জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেল গেট এলাকায় একটি যাত্রিবাহী বাস ও ট্রেনের সংঘর্ষে শনিবার সকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও আহত ৩ জন হয়েছেন।
ঘটনা ও জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিস অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা (বগুড়া জ-১১-০০০৮) বাধন পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহি বাস হিলিতে যাওয়ার সময় পুরানাপৈল রেলগেটের গেটম্যান গেট না ফেলার কারণে রেলক্রসিং করতেই পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ১ হাজার মিটার দূরে ছিচরে নিয়ে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনটি লাইনচূত হয়।
এসময় বাসে থাকা ১০ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত ও ৫ জন আহত হলে ঘটনার খবর পেয়ে জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের সদস্যরা হতাহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠালে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে স্থানান্তরের সময় পথিমধ্যে আরো দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন-বাস চালক সদর উপজেলার হারাইল গ্রামের মামুনুর রশিদ, হিচমী গ্রামের মানিকের ছেলে রমজান, পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের সরোয়ার হোসেন, আরিফুর রহমান রাব্বি, আক্কেলপুর উপজেলার চক বিলা গ্রামের দুদু কাজীর ছেলে সাজু মিয়া, জয়পুরহাট সদর উপজেলাধীন দোগাছীঁর আব্দুল লতিফ, দেবীশ্বরের বাবুল ফকির, শহরের চিত্রাপাড়ার রেজাউল, ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলার শ্রীঃ সুমন বাঁশফোর, ও নওগাঁর রানী নগর উপজেলার বিজয়কান্দি গ্রামের বাবু প্রমুখ।
আহতরা হলেন-পাঁচবিবি উপজেলার ফারুখ হোসেন, একই উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জিয়া, টাঙ্গাইলের মাটিকাটা গ্রামের শুকুর আলীর জুলহাস।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আঃ রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অভিযান চালিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতাল প্রেরণ করেছে।
জয়পুরহাট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আহতদের অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: সরদার রাশেদ জানান, ১০ জনের লাশ মর্গে আছে, আহত ৫ জনকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করার পথে ২ জনের মৃত্যু হয়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায় জানান, ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং নিহতদের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জয়পুরহাট পৌঁর মেয়র সার্বিক সহযোগীতা করছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অত্র এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাসান আলী জানান, ভোরবেলা ইট ভাটায় কাজ করতে যাওয়ার সময় দেখে উক্ত রেলক্রর্সিয়ের গেট না ফেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অত্র রেলগেটের পাশে বসবাসকারি বাসিন্দা আম্বিয়া জানান, ঘুম থেকে উঠেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বিকট শব্দ পেয়ে বাহিরে এসে দেখতে পায় বেশ কয়েটি লাশ ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় পরে আছে এবং রেলক্রর্সিয়ের গেট না ফেলায় দূর্ঘটনাটি ঘটেছে।
দুর্ঘটনার কবলে পরা উক্ত বাসের হেলপার রাসেল জানান, প্রচন্ড কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না এবং রেলগেটের গেটম্যান গেট না ফেলার কারনে রেলক্রসিং করতেই ট্রেন বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে সে সিটকে পরে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও বাসের চালকসহ ১০ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
উল্লেখ্য, উক্ত ভয়াবহ দুর্ঘটনার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর উত্তরাঞ্চলের সকল ট্রেন যোগাযোগ চালু হয়েছে।
আমারসংবাদ/এআই