রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুমাইয়া আক্তার নামে এক গৃহকর্মীকে নখ উপড়ে, চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে, মাথায় ও পিঠে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনে শিশুটির পিঠের চামড়া উঠে গেছে। শরীরের একাধিক স্থানে রয়েছে ছ্যাঁকার দাগ, গরম পানি পিঠে ঢালায় মাংস বেরিয়ে এসেছে। তার হাত, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। শিশু সুমাইয়ার বয়স মাত্র ১০ বছর। তার খালা রোকেয়া বেগম মানবজমিনকে বলেন, সুমাইয়া এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন। সম্প্রতি তার বাবা ইদ্রিস আলীর টিউমার অপারেশন হয়েছে। তিনি রাস্তায় হেঁটে চা বিক্রি করেন। সুমাইয়ার মা রবিনা বেগম বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সুমাইয়া মেজো। সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যরা মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় ভাড়া থাকেন। বাসা বাড়িতে কাজের সুবাদে গৃহকর্ত্রী মাসুমা বিনতে মঈনের সঙ্গে পরিচয় হয় সুমাইয়ার মায়ের। ছয় থেকে সাত মাস আগে মেয়েকে শের শাহ সুরী সড়কে মাসুমার বাসায় কাজে দেন।
এরপর থেকে সুমাইয়ার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় গৃহকর্ত্রী মাসুমা। মেয়েকে দেখতে গেলে দেখা করতে দিতেন না। মাসুমা বলতেন, করোনার মধ্যে কাউকে বাসায় এলাউ করবো না। এসব বলে গেট থেকে পাঠিয়ে দিতেন। নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির খালা রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, সুমাইয়ার হাতের নখ উপড়ে ফেলেছে। পিঠে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতো। গরম পানি দিয়ে চামড়া ঝলসে দিয়েছে। পিঠের লালচে মাংস বেরিয়ে গেছে। মাথায় ডাল ঘুটনি দিয়ে প্রায়ই মারতো। এখন সেখানে বড় ঘাঁয়ের মতো হয়ে গেছে। মাথায় গরম পানি ঢালাতে সব চুল উঠে গেছে। তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে চোখে মরিচের গুঁড়া, মুখে গরম পানি ঢেলে দিতেন। এমনকি হাতে গরম তেল ঢেলে দিয়েছেন। শিশুটির পিঠে এবং গলায় খামচি ও আঁচড়ের অসংখ্য দাগ রয়েছে। প্রায় সময় গলা চেপে ধরতো। গায়ে গরম পানি ঢেলে দেয়ায় কান্না করলে সুমাইয়াকে বাথরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিতো। গায়ে ফ্রিজের পানি ঢেলে দিতো। নির্যাতনের পর ব্যথানাশক ওষুধ খাইয়ে আবার কাজ করাতো। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে ব্যথানাশক ইনজেকশন দেয়া হতো শিশু সুমাইয়াকে।
মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বাসার গৃহকর্মী হারিয়ে গেছে এই মর্মে মোহাম্মদপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করতে আসেন গৃহকর্ত্রী মাসুমা বিনতে মঈন। এ সময় সুমাইয়ার মা থানায় হাজির হন। তিনি পুলিশকে জানান, গত পাঁচ মাস ধরে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয় না গৃহকর্ত্রী মাসুমা। পরবর্তীতে জানতে পারেন সুমাইয়া বাসা থেকে তার মামার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় চলে গেছে। এরপর তাকে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
মাসুমার স্বামী কাজী মারুফুজ্জামান নাইম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। করোনার কারণে তার চাকরি চলে যায়। তাদের সংসারে একটি প্রতিবন্ধী শিশু সন্তান রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটি জানায়, গৃহকর্ত্রীর স্বামী তাকে সোনা’মা বলে ডাকতো। সে শিশুটিকে কখনো মারধর বা খারাপ ব্যবহার করেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক শফিউল আলম বলেন, শিশুটির বাবা বাদী হয়ে এ বিষয়ে একটি মামলা করেছেন। গত শনিবার রাতে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে আসার পর, গৃহকর্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গত রোববার আদালতে নেয়ার পর মাসুমা বিনতে মঈনকে কারাগারে পাঠানো হয়। আসামি মাসুমা ইতিমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বলেছেন, বাচ্চাটা প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানসিকভাবে বিষণ্ন হয়ে এ কাজ করেছি।