- আজকের চাইতে দুইশত বছর আগেও কাপড় সবচেয়ে দামি বস্তু ছিল।
- অষ্টাদশ শতাব্দীর ভারতীয় মুসলমানেরা এক টুকরো ধূতি পেলেই নিজেদের ভাগ্যবান ভাবত।
- যে কাপড় বেশী ধোওয়া বা ধূতে পারা যায়, তাকেই ধূতি বলা হত।
- বাংলার আপামর সকল মুসলমানেরাই ধূতি পড়ত, ধূতি সেলাই বিহীন দেখতে শাড়ির মত লম্বা।
- মুসলমানেরা লুঙ্গীর মত গোল করে, হিন্দুরা প্যান্টের মত দু’পায়ে পেঁচিয়ে ধূতি ব্যবহার করত।
- মুসলমানেরা হজ্বে গিয়ে, ইয়েমেনীদের লুঙ্গি পড়া দেখে, সেটাকেই বেশী পছন্দ করে।
- কম কাপড় ও দুই পাশে সেলাই সুবিধার কারণে, পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষ এটাকে বেছে নেয়।
- যার নিকট একটি সালোয়ার ও একটি পায়জামা থাকত সে ধনী হিসেবে বিবেচিত হত।
- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যুগে কাপড় আরো বেশী দামী ছিল।
- আরবদেশে কাপড় তৈরি হতনা, এসব বিদেশ থেকেই আমদানি করতে হত।
- যার কারণে সমগ্র আরবে কাপড়ের দাম ছিল আকাশ চুম্বী।
- অধিক মূলধন বিনিয়োগ ও বেশী লাভজনক ব্যবসায়ের মধ্যে কাপড় ও অস্ত্র ছিল অন্যতম।
- তখনও বাংলা অঞ্চল ছিল প্রাচুর্য ময়; পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কাপড় বাংলা মুল্লুকে তৈরি হত।
- তদানীন্তন আরবের সবার কাছে, একটি পরিপূর্ণ কোর্তা পরিধানের ভাগ্য ছিল না!
- ওমর (রা) আধা দুনিয়ার শাসন কর্তা, তিনি একদিন একটি পরিপূর্ণ কোর্তা গায়ে দিয়ে মসজিদে আসলেন।
- বক্তব্য দিতে উঠতে যাবেন, এমনি সময় এক সঙ্গী প্রশ্ন করলেন, আগে কথার উত্তর দিন, তারপর না হয় বক্তব্য রাখবেন।
- আমরা আজো কেউ একটি পূর্ণ কোর্তার মালীক হতে পারি নি, আপনি ক্ষমতার জোড়ে কি এটার মালীক বনেছেন?
- ওমরের (রা) ছেলে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল; না! আমার ভাগের কাপড় বাবাকে দিয়েছি; সেটা যোগ করেই তিনি কোর্তা বানিয়েছেন।
- ওমর (রা) অর্থের টানাটানির কারণে প্রিয় পুত্রকে ঈদের বাজারে একটি জামার কাপড় কিনে দিতে পারেননি।
- কেননা কাপড় যেমনি ছিল দুষ্প্রাপ্য তেমনি ছিল দামী; এমনকি এক মাসের অর্থ দিয়েও একটি জামা কেনা যেত না!
- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের অবস্থা ছিল আরো সঙ্গিন।
- তাঁদের অনেকেরই এমন কাপড় ছিল না যা দ্বারা শরীরের উপর-নীচ দুটো এক সাথে ঢাকা যেত।
- কেউ কাপড়কে গলায় লটকিয়ে রাখত, কেউ বুকে বেঁধে রাখত।
- নিজেদের ব্যবহৃত কাপড় দিয়েই মানুষকে দাফন দেওয়া হত, পূর্ণ দেহ ঢাকতে সেটাও যথেষ্ট হত না।
- এ ধরনের সংক্ষিপ্ত কাপড়ের ভাগ্য নিয়ে রাসুল (সা) এর সাথে সাহাবিরা নামাজ পড়তেন।
- সে জমানায় সবচেয়ে দামী উপহার ছিল এক টুকরো কাপড়।
- রাজা বাদশাহরা সম্মান স্বরূপ অন্য বাদশাহকে কাপড় উপহার দিতেন।
- বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা তিনটি মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জনপদে ঘুরেছেন।
- তিনি লিখেছেন, ডাকাতেরা কাপড় লুণ্ঠনের জন্যই পথে হানা দিত।
- একদা বতুতা ইরাক থেকে ভারতের পথে হাজার হাজার ঘোড়া, ভেড়া, উটের কাফেলায় শত শত মানুষের সাথে চলছিল।
- পথিমধ্যে ডাকাত হানা দেয়, কাফেলার সকল মানুষকে উলঙ্গ করেই ব্যবহার্য কাপড় ছিনিয়ে নেয়।
- এত মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমায় এবং তারা ইবাদত বন্ধ করেনি।
- এই দৃশ্য তদানীন্তন সমাজে কোন বড় অঘটন ছিলনা; যেখানে কাপড়ের জন্য মানুষ খুন হত।
- আজকে কাপড় সহজ লভ্য কিন্তু কাপড় নিয়ে আমরা করি অহংকার নতুবা পাপাচার।
- স্কুল জীবনে হাফ শার্ট পড়ে এক বড় মাদ্রাসার মসজিদে ঢুকেছিলাম নামাজ পড়তে।
- সামনে কাতারগুলো থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়, অন্যদের নামাজ না হবার অজুহাতে।
- বড় হয়ে বুঝেছিলাম এসব ছিল অজ্ঞানতা-মূর্খতার নামান্তর।
- ইসলামের নামে আফগানীরা বিরাট পাগড়ি বাঁধে; কোনটায় ২০ গজের মত কাপড়!
- ৫, ১০, ১৫ গজের পাগড়ী নিয়ে কত মারামারি খুনোখুনি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
- জুব্বা হয়েছে ইসলামের পোশাক! আর প্যান্ট-শার্ট ওয়ালারা হয়ে যায় ফাসিক -ফাজির।
- ভারতীয় পাঞ্জাবের শিখ অধিবাসীদের, পাঞ্জাবীকে আমরা আজো ইসলামী পোশাক মনে করি।
- ঈদ-রমজান, বিয়ে-শাদী সবই তো সবই এখন পাঞ্জাবীর দখলে।
- কিন্তু আমরা ভাবী না এটা আমাদের কাছে এলো কিভাবে?
- কাপড়ের অপচয়ে আজ সভ্যতা বিপর্যস্ত।
- একজন মানুষের শত শত জোড়া কাপড়, আলমারি ওজনে কেঁদে উঠে।
- কেউ লজ্জা-স্থানকে দর্শক নন্দিত করতে, কাপড়কে করছে সংকুচিত।
- কেউ নিজের স্ত্রী-কন্যার লজ্জা ঢাকতে ভিখ মাগতে লাইনে দাড়ায়।
- বখাটে, তরুনীর ফাটা কাপড়ের ফাঁকে শরীরের ভাঁজগুলো স্ক্যান করে।
- শীতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার থর থর কম্পনেও কারো জুঠে না এক টুকরো কাপড়।
- আবার জাকাতের কাপড়ের আশায় পদদলিত হয়ে মারা যায় হাজারো বনী আদম।
- কখনও প্যান্ট-শার্ট পড়ার অপরাধে দ্বীনি দায়ীকেও বানিয়ে দেই কাফির।
- ইনার পাঞ্জাবী, ওনার ফতুয়া, তিনার লুঙ্গি কোনটাই রাসুলের সাহাবীরা পায় নাই।
- কিন্তু আমরা অন্ধের মত এক ভাই আঘাত হানছি অন্য ভাইয়ের গর্দানে।
- কেউ আমারে মোনাফেক বানালো তো, আমি তারে বানিয়েছি কাফের।
(collected)
Golden Jamalpur