বানিয়ে বানিয়ে গাল গপ্প বানিয়ে ওয়াজ করার সংস্কৃতি নতুন কিছু না। এটা এক ধরণের ওয়ায়েজ সব সময়েই এই কাজটা করে এসেছে। তারা বানিয়ে বানিয়ে হাদিস, সোয়াব, আমলের বয়ান করত। এদের বয়ানের একটা উদ্দেশ্য থাকত যত বানিয়ে কোন আমলের সোয়াব বাড়িয়ে বলা যাবে তত বেশি ফায়দা হবে। এজন্য এই দেশের এক নির্দিষ্ট পন্থী আলেমদের বক্তব্যে প্রচুর জাল এবং বানোয়াট কথা শুনতে পাবেন। এবং হকপন্থী আলেমরা সব যুগেই এদের সমালোচনা করে এসেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এবং এদের বানোয়াট বয়ান থেকে উম্মাহকে রক্ষা করার জন্য সহিহ এলেমের দাওয়াত এবং প্রচারণায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন ।
কিন্ত জনাব তারেক মনোয়ার এবং আমির হামজার বানোয়াট কথা বলার বিষয়টি সম্পন্ন ভিন্ন। এদের মিথ্যে এবং বানোয়াট কথা বলাটাকে সাধারণ ওয়ায়েজদের বানোয়াট কথা বলার সাথে মিলানো সম্ভব না। তারেক মনোয়ার এবং আমির হামজা যেসব মিথ্যে কথা বলেন তার বেশিরভাগই নিজেদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে বলেন। নিজেকে অভিজ্ঞ, কিংবা নিজে বিষয়টি দেখেছেন কিংবা নিজে বিষয়টির স্বাদ নিয়েছেন এরকম এক অনুভূতি তাদের শ্রোতাদের দিতে গিয়ে প্রকাশ্যে এবং স্পষ্ট মিথ্যে কথা বলতে এদের কোন প্রকার কোন বাধ সাজে না। এজন্য নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে যেভাবে যে কাহিনী বানানো দরকার ঠিক সেভাবেই তারা বানায়।
সমস্যা হল এরা যেসব স্থানে গিয়ে এরকম চাপাবাজি কিংবা মিথ্যে কথা বলে সেসব স্থানের মানুষ খুব মুগ্ধতার সাথে এই চাপাবাজদের বক্তব্য শুনে। আধুনিক সময়ে যেহেতু ওয়াজগুলোর ভিডিও হয় স্বাভাবিকভাবেই তা সব স্থানেই একটা সময় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর যখন সমালোচনা শুরু হয় তখন তারা মাফ চায়। এগুলো যদি না ছড়াত তাহলে তারা কখনো নিজেদের ভুল স্বীকার করে মাফ চাইত কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
আরেকটা সমস্যা হল এরা প্রকাশ্যই একটি রাজনৈতিক দল দ্বারা মোটিভেইটেড। তাই তাদের মিথ্যে বচনের শিল্প যেকোন সময় তাদের যে কোন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কাজে লাগতে পারে। এদের এইসব মিথ্যে কথার স্বীকার অন্যান্য আলেম ওলামারাও হতে পারেন। কখনো রাগ কিংবা হিংসার বশবর্তী হয়ে কোন আলেমকে ছোট করার জন্য মিথ্যে কথা বলতে এদের কোথাও বাঁধবে না। ইতোমধ্যে তারেক মনোয়ারের একটি ভিডিও হয়তবা দেখেছেন যে সে হাসিনার সময়ে থাকা মসজিদের ইমামদের নিয়ে কিভাবে জিঘাংসা মূলক বক্তব্য রেখেছে। তার পুরো বক্তব্যের স্পষ্ট বার্তা হল এদেরকে পরিবর্তন করে দিয়ে তাদের পলিটিক্যাল দলের আশীর্বাদপুষ্ট লোকদেরকে ইমাম বানানো। খোদ তারেক মনোয়ারেরই অনেক বক্তব্য আছে যেখানে সে হাসিনাকে মহান বানানোর চেষ্টা করেছে। একইভাবে আমির হামজারও অসংখ্য দ্বিচারি বক্তব্য আছে। এছাড়া তাদের ঘরানার অন্যান্য আলেমদেরও দ্বিচারি বক্তব্যমূলক ওয়াজ ইউটিউবে খুঁজলেই পাওয়া যাবে। অথচ সে একটি বিভ্রান্তিমূলক অভিযোগ এনে মসজিদের মিম্বারগুলো কওমি আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র তৈরি করছেন !
মিথ্যা, অতিরঞ্জন আর দ্বিচারিতা কোনো সময়েই ইসলামি দাওয়াতের অংশ হতে পারে না। আলেমদের দায়িত্ব হলো সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলা—কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিগত স্বার্থের মুখপাত্র হয়ে ওঠা নয়। তাই যারা ওয়াজকে মিথ্যা প্রচার, ব্যক্তিগত প্রচার কিংবা রাজনৈতিক হাতিয়ার বানায়, তাদেরকে চিহ্নিত করে দূরে রাখা জরুরি। এরা টিকে গেলে একটা সময়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক বয়ান করাও সম্ভব হবে না কিংবা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। তখন আবারো সেই হাসিনার আমলে ফেরত যেতে হবে যেখানে আসমানের উপরে আর জমিনের নিচেরন কথা বলা ছাড়া আর কোন কথা বলা সম্ভব হবে না।