Thursday, October 3, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমকুরআন ও হাদীসআসুন, আজ কুরআনুল কারীমের একটি আয়াত শিখি।

আসুন, আজ কুরআনুল কারীমের একটি আয়াত শিখি।

তাফসীর “সূরা আল-ফাতিহা”

আয়াত নং০৩ ( مٰلِكِ یَوْمِ الدِّیْنِ )

অর্থ: যিনি প্রতিদান দিবসের মালিক।

( مٰلِكِ  ) একমাত্র মালিক, বাদশা,অধিপতি, কর্তৃত্বের অধিকারী।

(  یَوْمِ الدِّیْنِ ) এখানে বিচার দিবস বা হিসাব নিকাশের দিন অথবা প্রতিদান-প্রতিফল দিবস উদ্দেশ্য।

এখানে বলা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন বিচার দিবস বা প্রতিফল দিবসের যখন কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও হুকুমের অধিকারী।  যেইদিন প্রত্যেকটা ব্যক্তি তার সৎ কর্মের জন্য পুরস্কৃত হবে এবং অসৎকর্মের জন্য শাস্তির যোগ্য হবে। আর সেই দিন সবাইকে তার কর্মের বিনিময় দেওয়া হবে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন:-

وَّ اِنَّ الدِّیْنَ لَوَاقِعٌؕ

“বিনিময় প্রদানের সময় অবশ্যই আসবে”।  আয-যারিয়াত:৬,

হিসাবের দিন বা প্রতিদানের দিন প্রত্যেক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার গোলাম বা দাস হিসেবে তার নিকট উপস্থিত হবে।  সেদিন তিনি একমাত্র মালিক, তিনি একমাত্র হুকুমদাতা, একমাত্র তিনিই ঠিক করবেন কে জান্নাতে যাবে, কে জাহান্নামে যাবে। তিনি সবকিছুর ফায়সালা দিবেন। যেখানে কারো কোন ক্ষমতা চলবে না। কারো সুপারিশ চলবে না। কেউ কথাও বলতে পারবেনা তার অনুমতি ব্যতীত।

সে জন্য সূরা ইনফিতারে তাকিদ দিয়ে হিসেবের দিনটাকে দুই বার পুনরাবৃত্তি করেছেন, বলা হয়েছে-

وَ مَاۤ اَدْرٰىكَ مَا یَوْمُ الدِّیْنِۙ. ثُمَّ مَاۤ اَدْرٰىكَ مَا یَوْمُ الدِّیْنِؕ. یَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَیْــٴًـاؕ وَ الْاَمْرُ یَوْمَئِذٍ لِّلّٰهِ۠

“আর আপনি কি জানেন, কর্মফল দিনটি কি? অতএব আপনি কি জানেন, ঐ কর্মফল দিনটি কি? এটি হবে সেই দিন যেদিন কেউ কারো জন্য কিছু করতে পারবে না। সেদিন (ফায়সালার) নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে”। -ইনফিতার-(১৭-১৯)

یَوْمَ هُمْ بٰرِزُوْنَ ﳛ لَا یَخْفٰى عَلَى اللّٰهِ مِنْهُمْ شَیْءٌؕ لِمَنِ الْمُلْكُ الْیَوْمَؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

“মানুষ যেদিন (ক্ববর থেকে) বের হয়ে আসবে,আল্লাহ‌র কাছে তাদের কোন কথাই গোপন থাকবে না। (সেদিন ঘোষণা দিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে)। আজ রাজত্ব কার? (সমস্ত সৃষ্টি বলে উঠবে) এক ও একক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর”। আল-মু’মিন:১৬,

আর প্রতিদানের ক্ষেত্রে কাউকে উপযুক্ত প্রতিদান না দিয়ে কম দেওয়া, উপযুক্ত শাস্তির চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া, প্রাপ্য পুরস্কার এর চেয়ে কম পুরস্কার দেওয়া, জালিম বা অত্যাচারীকে ক্ষমা করে দেওয়া, একজনের অপরাধ আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেওয়া,আল্লাহর আদালতে এই ধরনের কোনো অনিয়ম হবে না। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন:-

یَوۡمَئِذٍ یُّوَفِّیۡہِمُ اللّٰہُ دِیۡنَہُمُ الۡحَقَّ وَ یَعۡلَمُوۡنَ اَنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡحَقُّ الۡمُبِیۡنُ

“সেদিন আল্লাহ তাদেরকে তাদের ন্যায্য প্রতিদান পূর্ণরূপে দিয়ে দেবেন, আর তারা জানবে যে আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক”। -আন্-নূর:২৫

এবং তিনি আরো বলেন;-

اَلْیَوْمَ تُجْزٰى كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْؕ لَا ظُلْمَ الْیَوْمَؕ اِنَّ اللّٰهَ سَرِیْعُ الْحِسَابِ

“এদিন প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফল দেয়া হবে; কারও প্রতি যুলম করা হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাবগ্রহণকারী”। -আল-মু’মিন:১৭,

শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:

আলোচ্য আয়াতটি এমন একটি আয়াত যা পারে প্রত্যেকটা মানুষের কর্মের মানদণ্ড ঠিক করে দিতে। এবং পৃথিবীর সমস্ত জুলুম-অত্যাচার ও অনিয়মের লাগামকে টেনে ধরতে।

কারণ এ আয়াতে পরকালের চেতনা লালন করতে বলা হয়েছে। যার ভিতরে এই চেতনা থাকবে যে, তার প্রত্যেকটা কর্মের জন্য হয় সে পুরস্কৃত হবে নতুবা তিরস্কৃত হবে। সে তার প্রত্যেকটা কর্ম আখেরাতের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সম্পাদন করবে।

একজন মানুষ যখন দৃড় ভাবে বিশ্বাস করে তার প্রত্যেকটা ইবাদত, দান-সদকা, নেক আমল সব গুলোর বিনিময় সে বিচারের দিন পরিপূর্ণরূপে পাবে তাহলে তার ইবাদত, দান-সদকা ও সৎ আমলের মধ্যে কোন প্রকার রিয়া প্রবেশ করতে পারবেনা। এখলাসের পূর্ণ উপস্থিত থাকবে। সে কারো উপর জুলুম করবে না, অন্যায় করবে না, দুর্নীতি করবেনা, সুদ-ঘুষ, মিথ্যা, প্রতারণা, ধোকা এসবের আশ্রয় নিবে না। কারণ সে বিশ্বাস করে এই সমস্ত কৃতকর্মের জন্য বিচারের দিন তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

পক্ষান্তরে যার এই চেতনা থাকবে না, যে বিচারদিবসকে বা প্রতিদান কে বিশ্বাস করে না, সে লাগামহীন চরিত্রের অধিকারী হবে। কারো উপর জুলুম করতে,অন্যের হক নষ্ট করতে, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যা, প্রতারণা, ধোকাসহ যেকোনো ধরনের- অন্যায় অপরাধ কর্মে লিপ্ত হতে তার বিবেক তাকে বাধা দিবেনা।  যেমনটা সূরা মাউনে প্রতিদান দিবস অস্বীকার কারীর চরিত্রের কথা বলা হয়েছে-

اَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ یُکَذِّبُ بِالدِّیۡنِ ؕ. فَذٰلِکَ الَّذِیۡ یَدُعُّ الۡیَتِیۡمَ. وَ لَا یَحُضُّ عَلٰی طَعَامِ الۡمِسۡکِیۡنِ ؕ

“তুমি কি তাকে দেখেছ, যে প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে, (তার চরিত্র) সে-ই ইয়াতীমকে কঠোরভাবে তাড়িয়ে দেয়,(তার উপর জুলুম করে, হক্ব নষ্ট করে,তার সম্পদ লুন্ঠন করে) আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না”

فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ. الَّذِیۡنَ ہُمۡ یُرَآءُوۡنَ. وَ یَمۡنَعُوۡنَ الۡمَاعُوۡنَ .

সুতরাং পরিতাপ সেই (প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার কারী) সালাত আদায়কারীদের জন্য। যারা লোক দেখানোর জন্য তা (সালাত,দান-সদকা সহ অন্যান ইবাদত) করে,এবং (প্রতিবেশীকে) গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছোট খাট সাহায্য দানে বিরত থাকে।

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত বিচার দিবস তথা পরকালের চেতনা অন্তঃকরণে বদ্ধমূল করা। দুনিয়ার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এবং প্রত্যেকটা কর্ম সেই চেতনার ভিত্তিতে সম্পাদন করা। যাতে আমরা আল্লাহর নিকট সেদিন  উপযুক্ত বিনিময় অর্জন করতে পারি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

13 + twenty =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য