ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয়ে চাঁদা দাবি ও গাড়িতে নকল বোমা রেখে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত কিশোরের নাম ইমান হোসেন। বুধবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনা সম্পর্কে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, গত ১১ জানুয়ারি বিকালে ভারতীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসীর পরিচয়ে বাংলাদেশি সহযোগীর মাধ্যমে ঢাকার গুলশান এলাকার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন ঢালির পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়া হলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরের দিন ব্যবসায়ী ঢালি প্রাইভেটকার পার্কিং করা গাড়ির নিচে বোমা সদৃশ বস্তুর উপস্থিতি দেখতে পান। বিষয়টি তিনি পুলিশকে অবহিত করেন। এরপর বাড্ডা থানার পুলিশ সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল টিমকে জানায়। সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বোমা সদৃশ বস্তুটি অপসারণ এবং ধ্বংস করে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বোমা সদৃশ বস্তুটি একটি অকার্যকর বোমা। তবে এ অবস্থায় ঢালি পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হয়ে পড়েন। এমনকি বাসা থেকে বাহিরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় পর ব্যবসায়ী ঢালি বাড্ডা থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত ন্যস্ত হয় ডিবিতে।

ডিবির প্রেস ব্রিফিং। ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, ব্যাপক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শেষে ঘটনার মূল হোতা ইমান হোসেনকে (১৭) মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার হলদিয়া গ্রাম থেকে বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়।
উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমান হোসেন জানায়, তার বাবা শহিদ বিশ্বাস ব্যবসায়ী মো. গিয়াস উদ্দিন ঢালির মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকার। সে (ইমান) এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর একটি কাপড়ের দোকানে চার হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের কাজ নেয়। কিন্তু বেতন কম হওয়ায় সে ওই দোকান থেকে পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য ঢালি পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে ঘটনার দুই মাস আগে থেকে। হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয় হুমকি ধামকি দেওয়ার কৌশল আয়ত্ত করে।
অপরদিকে হিন্দি সিনেমা দেখার অভ্যাস থাকায় হিন্দি ভাষায় কথা বলা শিখে ফেলে। লাল স্কচটেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেন্সিল ব্যাটারি ও আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে বোমা সদৃশ বস্তুটি বানিয়ে রাখে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ঢালি তার প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা থেকে লৌহজংয়ে তার এক আত্মীয়ের জানাজায় যোগদান করতে যান। ইমান হোসেন তখন সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ী ঢালির প্রাইভেটকারের নিচে স্কচটেপ দিয়ে বোমা সদৃশ বস্তুটি আটকে দেয়। পরবর্তীতে হিন্দি ভাষায় হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য সে কৌশলে তার বোনের বান্ধবীর একটি অব্যবহৃত সিম চুরি করে এবং তার বন্ধুর একটি অব্যবহৃত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ভয় দেখানোর জন্য সে একটি ভুয়া ও ছদ্মনামের ইমু আইডি থেকে ঢালি পরিবারের সদস্যদের ছবি ঢালি সাহেবের ইমু একাউন্টে পাঠায়। হুমকি দেওয়ার পর ব্যবহৃত সিমটি সে পুড়িয়ে ফেলে। তবে চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত ফোনটি তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইত্তেফাক/জেডএইচ