দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ নিউ ক্যালেডোনিয়ার লোকজন আরও একবার ফ্রান্সের সাথে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে। ফ্রান্সের আওতাধীন এই রাজ্যের বাসিন্দারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ গণভোটে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার অঞ্চলটির ৩০৪ টি ভোটকেন্দ্র-এর সকল ব্যালটপেপার গণনা শেষে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ৫৩.২৬ ভাগ ভোটদাতা স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনটি সম্ভাব্য গণভোটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয়টিতে ভোটগ্রহণের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল বলে জানা যায়। এই দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ গণভোটে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে, দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষের বসবাসরত অঞ্চলটি ফ্রান্সের সরকারি সাহায্য থেকে প্রাপ্ত ১৫০ কোটি বিলিয়ন ডলার বার্ষিক আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল থাকবে।
ফরাসী রাষ্ট্রপতি এমমানুয়েল ম্যাক্রন, এলিসি প্রাসাদ থেকে দেওয়া এক ভাষণে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ওই এলাকার জনগণের প্রতি এই রায়ের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
নিউ ক্যালেডোনিয়ায় এটা স্বাধীনতার দাবিতে দ্বিতীয় গণভোট। ২০১৮ সালে প্রথম দফার গণভোট হয়েছিল। তখন প্রায় ৫৭ শতাংশ ভোটার স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ২০২২ সালেও তৃতীয় গণভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি স্থানীয় বিধানসভার এক তৃতীয়াংশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়।
ফ্রান্স উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নিউ ক্যালেডোনিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। নিউ ক্যালেডোনিয়ানরা ফ্রান্সের কাছ থেকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং নৌমিয়া চুক্তি মোতাবেক তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা অনুযায়ী তিনবার পর্যন্ত গণভোটের অধিকার অর্জন করেছিল। ১৯৯৮ সালে ফরাসি এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে নোমিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
স্বাধীনতাপন্থীদের সহিংস আন্দোলন থামানোর জন্য ১৯৮৮ সালে ফ্রান্স নৌমিয়া চুক্তির মাধ্যমে দ্বীপটিতে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে আদিবাসী কনক জনগোষ্ঠী এবং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের (যারা ক্যালডোশেস নামেও পরিচিত) মধ্যে কয়েক দশকের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।
মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৯ শতাংশ হলো আদিবাসী কনক জনগোষ্ঠী। নৌমিয়া চুক্তি মোতাবেক সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তারা এখনও উচ্চ বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যতার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায় নিম্ন কৃতিত্ব অর্জনের মুখোমুখি হয়।
২০১৮ সালের গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ভোটদাতারা বেশিরভাগই ছিলেন কনক জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে যারা ফ্রান্সের সাথে অব্যাহত সম্পর্ককে সমর্থন করে, তারা হলো ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত অথবা অন্যান্য আদিবাসী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী।
স্বাধীনতা পন্থীদের কাছে সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্বের অর্থ হ’ল উপনিবেশন প্রত্যাহার, স্বাধীনতা, অসমতা হ্রাস এবং দ্বীপগুলির ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া। এছাড়াও রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ-এর বিস্তৃত সম্প্রদায়গুলোতে তাদের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আনুগত্য পুনরুদ্ধারকরণ।
অনুগতরা অবশ্য বলছেন, তারা তাদের ফরাসী ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। ফরাসি ভর্তুকির কারণে তাদের জীবনযাত্রার উচ্চমানের পাশাপাশি দ্বীপপুঞ্জগুলিতে সরকারী পরিষেবা অনেক বেশি পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে বলে তারা দাবি করে।