আস-সালামু-আলায়কুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতুহু!
একবার ভেবে দেখবেন কি, দুনিয়াতে কোন ধরনের মানুষকে প্রতারিত করা সবচেয়ে সহজ?
অনেকেই আছেন যারা চাকরীর প্রত্যাশায়, অথবা প্রথমবারের মত প্রবাসে পাড়ি জমানোর প্রত্যাশায়, কিংবা জমিজমা কিনতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু হারিয়েছেন। এবার যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, “এই মানুষগুলোকে প্রতারিত করা এত সহজ কেন?” – তাহলে কি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে আপনার কষ্ট হবে?
আমার বিশ্বাস আপনি সঠিক অনুমান করতে পেরেছেন। অজ্ঞতা! জ্বী, অজ্ঞতাই হচ্ছে মানুষের প্রতারিত হবার মূল কারন। যে বিষয়ে যার জ্ঞান থাকে না, তাকে সে বিষয়ে প্রতারিত করা অনেক সহজ। সুতরাং জীবনে যদি কখনো প্রতারিত হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে, তার পিছনে একটাই কারন ছিল – আপনার অজ্ঞতা।
ভাবছেন, “আমিতো শিক্ষিত মানুষ, আমাকে কে প্রতারিত করবে?”
কোন সন্দেহ নেই, আপনি হয়তোবা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত সমাজে প্রতিষ্ঠিত কোন এক ব্যক্তিত্ব।
আমি আপনার শিক্ষাগত বা পেশাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষন করছি না। আপনি নিশ্চয়ই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী একজন মানুষ। আপনি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকলে, আপনাকে প্রকৌশল বিদ্যায় কেউ প্রতারিত করতে পারবে না। আপনি সুদক্ষ ডাক্তার হয়ে থাকলে, আপনাকে কেউ চিকিৎসা বিদ্যায় প্রতারিত করতে পারবে না। আপনি আইন পেশায় সুকৌশলী হয়ে থাকলে, আইনের ধারা প্রয়োগেও আপনাকে কেউ প্রতারিত করতে পারবে না। এইভাবে পার্থিব জীবনের অতি প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন না কোন বিষয়ে আপনি দক্ষতা রাখেন, সে বিশ্বাস আমার আছে।
শুধু একবার ভেবে দেখুন – আপনার অজ্ঞতাটুকু কোন বিষয়ে?
আচ্ছা বলুনতো শেষ কবে কুরআনের কোন একটি আয়াতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন? আয়াতটা কখন নাযিল হয়েছিলো, কেন নাযিল হয়েছিলো, আল্লাহ’র রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তার অনুসারীগণ কিভাবে সেই আয়াতটাকে তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করেছিলেন…ইত্যাদি নানা প্রশ্নের জবাব অন্বেষণে, শেষ কবে আপনি সময় দিয়েছিলেন?
মুসলিম হিসাবে জন্ম নিয়েও দ্বীন ইসলাম বিষয়ে আমাদের কয়জনের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আছে? আমরা কি আমাদের দ্বীনকে, আমাদের জীবন ব্যবস্থাকে জানার শতভাগ প্রচেষ্টা চালিয়েছি? যদি করে থাকি, আলহাম্দুলিল্লাহ! কিন্তু যদি সেই প্রচেষ্টা না করে থাকি এবং কেউ যদি আমার-আপনার অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে প্রতারিত করে, তাহলে কি আমি-আপনি সেই প্রতারকচক্রকে আখেরাতে দায়ী করতে পারবো?
যে জীবনের নিশ্চিত অন্ত আছে, সে ক্ষনস্থায়ী জীবনে সফলতার জন্য নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে করতেই জীবন কাটিয়ে দিলাম। অথচ যে জীবন অন্তবিহীন, সেই জীবনের জন্য কোন জ্ঞান অর্জন করা হলো না। আর এই অজ্ঞতার সুযোগেই আমাকে-আপনাকে সর্বস্বান্ত করে ছাড়ছে প্রতারকগোষ্ঠী।
বালেগ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানী জীবন যাপনের জন্য যতটুকু জ্ঞান অর্জন করা দরকার, ন্যূনতম ততটুকু জ্ঞান অর্জন করা আমার-আপনার জন্য ফরজ। ততটুকু জ্ঞান অর্জন না করলে, দুনিয়াতে দ্বীনের বিষয়ে প্রতারিত হলে, আখেরাতে আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তা’আলা- যখন প্রশ্ন করবেন,
أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ
আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় তা চিন্তা করতে পারতে? [সুরা ফাতির ৩৫, আয়াত ৩৭]
তখন সেই প্রশ্নের কি জবাব দেবেন?
তাই আসু্ন, আরো বেশী প্রতারিত হবার আগেই, আল্লাহ্ রাব্বীল-’আলামীন প্রদত্ত হায়াত এবং হিক্মা ব্যবহার করে, দুনিয়া এবং আখেরাতে সফলতার জন্য সঠিক প্রজ্ঞা অর্জনের জন্য একটু সময় ব্যয় করি।