতবিরোধী ছিল না।’
লীগের প্রশ্নে সবচেয়ে নমনীয় অবস্থান নেওয়ার কারণে বিএনপি সবচে কুখ্যাত হলেও, আসলে জামাতে ইসলামীর এই বিষয়ে অবস্থানও মোটামুটি একই। লীগের বিচার, লীগকে নির্বাচন করতে না দেওয়ার ব্যাপারে জামাতকে তেমন কোনো শক্ত অবস্থান বা সক্রিয় আন্দোলন বা দাবি আদায়ে আগ্রহী দেখা যায় নি। উলটো শফিকুর রহমান এও বলেছিলেন, (ফ্যাশিস্ট লীগকে) বারবার ফ্যাশিস্ট বলা তার পছন্দ নয়। শহীদের রক্ত যখন শুকায় নি, আহতের গায়ে যখন দগদগে ক্ষত, তখন তিনি আগ বাড়িয়ে লীগকে ক্ষমা করার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন — অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে।
বিএনপির মীর্জা ফখরুলকে প্রচুর গালি খেতে হয়েছে একটা কথা বলার জন্য তা হোলো, ‘বিএনপি শরীয়া আইনে বিশ্বাস করে না’ (rightly so)। অথচ জামাতের ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনেকেই শরীয়া আইনের প্রশ্ন এলেই বলতে থাকেন উনারা লিবারেল, মডারেট দল — এরকম ডজনখানেক স্টেইটমেন্ট আছে। তাহের সাহেব তো দুদিন আগে খুল্লামখুল্লা ইন্ডিয়ান মিডিয়ায় বলেই ফেলেছেন, ‘আমরা কবে বলেছি শরীয়া আইন আনবো!’
এরকম অনেক ইস্যুতে বিএনপি আর জামাতে ইসলামীর অবস্থান *কার্যত* একই, তবে মাত্রা কিংবা এক্সপ্রেশনগত পার্থক্য আছে — যে কারণে গালিটা বিএনপি একাই খায় আর জামাত খায় না। দুটি দলের নেতৃত্বই ডান থেকে বামে সরে এসেছে। বিএনপি সেন্টার থেকে বামে এসেছে, আর জামাত ডান থেকে সেন্টারে ঘেঁষেছে। লক্ষ্য করুন, সেকুলার পলিটিকাল স্পেক্ট্রামে দুই দলের অবস্থান ভিন্ন স্পেক্ট্রামে হলেও এদের পরিবর্তনের *ডিরেকশন* কিন্তু একই দিকে — বামে। দুই দলই আরো প্রগতিশীল, আরো সুশীল, আরো উদার হতে চাইছে।
সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আর বামে যেতে চায় না। সামাজিক ইসলামপন্থা অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ায় বামঘেঁষা রাজনীতি ব্যাপকভাবে রিজেক্টেড হচ্ছে। তাই যে গালিটা এখন বিএনপি খাচ্ছে, সে গালিটা দশ বছর পর জামাত খাবে, যদি না তারা কোর্স অফ অ্যাকশন পরিবর্তন করে।
ভারতবিরোধিতা এবং ইসলামপন্থা — এ দুটো অক্ষ থেকে যে বা যারা সরে যাবে, তাদের এই দেশের রাজনীতিতে ভবিষ্যৎ আছে বলে মনে হয় না।