(গত মঙ্গলবার কুয়েতের বিশ্বখ্যাত এই গুণী আলেম মৃত্যুবরণ করেছেন। তার জন্ম মিশরে। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টি থেকে অনার্স করেন। শায়খ বিন বাযের খুব প্রিয় ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনার পরও কয়েক বছর সৌদিতে ছিলেন। মদিনায় থাকাকালে তিনি ও শায়খ ওমর আশকার সহপাঠী ও সহদাঈ ছিলেন। শায়খ বিন বাযের তত্ত্বাবধানে তালিবুল ইলমদের যে দাওয়াতি গ্রুপগুলো বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো এর মধ্যে তিনিও থাকতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্থায়ীভাবে কুয়েতে বসবাস করেন। কুয়েতের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং সেখানে ইলম বিতরণ ও সহিহ আকিদা-বিশ্বাস প্রসারে অসামান্য অবদান রাখেন। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬১টি। তার অসামান্য অবদানের জন্য কুয়েত সরকার তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেন। সম্প্রতি মুসলিম আরব বিশ্বে ইসরাইলের সঙ্গে যে চুক্তি ও সমঝোতা হচ্ছেÑ এর বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছিলেন। উম্মাহকে সাবধান করে মৃত্যুর ২ দিন আগে তিনি আরবিতে এই আর্টিকেল লিখেছিলেন)
আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের ওপর নিজ রাসুলকে বিজয়ী করেছেন, যাতে করে তিনি তাদের আরব অঞ্চল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। তিনি বলেন : ‘তিনিই কিতাবীদের (বনু নাজির গোত্রের ইহুদিদের) মধ্যে যারা কাফের, তাদের প্রথমবারের মতো একত্রিত করে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তোমরা মনে করনি যে, তারা বের হবে। তারাও মনে করেছিল যে, তাদের দুর্গগুলো তাদের আল্লাহর (শাস্তি) থেকে রক্ষা করবে; কিন্তু আল্লাহর শাস্তি তাদের ওপর এমন এক জায়গা থেকে এলো, যা তাদের ধারণায় ছিল না। তিনি তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন। তারা তাদের হাতে ও মোমিনদের হাতে নিজেদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করছিল। অতএব, হে দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। আল্লাহ তাদের জন্য নির্বাসন ধার্য করে না রাখলে দুনিয়ায় অবশ্যই তাদের (অন্য) শাস্তি দিতেন। আর আখেরাতে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি তো আছেই। এর কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে বিরোধ করেছে। আর আল্লাহর সঙ্গে যে বিরোধ করে, আল্লাহ তো তাকে কঠিন শাস্তি দেবেনই।’ (সুরা হাশর : ২)। নবী (সা.) ইহুদিদের লক্ষ্য করে বলেছেন : ‘জেনে রাখ, ভূমির মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসুল। নিশ্চয় আমি তোমাদের এ ভূমি থেকে নির্বাসিত করতে চাই।’ (বোখারি)।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন : ‘আল্লাহ তাঁর রাসুলকে (ইহুদি) জনপদবাসীদের কাছ থেকে যে ফায় (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) দিয়েছেন, তা আল্লাহ ও রাসুলের জন্য।’ (সুরা হাশর : ৭)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের কাছ থেকে মুসলমানরা যা কিছু গ্রহণ করেছেÑ সেটা ভূমি হোক কিংবা সম্পদ হোক, সেটাকে ফায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর ফায় অর্থ : ফিরে আসা। অর্থাৎ এই ভূমি তার আসল মালিকের কাছে ফিরে এসেছে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তার সৎকর্মশীল বান্দাদের ভূমির উত্তরাধিকারী বানান। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘আমি সংরক্ষিত ফলকের (লওহে মাহফুজের) পর আসমানি কিতাবেও লিখে দিয়েছি যে, জমিনের উত্তরাধিকারী হবে আমার যোগ্য (অথবা সৎকর্মপরায়ণ) বান্দারা।’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৫)। অতএব, কাফেরের ভূমির অধিকার নেই।
সুরা আহজাবে এসেছে, জিবরাইল (আ.) নবী (সা.) এর কাছে এসে বললেন : ‘নিশ্চয় আপনার প্রভু আপনাকে বনি কুরাইযার উদ্দেশে বের হতে নির্দেশ দিচ্ছেন।’ নবী (সা.) জোহরের নামাজ পড়ে মুসলমানদের লক্ষ্য করে বললেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন আসরের নামাজ বনু কুরাইযা ছাড়া অন্যত্র না পড়ে।’ নবী (সা.) তাদের অবরোধ করে রাখলেন এবং তাদের তাঁর সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কিতাবধারীদের মধ্যে যারা (মদিনার ইহুদিরা) তাদের (কাফেরদের) সাহায্য করেছিল আল্লাহ তাদের দুর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন। (ফলে তাদের) একদলকে তোমরা হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দি করছ। তিনি তোমাদের তাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদের উত্তরাধিকারী করেছেন এবং এমন একটি ভূখ-েরও (মালিক করে দিয়েছেন) যেখানে তোমরা এর আগে যাওনি। আল্লাহ সবকিছুই করতে সক্ষম।’ (সুরা আহজাব : ২৬)।
যখন নবী (সা.) হুদাইবিয়া থেকে ফিরে এলেন, আল্লাহ তাকে খাইবার অভিমুখে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেন; যাতে করে যারা বৃক্ষের নিচে তাঁর হাতে মৃত্যুর অঙ্গীকার করেছিল তাদের জন্য গনিমত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘যখন তোমরা গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) সংগ্রহের জন্য যাবে, তখন যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তারা বলবে, ‘আমাদেরও তোমাদের সঙ্গে যেতে দাও।’ তারা আল্লাহর কথা পরিবর্তন করতে চায়। বলে দিন, ‘তোমরা কখনও আমাদের সঙ্গে যাবে না। এমনটি আল্লাহ আগেই বলেছেন।’ (সুরা ফাতহ : ১৫)। যখন নবী (সা.) বিনাযুদ্ধে খাইবার বিজয় করলেন, তখন বিজয়ী সাহাবিরা ভূমি ও সম্পদ লাভ করলেন। নবী (সা.) ইহুদিদের খাইবারের জমি অর্ধেক ফসলের বদলে বর্গা চাষ করার অনুমতি দিলেন। নবী (সা.) তাদের লক্ষ্য করে বললেন : ‘আমরা যতদিন চাই, ততদিন তোমাদের থাকার অনুমতি দেব। আর যখন চাই, তখন তোমাদের বের করে দেব। এরপর নবী (সা.) তাঁর মৃত্যুর আগে বলে যান : ‘তোমরা জাজিরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপ) থেকে ইহুদিদের বের করে দাও। আরব উপদ্বীপে দুটি ধর্ম থাকবে না।’
আজ ইহুদিদের জন্য আরব উপদ্বীপ খুলে দেওয়া, তাদের যে ভূখ- থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সেটার ক্ষতিপূরণের দাবি তোলার সুযোগ দেওয়া এবং তাদের এ দাবিকে মেনে নেওয়া কুফুরি, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর জুলুম ও সীমালঙ্ঘনের অপবাদ আরোপ এবং এ কোরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার নামান্তর। তাই এ ধরনের ধারাসম্বলিত ইহুদিদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করা কিংবা শান্তিচুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর দ্বীনকে অস্বীকার করার শামিল। অতএব, হে দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।