গত বছরের ১৮ অক্টোবর। ফাহিমা আক্তার (২৮) নামে এক নারী তার তিন সন্তানকেই জুসের সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। বিষমিশ্রিত লিচুর জুস খেয়ে সন্তানরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে সাথী নামে ছয় বছরের এক সন্তান মারাও যায়। অন্য দুই সন্তান ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কারও ধারণাও ছিল না, তিন সন্তানকে হত্যা করতে জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছিলেন তাদেরই মা।\হপরে ফাহিমার আচরণে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। সন্তানের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে আদালতে মামলা করেন ফাহিমার স্বামী সিরাজুল ইসলাম। আদালত মামলাটির তদন্ত করতে হবিগঞ্জের পুলিশকে নির্দেশ দেন। এক বছর পর বেরিয়ে এলো ওই ঘটনার নেপথ্য কাহিনি।
গতকাল মঙ্গলবার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় হবিগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ফাহিমা। এর আগে তিন দিনের রিমান্ডে থাকাকালে পুলিশের কাছেও তার অপরাধ স্বীকার করেন। রিমান্ডে বেরিয়ে আসে সম্পর্কের কাহিনি। হবিগঞ্জের সদর থানার উচাইল গ্রামের আক্তার হোসেনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ফাহিমা। তার সঙ্গে নির্বিঘ্নে সংসার করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। আক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেই তার তিন সন্তান তোফাজ্জল ইসলাম (১০), রবিউল ইসলাম (৬) ও সাথীকে (৬) দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।\হহবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ১৫ বছর আগে ফাহিমার সঙ্গে সিরাজুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে শেষের দুটি যমজ ছিল। তিন সন্তান হওয়ার পর ফাহিমার টমটম চালক স্বামীর পক্ষে সংসারের চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। অভাব-অনটনের কারণে প্রায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে ফাহিমা একটি কোম্পানিতে ছোটখাটো পদে চাকরিও নেন। তখন প্রতিবেশী আক্তার হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। জানা যায়, প্রথমে ফাহিমাকে নানা ধরনের কুপ্রস্তাব দেন আক্তার। এতে তিনি রাজি হননি। পরে ফাহিমাকে বশে আনতে ভিন্ন কৌশল নেন তিনি। ফাহিমার স্বামী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেন। ধীরে ধীরে তাদের বাসায় যাতায়াতও শুরু করেন তিনি। এর সূত্র ধরেই ফাহিমাকে নানা ধরনের প্রলোভন দেখান; দামি মোবাইল সেটসহ নানা ধরনের উপহার সামগ্রীও তাকে দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে সিরাজুলকে তালাক দিয়ে আক্তারের সঙ্গে সংসার গড়তে মনস্থির করেন ফাহিমা। কিন্তু কিছু দিন পরই আবার ফাহিমা আক্তারকে জানান, সন্তান রেখে অন্য জায়গায় সংসার গড়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন আক্তার বলেন, ‘তোমার সন্তানদের বিষয় আমি দেখছি।’ এর কয়েক দিন পর আক্তার ও ফাহিমা একত্র হয়ে পরিকল্পনা করে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে সন্তানদের হত্যা করা হবে। গত বছরের ১৮ অক্টোবর আক্তার সিরাজুলের বাড়িতে যান। ছক অনুযায়ী ফাহিমাকে পাশের দোকান থেকে দুটির লিচুর জুস আনতে পাঠান। আক্তার লিচুর জুসের সঙ্গে বিশ মেশান। এরপর ফাহিমা তার তিন সন্তানকে ডেকে এনে বিষমিশ্রিত জুস খাইয়ে দেন। এর কিছু সময় পরই ছোট্ট তিন শিশু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্বজনরা তাদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছয় বছরের সাথীকে মৃত ঘোষণা করেন। সাথীর অন্য দুই ভাইকে সিলেটের এমজি ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসার পর শিশু তোফাজ্জল ও রবিউল সুস্থ হয়ে ওঠে।
জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিন সন্তান হত্যার ছক
আদালতে এক মায়ের জবানবন্দি