সালাফিজমের আগ্রাসন কেন রূখতে হবে!
ভারতের কোন কোন প্রদেশের হিন্দুদের কাজিনদের বিবাহ করা যায় না, কোন কোন প্রদেশে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ, কোন কোন প্রদেশে একাধিক পুরুষের একজন স্ত্রী ৷ কোন কোন প্রদেশের লোক মাছ খায় না, কোন কোন প্রদেশে খাসি খায় না, কোন প্রদেশে গরু, আবার কোন দিন মুরগী খায় না ৷ কেউ দূর্গা, কেউ কালী, কেউ লক্ষ্মী, কেউ স্বরস্বতী, কেউ শিব, কেউ গণেশের পূজা মহা ধুমধামের সাথে করে থাকে ৷ এগুলো যার যার এলাকার সংস্কৃতি ৷
মুসলমানদের বিষয়গুলো এমন নয় ৷ আরবের মুসলমানদের জন্য বিবাহ আইন যা, অনারবদের জন্যও তা ৷ আরবদের জন্য যা হালাল, অনারবদের জন্যও তাই হালাল ৷ আরবরা যে আল্লাহর ইবাদত করে, অনারবরাও সেই আল্লাহর ইবাদত করে ৷ অর্থাৎ সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একই আইন ৷ সব মুসলমানের জন্য একই বিধান হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মাঝে বিভিন্ন প্রকার সংস্কৃতি চালু আছে ৷ যার কারণে একেক অঞ্চলের মুসলমানদের স্বভাব একেক রকম ৷
আরবের এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব, আমিরাত, ওমান, বাহরাইনের খাবার সবাই খেতে পারলেও; আফ্রিকা অঞ্চলের মিশর, লিবিয়া, সুদানের খাবার অনেকের রুচিতে বাধবে ৷ আবার আরবের লোকেরা আমাদের খাবার খেতে চাইবে না ৷ এমন না যে ওদের খাবার হালাল, আমাদেরটা হারাম; বা আমাদেরটা হালাল, ওদেরটা হারাম ৷ ব্যবধানটা হচ্ছে রন্ধন প্রণালীতে ৷
রন্ধন প্রণালীর মত রাঁধুনীদের সাজ সজ্জাও ভিন্ন ৷ আরবের মেয়েরা আমাদের উপমহাদেশের মেয়েদের মত নাক, কান ফুটো করে না ৷ আফ্রিকা অঞ্চলের কিছু দেশে আবার মেয়েদের খতনা করানো হয় ৷ কিছু অঞ্চলে বিয়ের পর এ্যাসিড বা অন্য কোন পদ্ধতিতে স্থায়ী ভাবে মেয়েদের মুখে এক ধরনের বিশেষ চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয় ৷ যাতে সবাই বুঝতে পারে মেয়েটি বিবাহিত ৷ প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি রয়েছে ৷
বাঙালী মুসলমানদের সংস্কৃতি সাধারণত হিন্দু ও পারসিদের দ্বারা প্রভাবিত ৷ এসব সংস্কৃতির মাঝে যেগুলো ইসলামের বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় আলেম সমাজ সেগুলো নিষেধ করেন না ৷ যেমন হিন্দু নারীদের শাখা পরার দেখাদেখি মুসলিম নারীরা চুড়ি পরে, আলেমগণের এতে কোনো আপত্তি নেই ৷ কিন্তু তাদের সিঁদুর পরার অনুকরণে টিপ পরতে নিষেধ করেন ৷
ঈদ এ মিলাদুন্নবীতে জিলাপী, শবে বরাতে হালুয়া রুটি, সাতাশ রমজানে নির্দিষ্ট করে শবে ক্বদর পালন, কেউ মারা গেলে কুলখানির নামে চৌদ্দগোষ্ঠীর পিকনিকের আয়োজন এ জাতীয় অনেক অনুষ্ঠানই ছিলো বাঙালী মুসলমানদের সংস্কৃতি ৷ নেকী হাসিলের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক মুসলমানই এসব উৎসব পালন করতো ৷ কিন্তু সমস্যা করেছে সালাফিরা ৷ তারা প্রচার করতে লাগলো যে এসব বিদআত, এসবে কোন সওয়াব নেই ৷
দীর্ঘ দিন যাবত ধর্মের লেবাস পরিয়ে সমাজে যে সংস্কৃতি চলে আসছে সালাফিরা সেসবকে বাতিল ঘোষণা করেছে ৷ মনসুর হাল্লাজ, রাবেয়া বসরী, নসুয়া, কসাইয়ের সাথে মূসা (আঃ) এর বেহেশত বছরের পর বছর এজাতীয় মুখরোচক গল্প দিয়ে সাধারণ লোকদের প্রভাবিত করা গেলেও, সালাফি মতবাদের লোকদের কাছে এসব বক্তাদের এক পয়সাও মূল্য নেই ৷
ওয়াজ ব্যবসায়ীদের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চাওয়া রাজনীতিবিদরা ৷ ধর্মের যেমন তেমন ব্যাখ্যা প্রদান করে যুবকদের আকৃষ্ট করার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা সালাফিজম ৷ ইসলামকে জানতে বা বুঝতে গিয়ে যারা বিভিন্ন দলের জালে আটকা পড়েছিলো সালাফি মতবাদ তাদেরকে সেসব থেকে বের হতে সহযোগিতা করেছে ৷ সালাফি মতবাদের কাউকে আপনি কখনো রাজনীতির জন্য ব্যক্তি বা দেশের সম্পদকে নষ্ট করতে দেখবেন না ৷
মেহমান আসলে আরবের লোকেরা খেজুর, গাওয়া দিয়ে আপ্যায়ন করে ৷ আর আমরা চা, পান, জর্দা দিয়ে আপ্যায়ন করি ৷ ওখানে সালাফি কেউ থাকলে বলবে জর্দা খাওয়া হারাম ৷ এভাবেই তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা সংস্কৃতি ধ্বংস করে মানুষকে শিকড়বিহীন করে দিচ্ছে ৷ ব্যক্তি জীবনে নাচতে নাচতে ইসলাম পালনের আনন্দকে নিরানন্দ করে দিচ্ছে সালাফিজম ৷ সুতরাং নিজের খুশি মতো, নিজের দলের মতো ইসলাম পালন করতে হলে সালাফিজমকে অবশ্যই রূখতে হবে!
Sayedur Rahman