নাইজেরিয়ার বিক্ষোভকারীরা পুলিশী বর্বরতার শিকার ব্যক্তিদের বিচার এবং
নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনার জন্য তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ তাত্ক্ষণিকভাবে একটি বিতর্কিত দালালবিরোধী ইউনিট
বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। যেটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক মানবাধিকার
লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
দক্ষিণ নাইজেরিয়ার একজন অফিসার কর্তৃক এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ
উঠেছিল। এর জের ধরে এই সপ্তাহে কয়েক হাজার মানুষ পুলিশের এই বর্বরতার
বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেশজুড়ে রাস্তায় নেমেছিল। তারা বিশেষ দালালবিরোধী
স্কোয়াড (এসএআরএস) সম্পূর্ণ বিলোপ করার দাবি জানিয়েছে। এই ইউনিটের
সদস্যদের দ্বারা চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিখোঁজ হওয়া এমনকি হত্যার অভিযোগ তুলে
অনেকেই অনলাইনে #এন্ডসার্স হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকদিনের বিক্ষোভের পর, রবিবার পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আদামু এক
বিবৃতিতে বলেছিলেন, ”নাইজেরিয়ান জনগণের আকাঙ্ক্ষার জবাবে সার্স বিলুপ্ত ঘোষণা
করা হল।”
তিনি আরও বলেন, “তবে সমস্ত এসএআরএস অফিসারকে অন্য পুলিশ ইউনিটে
পুনর্বাসিত করা হবে।”
“সন্দেহযুক্ত”
সিভিল সোসাইটি লেজিসলেটিভ অ্যাডভোকেসি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক আউয়াল
মুসা রাফসানজানি ইউনিটটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে
বলেছিলেন যে, এই ঘোষণাটি “নাইজেরিয়ানদের প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়ে গেছে”।
তিনি আল জাজিরাকে বলেছিলেন, “নাইজেরিয়ানরা ওইসকল কর্মকর্তাদের জবাবদিহি
করাতে চায়, যারা খুন করেছে এবং নাইজেরিয়াকে বর্বর করেছে। যারা এই কাজগুলি
করেছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে শুধুমাত্র ইউনিটটি ভেঙে দেওয়ার
অর্থ এই যে, তারা যখন অন্য ইউনিটে স্থানান্তরিত হয়, তারা একই নৃশংসতার
প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে।”
অফিসারদের পুনর্বাসনের বিষয়টি “সন্দেহযুক্ত” হিসাবে বর্ণনা করে আবুজাভিত্তিক
আইনজীবী আবদুল মাহমুদ বলেছেন, যা দরকার ছিল তা হল “আমূল” পরিবর্তন।
”আমাদের পুলিশ আধিকারিকদের মানসিকতা আইনের বাইরে কাজ করার সাথে
সম্পর্কিত। আমরা নাগরিকদের অধিকারের আদায়ের দাবি অব্যাহত রাখব।”- তিনি আল
জাজিরাকে বলেছিলেন।
“পুলিশকে নিজেকেই সংবিধানবাদে ফিরে আসতে হবে। এর আধিকারিকদের প্রশিক্ষণের
পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ত্রুটিযুক্ত কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলার বিষয়টি স্বচ্ছতার সাথে
পরিচালিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দশ বছর যাবত এরকম
পরিস্থিতির শিকার হচ্ছি।”– বলেন মাহমুদ ।
পুলিশ প্রধানের ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরেও প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তারের খবর
পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, আবুজার বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ অফিসাররা
ওয়াটার কামান দিয়ে জোরপূর্বক বিতাড়িত করেছিলেন।
“তারা একরকম কথা বলছে কিন্তু ভিন্নরকম ঘটনা রাস্তায় ঘটছে। আমরা বিশ্বাস করি
না যে সেগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।”- রাজধানীতে বিক্ষোভকারী চিওমা আগুয়েগ্বো আল
জাজিরাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ”আপনি সার্স ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আবার অন্যদিকে আবুজার
রাস্তায় আমার ভাই ও বোনদের টিয়ার-গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। এটি অত্যন্ত বেমানান।
লোকজন আহত হচ্ছে। মহিলাদের মারধর করা হচ্ছে। সার্স বিলুপ্তির ঘোষণার সাথে
এইসব ঘটনা অত্যন্ত সাংঘর্ষিক।”
যতক্ষণ না বিবৃতিকে অতিক্রম করে এমন কোনও পরিবর্তন না দেখা যায়
বিক্ষোভকারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে অবহিত করেন তিনি।
চিওমা আরো বলেন, ”আমরা নিহত প্রত্যেকের জন্য ন্যায় বিচার দেখতে চাই। এই
অফিসাররা কারা? তাদের বিচার করুন।”
আদামু তার বিবৃতিতে বলেন, নাইজেরিয়ার পুলিশ বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
তদন্ত করার জন্য মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজ সংস্থার সাথে এক হয়ে
কাজ করবে।
তিনি আরো বলেনম, ”সার্স বিলুপ্ত হওয়ার ফলে অপেক্ষিত পুলিশিং ব্যবধানগুলিকে
রোধ করে নতুন পুলিশ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। যা বিবর্তিত হয়েছে এবং যথাযথভাবে
ঘোষণা করা হবে।”
এখন আমাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রয়েছে
এই ঘোষণাটি তাত্ক্ষণিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়ার ঝড় তৈরি করেছিল।
“সার্স-এর নিষিদ্ধকরণ সঠিক পথের একটি সাফল্য। যদিও এটি প্রথমবারের মতো
হবে না। তবে, আমরা নাইজেরিয়ানরা এবং নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যকার পারস্পরিক
আস্থার ভিত্তিতে বিশ্বাস করি যে, আইন প্রয়োগের এমন একটি অনিয়মিত ইউনিটের
সমাপ্তি হবে।“- সিনেটর বেন মারে-ব্রুস টুইটারে বলেন।
আফ্রোবিট তারকা উইজকিড বলেন, এটি কেবল শুরুমাত্র।
“এখন তারা জানে যে, আমাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রয়েছে এবং আমরা যুবকরা
আমাদের শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি। আমরা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা /
পুলিশ বর্বরতা এবং তথাকথিত সুশাসন নিয়ে কথা বলতে থাকব।”