Friday, December 6, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরকাউন্সিলর রতন টাকার গন্ধ পেলেই বেপরোয়া

কাউন্সিলর রতন টাকার গন্ধ পেলেই বেপরোয়া

রতনে রতন চিনলেও ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর রতন টাকাটা ভালো করেই চিনেছেন। যেখানে টাকার গন্ধ সেখানেই কাউন্সিলর রতন। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না, টাকা পেলে তিনি সব কিছুই করতে পারেন। টাকার গন্ধ পেলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন কাউন্সিলর রতন। সম্পদের পাহাড় গড়তে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো জুয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তিনি। ক্যাসিনোকাণ্ডসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। দুদকের অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে কাউন্সিলর রতনের চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসা, দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদ এবং বিদেশে অর্থপাচারের মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য-উপাত্ত। শুধু সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের অবৈধ ও নকশাবহির্ভূত দোকান বানিয়ে বিক্রি করা এবং সেই অবৈধ দোকানকে কাগজে-কলমে বৈধ করার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় শতকোটি টাকা। সুন্দরবন মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোর, সিঁড়ি, করিডর, লিফট ও বাথরুমের জায়গা দখল করে দোকান বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া আর ওই সব দোকান বৈধ করার আশ্বাস দিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন রতনের বিরুদ্ধে। ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের কাছে জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এমনই অভিযোগ করেন সুন্দরবন মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ওই অভিযোগের পর কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন রতনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ডিএসসিসি।

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাউন্সিলর রতন ও তাঁর সিন্ডিকেট মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড, লিফট, সিঁড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে দোকান বানিয়ে বিক্রি করে। পজিশন এবং দোকান বৈধ করার কথা বলে দোকানপ্রতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করে ২০-২৫ লাখ টাকা। পুরো মার্কেটে পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকান বানিয়ে শতকোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, সুন্দরবন স্কয়ার সুপারমার্কেটের খোলা জায়গা, বরান্দা, টয়লেটের সিঁড়ি, জেনারেটর রুম, পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পানি, বিদ্যুৎ সেবার নামে অতিরিক্ত বিল আদায় করে নিজের পকেটে ভরেছেন।

কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন রতনকে কেউ কেউ অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা হিসেবেও চিনে থাকেন। অবৈধ ক্যাসিনো থেকে দুহাত ভরে কামিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অবৈধ ক্যাসিনো থেকে চাঁদার টাকায় অল্প কয়েক বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান রতন। বিশাল ক্যাডার বাহিনীর মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে চলাচল করে এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখেন। যেন পুরো গুলিস্তান এলাকা নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছেন রতন। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে ক্যাসিনো জুয়া প্রথম চালু করেন কাউন্সিলর রতন। ওই ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতিদিন দুই লাখ টাকা করে। এরপর ২০১৭ সালের দিকে ঢাকার ৩৭/২ নম্বর পুরানা পল্টনের প্রীতম জামান টাওয়ারের ১৩ ও ১৪ তলায় প্রথম অনলাইন ক্যাসিনো চালু করেন। সেখান থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। কাউন্সিলর রতন ও তাঁর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বঙ্গবাজার, পুরান বাজার গুলিস্তান, ট্রেড সেন্টার, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা, জাকির প্লাজা, ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট থেকে প্রতিদিনই চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, ডিএসসিসির সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ভবন নিজের কবজায় রাখা, গুলিস্তানের একাধিক স্পটে অবৈধ দোকান বসিয়ে টাকা আদায়, মহানগর নাট্যমঞ্চসহ আশপাশের এলাকায় মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বেপরোয়া এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর আচরণে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিষ্ঠ। গুলিস্তান, সেগুনবাগিচা, নগর ভবনসহ আশপাশের এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন কাউন্সিলর রতন। পিডাব্লিউডি, বিদ্যুৎ ভবন, খাদ্য ভবন ও নগর ভবনের বিভিন্ন ঠিকাদারিতে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বিভিন্ন মার্কেটের চাঁদাবাজির টাকা, ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকাসহ অনিয়মের টাকার বেশির ভাগই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কৌশলে পাচার করা হয়েছে। ওই সব পাচারের টাকায় সেখানে ফ্ল্যাট, হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন কাউন্সিলর রতন।

কাউন্সিলর রতনের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে কাউন্সিলর রতন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ রাজধানীতে ক্যাসিনো ব্যবসার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এরই মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাউন্সিলর রতনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। দুদক সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর রতনের বিরুদ্ধে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ তারা পেয়েছে। ক্যাসিনো ব্যবসা থেকেও মাসোহারা পেতেন রতন। ওই সব অবৈধ টাকার বেশির ভাগই তিনি দেশের বাইরে পাচার করেছেন।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে কাউন্সিলর রতন চানখাঁরপুল মোড়ে ডিএসসিসির একটি মার্কেট নির্মাণের কাজ নেন বেনামে। দুই বছর মেয়াদি এই নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। তবে এরই মধ্যে আট কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন তিনি। এ মার্কেটে দোকান বরাদ্দের জন্য ডিএসসিসি শত শত মানুষের কাছ থেকে টাকা নিলেও মার্কেট নির্মাণ কবে শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। ২০১৮ সালে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের অবৈধ দখলদারি, নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ এবং কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের নিরসন চেয়ে ডিএসসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সহসভাপতি সামসুল হক দূররানী। সুন্দরবন স্কয়ার সুপারমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম নূরু গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও কাউন্সিলর রতনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শাহাবুদ্দিন আমার একটি দোকান জোরপূর্বক দখল করে অন্য জায়গায় ভাড়া দিয়েছেন। আমি মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির নেতা হলেও আমাদের মার্কেটে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আলিমুজ্জামান আলমসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, দক্ষিণ সিটির বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নাম করে কাউন্সিলর রতন অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর বেপরোয়া দখল বাণিজ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ সিটি এলাকায় মতিঝিলের বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবে ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গেও তাঁর নাম আসে। শুধু তা-ই নয়, ঠিকাদারি ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করেন কাউন্সিলর রতন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আলোচিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের সঙ্গে ছিল কাউন্সিলর রতনের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক। গণপূর্তসহ বিভিন্ন সরকারের দপ্তরের শত শত কোটি টাকার কাজ ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিতেন জি কে শামীম ও রতন। তাঁদের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের ভয়ে কেউ দরপত্রে অংশ নেওয়ার সাহস পেতেন না, ফলে একচেটিয়া টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কামিয়েছেন কয়েক শ কোটি টাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

16 − fifteen =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য